Friday, October 15, 2010

আমার পুজো ...

আজকে না একটু চড়ে গেছে মাসিমা, অল্প খেউড় হয়ে গেলে কিছু মাইন্ড করবেন না, কাইন্ডলি, দোষটা আসলে আমার না, ফ্রিজে দুতিন সপ্তাহ ধরে মদের বোতলটা পড়ে পড়ে পচছে, আর ওদিকে কাশফুল, ঢাকের আওয়াজ, নতুন শাড়ির গন্ধ, বুড়ো আঙ্গুলে টাটকা ফোস্কা ... সবকিছু লপচপিয়ে গেল, বৌকে ফোন করলাম, দুএকটা এলিতেলি পাব্লিকের সাথে ফালতু আমড়াগাছি করলাম কয়েক ঘন্টা, তাও এই রাত দেড়টায় নিজেকে  কেমন যেন একটা তিন টাকা সাতাত্তর পয়সার খালি চোলাইয়ের বোতল মনে হচ্ছে, বিশ্বাস করুন ... না হলে এই সুখেন দাস মার্কা ছেনালি ডায়লগ আমাদের টোটাল খানদানে কেউ দিয়েছে কোনোদিন?

                        লাস্ট ইয়ার এই দিনটা, মানে নবমী ... সরি, লাস্ট না, লাস্টের আগের বারে, বুঝলেন ... প্রায় ছটা কি সাতটা হবে, আমি আর ছোটকা, পার্ক স্ট্রীটের একটা ফুটপাতে বসে ছিলাম, সন্ধে হয়ে গেছে, নন্দনের সামনেটা একদম ফাঁকা, দু একটা আঁতু পাব্লিক মেয়েফেয়ে নিয়ে কেত মারছে, আমরা সিগারেট ধরিয়ে কাউন্টার নিতে নিতে হেব্বি হ্যালু খাচ্ছি, হঠাৎ দেখি একটা পাগলি এসে ফুটপাতের একটা কোণে বসে পড়ল, একদম উলোঝুলো নোংরা জামাকাপড়, চুলে বোধহয় লাস্ট ডিকেডে চিরুনি পড়েনি ... একটা বিড়ির প্যাকেট বের করলো ব্যাগ থেকে, খেতে খেতে একটা কাগজের বান্ডিল বের করে পড়তে আরম্ভ করলো ... সিগারেট, পুজোর ভিড়ের থেকে দূরে একটা ফাঁকা রাস্তা, দুই বন্ধু আর দুহাত দূরে পাগলিটা ... ওঃ, গল্পের প্লট একদম প্লেটে সাজানো ডবল ডিমের অমলেট ... ফলো করলাম খানিকক্ষণ ... তারপর কি মনে হলো , মেট্রো ধরে ফিরে এলাম ... খাতা খুলে বসলাম ...বারো তেরোটা সিগারেট নষ্ট, এক লাইনও বেরলো না ..


                     জমলো না, না? আচ্ছা এইটা শুনুন, আমি আর আমার সেই বান্ধবী, আর আমার বান্ধবীর বন্ধু, বসে আছি একটা হোটেলের সামনে, লঙ্গরখানার মত বিশাল লাইন, রাবনের গুষ্টি শালা ঐখানেই খেতে বসেছে, আমি দুহাতে দুটো থাম্বস আপ নিয়ে ফিরছি, হঠাৎ সেই বোমটা ফাটলো, সেইটা ... অনেক ধোঁয়া, দৌড়োদৌড়ি করছে লোকজন ... লাইফে এক একটা দিন আসে, যেদিন আমাদের বয়েসটা হুটহাট বেড়ে যায়, সেদিন ঠিক তেমনি হলো জানেন ... ও হ্যাঁ, নাটক করি স্টেজে উঠে, হাততালি শুনে কান পচিয়েছি কি এমনি এমনি? সেদিন ওই গার্ডেন রেস্টুরেন্টে বসে একটা যা শাহরুখখানী পোজ দিয়েছিলাম না, ভাবলে এখনো গা-ফা গুলিয়ে ওঠে ...


                 ছোটকাটাই মাথাটা খেয়েছিলো আমার, ইউ এস অফ এ, ঘ্যামা লাইফ, সিগারেটের থেকে সস্তা মদ আর দেদার ফুর্তি ... পুজো ফুজো তো আছে, থাকবে ... বেঞ্জামিন ফ্রাঙ্কলিন থাকবেন না ...

                 কাল রাতে আমাদের গ্যাংটা বেরিয়েছিলো, সেই এক ম্যাডক্স, এক তালবাগান, ডালবাগান, চালতাবাগান ... হাঘরের মতো ছবি লাগাচ্ছে ফেসবুকে ... কোথায় নাকি এবার প্লাস্টিকের বোতল দিয়ে প্যান্ডেল বানিয়েছে, কোন একটা প্যান্ডেলের সামনে আবার বাংলার কিংকং আখাম্বা চেহারা নিয়ে সুকুমারমতি শিশুদের ভয় দেখাচ্ছে, কুমোরটুলিতে যথারীতি সেই হাড়গিলে উটটাকে এনে বেঁধে রেখেছে আর আমজনতা তার সামনে দাঁত কেলিয়ে ছবি তুলছে ...  আমি সেই মন্ত্রমুগ্ধ আতাক্যালানে জনগনমনের দিকে চার অক্ষর ছুঁড়ে দিয়ে ফ্রিজের দরজাটা খুললাম ... ওয়াইনের বোতলে দুচার ফোঁটাও কি নেই?

                দু ঘন্টা হয়ে গেলো তারপর, ফ্যাঁচফ্যাঁচ করে কাঁদলাম, সেই সিংজীকে মনে পড়লো, ট্যাক্সি চেপে হোলনাইট ঠাকুর দেখাতো, একটা জায়গাও চিনতো না আর ঝাড় খেতো খালি খালি, অষ্টমীর দিন বাইরে খেতে বেরোতাম, সেই একটা ঘিঞ্জি হোটেল ছিলো সিঁথির মোড়ে, ক্যাপ্লিন'স কিচেন, জেদ ধরে এক প্লেট একপ্লেট চাউমিন নিতাম, আর্ধেকটা ফেলে দিতে হতো ... বচ্ছরকার সেই একটা দিন বন্দুক চালাতাম, একটাও লাগতো না, আর একবার সেই লেকের মাঠে গীটার, গান ... ওঃ কি আশ্চর্য একটা রাত ... আর যেদিন ওর সাথে বেরোতাম, ভিড়ের মধ্যে খুঁজে নিতাম বাঁহাতের কড়ে আঙ্গুলটা ... বন্ধুরা আসতো সব্বাই, নর্থ হলে বাগবাজার বাটা, সাউথ হলে টালিগঞ্জ মেট্রো ... ছোটকাটা হামেশা লেট করতো ...

             খুব ভিড় হয়েছে আজকে জানেন, দড়ি দিয়েও পাব্লিক সামলাতে পারছে না,স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি সেই নেবুবাগানের প্যান্ডেলের বাইরে আমি একা দাঁড়িয়ে, একটাও চেনা মুখ চোখে পড়ছে না ... কারা যেন মাইকে আমার নাম বলছে ...

'দমদম সেভেন ট্যাঙ্কস থেকে এসেছেন সৌম্য রায়, আপনি যেখানেই থাকুন, এক্ষুনি আমাদের অনুসন্ধান অফিসে যোগাযোগ করুন, কারা যেন আপনাকে খুঁজছে' ...