Tuesday, May 21, 2024

মিমেটিক ডিজ়ায়ার

রেনে জিরার্দের কথা লিখি একটু আজকে। ওঁর মিমেটিক ডিজায়ারের তত্ত্ব। ব্যাপারটা এইরকম যে মানুষ কোনো কিছুই যখন "চায়", তখন সেই চাওয়ার মূল কারণ ঐ অভীষ্ট বস্তুটির অন্তর্নিহিত বা ইন্ট্রিনজ়িক ভ্যালু নয়, চাওয়ার মূল কারণ এই যে অন্য লোককেও সে দেখে ঐ এক-ই জিনিষ চাইতে।

"Man is the creature who does not know what to desire, and he turns to others in order to make up his mind. We desire what others desire because we imitate their desires."
এই যেমন আমরা বাড়ি-গাড়ি-শাড়ি-স্মার্টফোন-ফ্যান্সি ভেকেশন, বা এই রক্তজল করা বালের চাকুরি যাই-ই চাই, সবের-ই মূল কারণ ঐ মিমেটিক ডিজ়ায়ার। জিরার্দের বক্তব্য "all desire is merely an imitation of another's desire!"
এই মিমেটিক ডিজ়ায়ারের ফল - দ্বন্দ্ব - দুজন মানুষ (বা দুই দেশ বা দুই দল) হয়তো এক-ই জিনিষ (বা ভূখণ্ড বা লক্ষ্য) চাইছে। এই ত্রিকোণের তিনটি অংশ - সাবজেক্ট - যে নকল করছে, মডেল - যার নকল করছে আর অবজেক্ট - অভীষ্ট।
কিন্তু দুজনে যদি শেয়ার না করতে পারে, যেমনটা প্রায় সবসময়েই হয়, তাহলে অবশ্যম্ভাবী ফল সেই নিয়ে সংঘাত। আর সংঘাতের পরের স্টেজ "স্কেপগোট" খোঁজ়া। কারণ সংঘাত তো আর চিরদিন চলতে পারে না। অতএব, শান্তি চাই, আর এই পরিস্থিতিতে শান্তির পথ দুই বিবাদী ঐকমত্য হয়ে একটি বলির পাঁঠা খুঁজে বের করা, এবং তাদের/তাকে শাস্তি দেওয়া।
এই যেমন ব্ল্যাক ডেথের দায় গিয়ে পড়ে উইচদের উপর, ইস্টবেঙ্গল হেরে গেলে জানা যায় রেফারি বাজে, প্রতিবেশী রাষ্ট্র ক্রিকেটে হেরে গেলে বলে আইসিসি চোর, জার্মান মানুষের আর্থিক অবস্থা পতনোন্মুখ মনে হলে দায়ী হন ইহুদিরা। রামায়ণের গল্পে যেমন স্কেপগোট হন শুদ্র শম্বুক। আর আধুনিক ইতিহাস দেখলে, যেখানে যা খারাপ হচ্ছে - দুম করে দেগে দেওয়া হয়, আসলে তো সংখ্যালঘুর দোষ - আমেরিকায় বলা হয় ইমিগ্রান্ট চাকরি খেয়ে নিচ্ছে, আমাদের দেশে দোষ চাপানো হয় মুসলিম জনসম্প্রদায়ের উপর। আসলে এগুলো ঢপের চপ। কিন্তু এই সময়টাই পোস্ট-ট্রুথের।
এখন এই কথাগুলো কেন লিখছি? কারণ প্রধানমন্ত্রীর একের পর এক ভাষণে সমানে এই স্কেপগোটিং করে চলেছেন ভোটের শুরু থেকে। ওদের দরকার পড়ছে - কারণ স্কেপগোটিং-এর আদর্শ সময় তো এইই, যখন সত্যিকারের ইস্যু নিয়ে মানুষ ক্ষুব্ধ - এবং তারা সেসবের পেছনে সত্যি কারণ-ও নিজেরাই খুঁজে পাচ্ছেন বা পেয়ে গেছেন। মানুষের "লয়ালটি-ফ্যাটিগ" এসে গেছে গত দশ বছরে - চাকরি না পেলে আর কিসের কি?
সেই পরিস্থিতিতে অ্যান্টি-ইনকাম্বেন্ট সেন্টিমেন্টের হাওয়ার ডুবে যাওয়ার আগে হাওয়া ঘোরানোর মরিয়া চেষ্টা ঐ স্কেপ-গোটিং। একটি আর্টিকল থেকে নিচের অংশটি টুকলাম।
"Politicians have always tried to divert the real issues people are facing and the real reasons behind an issue; instead they create a scapegoat to attract attention to less important or false issues. We have seen this time and again whenever a ruling party tries to ride against the anti-incumbent sentiments of promises not delivered. Be it politics trying to whip up communal frenzy and trying to scapegoat a community just before elections or any type of hate speech used by a political worker belonging to any political party."
কাজেই এই হেট-স্পিচ, এই রেটরিক, এই স্কেপগোটিং - আরও কিছুদিন (বা মন্দভাগ্য হলে আরও বেশ কিছুদিন) সহ্য করতেই হবে দাদা, যদ্দিন না ঐ পার্টি কেন্দ্র থেকে সরছে।
---
পুনশ্চঃ জিরার্দ কীভাবে এই তত্ত্বে উপনীত হয়েছিলেন সেও এক মজার গপ্পো। উনি অ্যাপারেন্টলি কোনো এক মহিলার প্রেমে পড়েন, এবং কিছুদিন পরেই যা হয় - প্রেম কেটে যায়, তারপর সেই মহিলা প্রেমে পড়েন ওঁর-ই এক বন্ধুর। জিরার্দ লক্ষ্য করেন, ঠিক এই ঘটনার পরে ওঁর মনে হঠাৎ আবার সেই প্রাক্তনের প্রতি প্রেম হুহু করে বেড়ে গেছে - কিন্তু সে তো মানুষ এক-ই? তার তো ইন্ট্রিনজ়িক কোয়ালিটি পালটে যায়নি? তাহলে কী কেস? না ঐ যে বন্ধু চাইছে, সেই ডিজ়ায়ারের মিমিক করছেন জিরার্ড।

No comments:

Post a Comment