ও মা, এতো কান্ড করে পাঞ্জাবি পরে গলায় পাউডার লাগিয়ে গিয়ে দেখি আমি একাই এতো বড়ো কবিতা গাঁতিয়ে এসেছি, বাকি সব দামড়া দামড়া খোকাখুকু "আতা গাছে তোতা পাখি" বলেই কেটে পড়ছে (যেটা মাইরি দাদুর লেখাও নয়), একজন তাও "আমাদের ছোট নদী" বললো কয়েক লাইন ! বুঝলাম এ কেরি প্যাকারের ওয়ান-ডে পৃথিবী, এখানে গাভাস্কর হওয়া বৃথা ... আমিও নির্ভীক চিত্তে স্টেজে উঠলাম, বললাম "নমস্কার, আজ আমি আপনাদের ...", তারপর আর্ধেক কবিতা গড়গড় করে বলে বাবার দিকে ফিরে মাইকেই জিগ্যেস করলাম "বাবা, বাকিটা বলবো?" ... বাবা হাত দিয়ে মুখ ঢাকছিলেন না কান বোঝা গেলো না, কিন্তু "মৌনং সম্মতিলক্ষণং" ... অতএব, আমি দর্শকদের দিকে ফিরে বললাম, "আচ্ছা বাবা বোধহয় চাইছেন আমি বাকিটাও বলি, তাহলে শুনুন বাকিটা !"
এ পাড়ায় আমার নাম-ডাক নেই, এককালে যাও একটা ডাক-নাম ছিলো তাও হারিয়ে গেছে। আমি এখানেই একটা কলেজে পড়াই, আর কেউ না দেখলেই রাশি-রাশি কাগজ-পত্রে দুর্বোধ্য আঁক কাটি। একটা আঁকে কঠিন রোগ সেরে যায়, একটা আঁকে চোর ধরা পড়ে, আবার একটা আঁক কষলেই বাড়ির অ্যান্টেনায় একটা পাখি এসে দোল খায় ! তবু এই বয়সেও মাঝে-মাঝেই অঙ্ক আটকে যায়, তখন এই গ্রহান্তরের একটা নির্জন গুহায় বসে ছাদের দিকে চেয়ে কল্পনা করে নি একটা ছোট্ট ঘুলঘুলি, আর একটা চড়ুই এসে তাতে বসছে, আবার উড়ে যাচ্ছে ... এই যে দু-একটা গল্প, সেই চড়ুইটার কাছেই শুনেছিলাম !
Sunday, May 8, 2022
পঁচিশে
ও মা, এতো কান্ড করে পাঞ্জাবি পরে গলায় পাউডার লাগিয়ে গিয়ে দেখি আমি একাই এতো বড়ো কবিতা গাঁতিয়ে এসেছি, বাকি সব দামড়া দামড়া খোকাখুকু "আতা গাছে তোতা পাখি" বলেই কেটে পড়ছে (যেটা মাইরি দাদুর লেখাও নয়), একজন তাও "আমাদের ছোট নদী" বললো কয়েক লাইন ! বুঝলাম এ কেরি প্যাকারের ওয়ান-ডে পৃথিবী, এখানে গাভাস্কর হওয়া বৃথা ... আমিও নির্ভীক চিত্তে স্টেজে উঠলাম, বললাম "নমস্কার, আজ আমি আপনাদের ...", তারপর আর্ধেক কবিতা গড়গড় করে বলে বাবার দিকে ফিরে মাইকেই জিগ্যেস করলাম "বাবা, বাকিটা বলবো?" ... বাবা হাত দিয়ে মুখ ঢাকছিলেন না কান বোঝা গেলো না, কিন্তু "মৌনং সম্মতিলক্ষণং" ... অতএব, আমি দর্শকদের দিকে ফিরে বললাম, "আচ্ছা বাবা বোধহয় চাইছেন আমি বাকিটাও বলি, তাহলে শুনুন বাকিটা !"
Friday, March 25, 2022
ব্যক্তিগত অথবা নৈতিক
"Those who choose the lesser evil forget very quickly that they chose evil."
জতুগৃহের সামনে দাঁড়িয়ে তত্ত্বকথা অশ্লীল মনে হয়, তাও ... অর্ধশতাব্দী আগে Hannah Arendt এই চমৎকার কথাটা বলেছিলেন, যা (দুর্ভাগ্যবশতঃ) পুরোনো হওয়ার নয় কোনোদিন-ইঃ
বলেছিলেন, সাংঘাতিক গণহত্যার পরেপরেই গোটা মানবসভ্যতাকেই কাঠগড়ায় দাঁড় করাতে ইচ্ছে করে, যেমনটি হয়েছিলো জর্মনিতে, কিন্তু সেই collective guilt আসলে একটা ফ্যালাসি বই কিছু না, "There is no such thing as collective guilt or collective innocence; guilt and innocence make sense only if applied to individuals"!
অকল্পনীয় বাস্তবের সামনে দাঁড়িয়ে আমরা বুঝতে পারি না, কোথা থেকে কী হয়ে গেলো, বুঝতে পারি না একটু একটু করে আমাদের-ই প্রত্যেক দিনের আপোষ, এক-একটা সামান্য নৈতিক বিচ্যুতি জমতে জমতে একদিন এমন জায়গায় পৌঁছে যায় যে অপরাধের যথেষ্ট শাস্তি নেই আমাদের অভিধানে, আর ক্ষমা তো প্রশ্নাতীত।
কিন্তু তবুও ব্যক্তিগত দায়িত্ববোধ তো একেবারেই এড়ানো যায় না, তাই না? আমি-আপনি কেউ তার ব্যতিক্রম নন। সে দায়িত্ববোধ শুধু হাওয়া মেপে দিকে-দিগন্তরে জাজমেন্টের বাণী ছড়িয়ে আর নিজেকে ছাড়া বাকি সবাইকেই কাঠগড়ায় তুলে শেষ হয় না। সেই দায়িত্ববোধের একটুখানি বোধ করি খানিকটা অকৃত্রিম ঘৃণা আর রাগ মনের মধ্যে পুষে রাখা, কারণ এখনো অনেক দীর্ঘ রাত্রি বাকী।
অ্যারেন্ট বলেছিলেন যে নিতান্ত সাধারণ মানুষ যারা পিষে যাবেন জেনেও ঐ বিশাল চাকার সামনে দাঁড়িয়ে পড়েছিলেন, আর প্রতিবাদ করতে সাহস করেছিলেন, তাদের আর কিছু ছিলো না নৈতিক বিশ্বাসটুকু ছাড়া। সক্রেটিসের মতো তারাও ভাবতে পেরেছিলেন, "it is better to suffer an injustice than to commit one!”
সেইটুকুও কি আমার/আমাদের আর অবশিষ্ট আছে? জানি না। তবে নিজের সাথে একান্তে একটু অপ্রিয় কথা বলাই যায়, নিজেকে নিজে অস্বস্তিকর প্রশ্ন-ও করাই যায়, অথবা সব কিছু শেষ হয়ে গেলেও নিজের হাতের দিকে তাকিয়ে আবছা অথবা স্পষ্ট দাগ-ও খোঁজাই যায়। প্রকাশ্যে হোক বা না হোক, যদ্দিন বেঁচে আছি, সেই নিজের সাথেই তো বাঁচতে হবে, তাই না?
---
Excerpts from “Personal Responsibility Under Dictatorship,” Hannah Arendt’, available here: https://grattoncourses.files.wordpress.com/2016/08/responsibility-under-a-dictatorship-arendt.pdf
Hannah Arendt, Image credit: Barbara Niggl Radloff, CC BY-SA 4.0 via Wikimedia Commons |