"তিনি বৃদ্ধ হলেন, বৃদ্ধ হলেন ... বনস্পতির ছায়া দিলেন, সারা জীবন ...
এই বুড়ো গাছের পাতায় পাতায়, সবুজ কিন্তু আজো মাতায় সুঠাম ডালে ...
দেখো বইছে এখন বয়সকালে পাতায় পাতায় এবং ডালে কালের ওজন
তিনি বৃদ্ধ হলেন, বৃদ্ধ হলেন আমায় ছেড়ে বুড়ো হলেন আমার সুজন ..."
আমার যখন বয়েস পাঁচ কি ছয়, আমরা মুসৌরি বেড়াতে গেছিলাম, আমি খুব ছোটো ছিলাম, হাঁটতে পারতাম না অতো, তিনি আমায় কাঁধে চাপিয়ে পাহাড়ের রাস্তায় হেঁটেছিলেন মাইলের পর মাইল ... তারপরে সেই পুরী, আমাদের বাড়ির পুরোনো অ্যালবামে একটা ছবি আছে, আমি একটা ছোট্টো তোয়ালে পরে তাঁর কাঁধে চড়ে কান্নাকাটি করছি আর বাকিরা আমাকে দেখে হাসছে , ভদ্রলোকের তখন একগাল চাপদাড়ি, খুব ভয় পেতাম জলে নামতে, এখনও পাই বোধহয় ... কে জানে? ... তো একদিন তিনি সব দাড়ি টাড়ি কামিয়ে বাড়ি ফিরলেন ... আমি তো চিনতেই পারিনি, বলছি না না তুমি সে নও ... তিনি একবার জামা দেখান ,একবার পকেট থেকে বের করে কলম টা দেখান ... কি করে যে শেষমেষ আমাকে বুঝিয়েছিলেন জানি না ... অনেকদিন ওই লোকটাকে চিনতে পারিনি ... খালি সেটাই মনে পড়ে এখনো আবছা আবছা ...
খুব মারতেন ছোটোবেলায়, অঙ্কে কম পেলে মারতেন, মিথ্যে কথা বললে মারতেন এমনকি কোনো কিছু হারিয়ে গেলেও মারতেন ... আমি বুঝতাম না লোকটা ওরকম কেন করছে ... মা মাঝে মাঝে দুপুরবেলা খেতে বসে চুপিচুপি চোখ মুছতেন, আর আমরা সেই ছোটোবেলাতেই বুঝতে শিখেছিলাম খুব কষ্ট হলে ভাত খাওয়া যায় না ... বুঝতে শিখেছিলাম সন্ধে ছটার পরে বাড়িতে কেউ কেন জোরে কথা বলেনা ... আর আমাদের সেই হারিয়ে যাওয়া ছোটোবেলার ভয়ের মুখোশটা ... নাঃ সেটা আর মনে করতে চাই না কোনোদিন ...
একটা কোচিং ক্লাসের মাইনে মাসে যদি ৩০০ টাকা হয়, তাহলে একটা ক্লাস না যাওয়া মানে ৭৫ টাকা জলে ফেলে দেওয়া, জানতাম ... জানতাম আমার শুধু কয়েকটা নম্বর বেশী আসবে বলে কিভাবে মুখে রক্ত তুলে খেটে চলেছেন তিনি, জানতাম আমাদের বাড়িটা ভাড়াবাড়ি আর জানতাম আমরা আমরা, ওরা ... ওই পাশের বাড়ির ছেলেরা ওরা ওরা ... জানতাম আমার প্রেমিকা কেন তার বাড়িতে বলতে পারেনা ওটা আমাদের নিজের বাড়ি নয়, আমি সব জানতাম ... না এটা তিনি বলেননি, তাও জানতাম ...
তার উপর খুব রেগে গিয়ে ঠিক করলাম খুব বড়ো হব, তার উপর রেগে রাত জাগলাম, আর রাগ ভুলতে পাতার পর পাতা পড়ে গেলাম বই ... পড়ার বই শেষ হয়ে গেল ... না পড়ার বই ... রাগ বাড়লো ... আরো আরো ... আমি তাকে ছেড়ে অনেক অনেক দূরে পালিয়ে গেলাম ... আর ফিরলাম না ... রাগ করেই ...
কাল তিনি মাঝরাতে ঘুমের মধ্যে হঠাৎ চিৎকার করে ওঠেন ... স্বপ্নে দেখেছেন আমি এসেছি... বাকি রাতটুকু ঘুমোননি, আমি জানি ... না এটাও কেউ বলেনি, আমি তাও জানি ...
আমি এখনও হাঁটতে পারিনা পাহাড়ের রাস্তায়, দম আটকে যায়, চারদিকে তাকাই, তাকে দেখি না, সমুদ্রের চোরাবালিতে আমার নেশাশুদ্ধু ডুবে যেতে যেতে তাকে একবার খুঁজি, তিনি নেই ... আমি এখনো অনেক মিথ্যে বলি, এখনো অঙ্কে ভুল করি রোজ রোজ ... এখন তিনি আর বকেন না, মারেন ও না, শুধু একটা প্রায় ভেঙ্গে যাওয়া গলা অর্ধেক পৃথিবী পেরিয়ে এসে বলে, বাপ্টু কিচ্ছু না, রোজ মনে করে শুধু ফোনটা করিস ... খুব চিন্তা হয় আজকাল ... জানিস?
এই বুড়ো গাছের পাতায় পাতায়, সবুজ কিন্তু আজো মাতায় সুঠাম ডালে ...
দেখো বইছে এখন বয়সকালে পাতায় পাতায় এবং ডালে কালের ওজন
তিনি বৃদ্ধ হলেন, বৃদ্ধ হলেন আমায় ছেড়ে বুড়ো হলেন আমার সুজন ..."
আমার যখন বয়েস পাঁচ কি ছয়, আমরা মুসৌরি বেড়াতে গেছিলাম, আমি খুব ছোটো ছিলাম, হাঁটতে পারতাম না অতো, তিনি আমায় কাঁধে চাপিয়ে পাহাড়ের রাস্তায় হেঁটেছিলেন মাইলের পর মাইল ... তারপরে সেই পুরী, আমাদের বাড়ির পুরোনো অ্যালবামে একটা ছবি আছে, আমি একটা ছোট্টো তোয়ালে পরে তাঁর কাঁধে চড়ে কান্নাকাটি করছি আর বাকিরা আমাকে দেখে হাসছে , ভদ্রলোকের তখন একগাল চাপদাড়ি, খুব ভয় পেতাম জলে নামতে, এখনও পাই বোধহয় ... কে জানে? ... তো একদিন তিনি সব দাড়ি টাড়ি কামিয়ে বাড়ি ফিরলেন ... আমি তো চিনতেই পারিনি, বলছি না না তুমি সে নও ... তিনি একবার জামা দেখান ,একবার পকেট থেকে বের করে কলম টা দেখান ... কি করে যে শেষমেষ আমাকে বুঝিয়েছিলেন জানি না ... অনেকদিন ওই লোকটাকে চিনতে পারিনি ... খালি সেটাই মনে পড়ে এখনো আবছা আবছা ...
খুব মারতেন ছোটোবেলায়, অঙ্কে কম পেলে মারতেন, মিথ্যে কথা বললে মারতেন এমনকি কোনো কিছু হারিয়ে গেলেও মারতেন ... আমি বুঝতাম না লোকটা ওরকম কেন করছে ... মা মাঝে মাঝে দুপুরবেলা খেতে বসে চুপিচুপি চোখ মুছতেন, আর আমরা সেই ছোটোবেলাতেই বুঝতে শিখেছিলাম খুব কষ্ট হলে ভাত খাওয়া যায় না ... বুঝতে শিখেছিলাম সন্ধে ছটার পরে বাড়িতে কেউ কেন জোরে কথা বলেনা ... আর আমাদের সেই হারিয়ে যাওয়া ছোটোবেলার ভয়ের মুখোশটা ... নাঃ সেটা আর মনে করতে চাই না কোনোদিন ...
একটা কোচিং ক্লাসের মাইনে মাসে যদি ৩০০ টাকা হয়, তাহলে একটা ক্লাস না যাওয়া মানে ৭৫ টাকা জলে ফেলে দেওয়া, জানতাম ... জানতাম আমার শুধু কয়েকটা নম্বর বেশী আসবে বলে কিভাবে মুখে রক্ত তুলে খেটে চলেছেন তিনি, জানতাম আমাদের বাড়িটা ভাড়াবাড়ি আর জানতাম আমরা আমরা, ওরা ... ওই পাশের বাড়ির ছেলেরা ওরা ওরা ... জানতাম আমার প্রেমিকা কেন তার বাড়িতে বলতে পারেনা ওটা আমাদের নিজের বাড়ি নয়, আমি সব জানতাম ... না এটা তিনি বলেননি, তাও জানতাম ...
তার উপর খুব রেগে গিয়ে ঠিক করলাম খুব বড়ো হব, তার উপর রেগে রাত জাগলাম, আর রাগ ভুলতে পাতার পর পাতা পড়ে গেলাম বই ... পড়ার বই শেষ হয়ে গেল ... না পড়ার বই ... রাগ বাড়লো ... আরো আরো ... আমি তাকে ছেড়ে অনেক অনেক দূরে পালিয়ে গেলাম ... আর ফিরলাম না ... রাগ করেই ...
কাল তিনি মাঝরাতে ঘুমের মধ্যে হঠাৎ চিৎকার করে ওঠেন ... স্বপ্নে দেখেছেন আমি এসেছি... বাকি রাতটুকু ঘুমোননি, আমি জানি ... না এটাও কেউ বলেনি, আমি তাও জানি ...
আমি এখনও হাঁটতে পারিনা পাহাড়ের রাস্তায়, দম আটকে যায়, চারদিকে তাকাই, তাকে দেখি না, সমুদ্রের চোরাবালিতে আমার নেশাশুদ্ধু ডুবে যেতে যেতে তাকে একবার খুঁজি, তিনি নেই ... আমি এখনো অনেক মিথ্যে বলি, এখনো অঙ্কে ভুল করি রোজ রোজ ... এখন তিনি আর বকেন না, মারেন ও না, শুধু একটা প্রায় ভেঙ্গে যাওয়া গলা অর্ধেক পৃথিবী পেরিয়ে এসে বলে, বাপ্টু কিচ্ছু না, রোজ মনে করে শুধু ফোনটা করিস ... খুব চিন্তা হয় আজকাল ... জানিস?