Saturday, October 1, 2011

অন্য পুজো (আজ্ঞে না, এটা আনন্দবাজারের কলাম নয়)


শুরুতেই বলে রাখি, আজ থেকে কলকাতায় পুজো, মানে পুজো সব জায়গাতেই, কিন্তু যাবতীয় হুড়ুদ্দুম সব আমার শহরে - আর বলাই বাহুল্য যারা পুজোয় কলকাতায় থাকে তারা ঠাকুর দেখে, ক্যাপ ফাটায়, বেলুন ফোলায়, ফুচকা-চাউমিন-এগরোল ও আরো হরেকরকম  'স্ট্রিট ফুড' খায় এবং বন্ধুবান্ধব ও বয়স থাকলে প্যান্ডেল প্যান্ডেল ঘুরে 'অসুব্যতা' করে বেড়ায় ... আমার, বলাই বাহুল্য , সেসব হুন্ডী কপালে জোটার সিন নেই... বয়েস বেড়ে বেড়ে বার্ধক্যের কাছাকাছি পৌঁছে গেলাম, বন্ধু বান্ধবরাও কে কোথায়  - আর কলকাতা তো এখন দীর্ঘশ্বাসের নামান্তর !

অতএব, আসুন এই চূড়ান্ত ডিপ্রেশনের মুহুর্তে অন্যদিকে ফোকাস মারি - একটা অন্য পুজোর গল্প, আমার শহরের বাঁশবন্দী পুজোপাগল লোক আর ১৫ টাকার মাটন বিরিয়ানির গন্ধকে সাইড কাটিয়ে, বার দুয়েক চটি আর মানিব্যাগ খুইয়ে আর মেট্রোর মাস এক্সোডাস সামলে আসুন নেমে পড়ি রবীন্দ্র সদনের কাছে কোথাও - নন্দনের বাইরেটায় চলুন, এই অক্টোবরের শুরুতে ওইদিকটায় বেশ ভালো হাওয়া দেয়, আর এই গণ-হিস্টিরিয়ার মধ্যেও একটু বসা যায় নিরিবিলি আড্ডার মেজাজে, চা-সিগারেটের দোকান দেখে একটা ভালো জায়গা নিয়ে নিই - আলো ক্রমে  নিভে যাক ... আসুন আমরা পর্দা তুলে উঁকি মারি পিন্টুদার ঘরে ... 

আচ্ছা পিন্টুদা কিন্তু পাশের পাড়ার পিন্টুদা নয়, মানে আসলে পিন্টুদা কেউ নয় - অথবা পিন্টুদা আমার মতন অনেকজন ...

পিন্টুদার বাড়ি মা দুগগার থেকে সাত সমুদ্র তেরো নদীর পরে, সেখানেও অবশ্য মা তার ছানাপোনা দের নিয়ে ফি বচ্ছর এগজিবিশন দিতে আসেন, সাধারণতঃ হপ্তাখানেক পরে (না-বিশ্বাসীদের ধারণা মহিলা ও তার বৃহৎ আনপ্ল্যানড ফ্যামিলি সেই গঙ্গায় ডুব মারেন আর এই অতলান্তিকের কোথাও ভেসে ওঠেন, তবে তারা এসব কথা প্রকাশ্যে বলেন না) ... এবং এই বিশাল জার্নির ধকলেই হোক বা অন্য কোনো কারণে, এখানে তার জৌলুষ পোস্ট-ইলেকশন সিপিএমের ন্যায় - আদেখলা বাঙ্গালী ছাড়া কদর করার লোক মেলা ভার ... তো সেই পিন্টুদার পাড়ার পুজোই আজকে আমাদের চ্যানেলের ব্রেকিং নিউজ! 

পিন্টুদাদের পুজো একদিনে হয়, মানে সকালে ষষ্ঠী থেকে শুরু হয়, বেলার দিকে সপ্তমী অষ্টমী ঘেঁটেঘুঁটে সন্ধ্যের দিকে সন্ধিপুজো ও সিডি প্লেয়ারে কিঞ্চিৎ ঢাক ডট এমপিথ্রি হয়ে বিজয়া কোলাকুলি করে ডিনার - একটা ছোট্ট চার্চে পুজো হয়, শ-দুয়েক লোক মিলেমিশে হইচই করে পিএনপিসি করে দিব্যি কেটে যায় বিলেটেড পুজোদিবস! পিন্টুদা এখানকার একজন কাঠাঁলী কলা, সর্বঘটে তো আছেনই ... আরো এখানে সেখানে 'এসেছে শরৎ হিমের পরশ' করে বেড়াচ্ছেন গত বছর দুয়েক, উনি বেশ কাজের লোক, ্সকালে খিচুড়িতে খুন্তি নাড়েন, বিকেলে কবিতা পড়ে শোনান আর পুজোর আগের রাত্রে প্যাণ্ডেলে পেরেক ঠোকেন - এবং এসবের মাঝে টুক করে ধুনুচি নাচের সময় কোমর দোলাতে আর ভিড় দেখলেই গলায় আঁতেলসূচক ক্যামেরা ঝোলাতে ভোলেন না কিছুতেই, সেসব করেটরে একসময় চার্চ খালি হয়ে যায় - চেয়ার টেবিল তুলতে লোক পাওয়া যায় না কিছুতে, পার্কিং লটটাও ঘুমিয়ে পড়ে আস্তে আস্তে , একটা বড়ো ইউ-হলের পেছনের অন্ধকারে মা দুগগার পাশে বসে বাড়ি ফিরে আসেন পিন্টুদা, আসছে বছর - আবার হবে ... হবে তো? 

পিন্টুদার অ্যালবামে আটচল্লিশ ফুটের ঠাকুরের ছবি নেই, অষ্টমীর দিন ম্যাডক্সের কথা ভেবে হাসিও পায় না সপ্তাহখানেক পরে, আর নাঃ - পুজোয় নতুন জামার ইচ্ছে এতোদিন একটা ধুলোয় ঢাকা ব্ল্যাক অ্যান্ড হোয়াইট ছবি হয়ে কোথায় চলে গেছে কে জানে! তবুও এই বয়সেও বেশ ইচ্ছে হয় জানেন, গ্যারাজের জঞ্জালের স্তূপটাকে একটু সরিয়ে যখন দূর্গাঠাকুরকে রেখে চলে আসতে হয়, একবার টুক করে একটা প্রণাম করতে - 

'রাঙিয়ে দিয়ে যাও গো এবার যাওয়ার আগে ...
... 
যাওয়ার আগে যাও গো আমায় জাগিয়ে দিয়ে '