Sunday, November 21, 2021

প্রোফেশনাল ডেভেলপমেন্ট

গতকাল একটা প্রোফেশনাল ডেভেলপমেন্ট ওয়ার্কশপে গেছিলাম। যাওয়ার যে আদৌ ইচ্ছে ছিলো এমন না, কিন্তু আগের বছর একটাতেও যাইনি বলে এই বছর একরকম কান মুলেই আর কি ...  

তা যাই হোক, গিয়ে দেখি একজন বেশ ডাঁটোয়াল ও সফল প্রোফেসর-গোছের লোক বিবিধ জ্ঞান দিচ্ছেন কী ভাবে রিসার্চ করতে হয়, কী ভাবে গ্রান্ট প্রোপোজালে ঝুড়ি ঝুড়ি ঢপ দিতে হয় ইত্যাদি। 'দশে মিলি করি হ্যাজ, হারি-জিতি নাড়ি ল্যাজ' টাইপের বাণী শুনছি। শুনতে শুনতে উদাস হয়ে ফলস সিলিং-এ নেই-কড়িকাঠ গুনছিলাম, একটুস তন্দ্রা এসে গেছিলো। এমন সময়ে হঠাৎ দেখি বক্তা আমার দিকে-ই তাকিয়ে বেশ জোরের সঙ্গে বললেন, "we should not focus too much on Netflix!"

এদিকে আমি আগের দিন-ই একটা অতি খাজা সিনেমা দেখে রাত করে ঘুমিয়েছি। সবেগে মাথা নেড়ে বললাম, তা বটেই তো, ইট ইজ সাচ আ ওয়েস্টেজ অফ টাইম, তবে কি না খুব-ই টেম্পটিং। মাস্কের আড়ালে বক্তার মুখে বোধহয় হাসি ফুটে উঠলো, "ইয়েস মাই ফ্রেণ্ড!" বলে তিনি আরো মিনিট পাঁচেক নেটফ্লিক্সের কুফল নিয়ে বলতে লাগলেন, কেন আমাদের চিরতরে বর্জন করা উচিৎ ইত্যাদি ... আমি একটু অবাক-ই হচ্ছিলাম যে এতো রাগ কেনো রে বাবা। শেষের দিকে বুঝলাম, নেটফ্লিক্স নয়, মেট্রিক্স। উনি বলতে চাইছিলেন, এই খালি কটা পেপার, কটা গ্র্যান্ট এইসব হিসেব না কষে একটু ভালো কাজে মন দিতে। 

যাই হোক, ঠিক করলাম বাকী ওয়ার্কশপে আর কোনো কথাই বলবো না, কে না জানে, তাবৎ শোভন্তি মূর্খম ... অথবা বোবার কোনো শত্রু নাই। কিন্তু হলো কী, শেষের দিকে একটা সাদা পাতা সবাইকে ধরিয়ে দিয়ে বক্তা বললেন, 'পাঁচ মিনিট সময় দিচ্ছি, রাইট ডাউন হোয়াট ইউ মিন বাই পি-ভ্যালুজ!'

এইবার তো কমন কোশ্চেন পড়েছে। আমি কোনোদিকে না তাকিয়ে এক কোণে একটা নর্ম্যাল কার্ভ, তার এক লেজে একটু শেডিং ইত্যাদি দিয়ে বেশ জমিয়ে এক প্যারা লিখেছি। লাস্টে উপসংহার লিখবো লিখবো করছি যে সিপেমের ন্যায় প্রবল-পরাক্রান্ত পি-ভ্যালুর-ও আজ অশেষ দুর্দিন, বেইজিয়ান-রা উহাকে গালি না দিয়ে জল খান না। এমন সময় দেখলাম পাশের ছেলেটা নিজের চোতা দেখে পড়তে আরম্ভ করলো "ইন্টিগ্রিটি, ডিসিপ্লিন, ট্রাস্ট ..." বুঝলাম এতোদিনে কান-টা সত্যিই গেছে, লিখতে বলা হয়েছিলো "key values"। অফ কোর্স। যাই হোক, খাতাটা আর জমা দিতে হয়নি এই আমার ভাগ্য। 

তবে কি না একেবারে দুঃখের-ও কিছু নেই। মহামানুষদের সাথে এরকম হয়েই থাকে। শুনেছি দেরিদার টকে গিয়ে এক হল ভর্তি লোক শুনেছিলেন তিনি "cows" নিয়ে মনোজ্ঞ ভাষণ দিচ্ছেন। দিচ্ছেন তো দিয়েই যাচ্ছেন, লোকেও বুঝুক ছাই না বুঝুক, নোট টুকেই যাচ্ছে। ব্রেকের পর নাকি দেরিদা এসে বলেন, 'I'm told it's pronounced chaos'! 

এই গল্পের-ই আর এক সিক্যুয়েলে, দুই ছাত্র একবার কেম্ব্রিজ ক্যাফেতে দেরিদার সাথে দেখা করে জিগ্যেস করে, সিনেমা নিয়ে ওঁর মতামত কী? বিরক্ত দেরিদা বলেন, ওঁর মনে হয়, it is inescapable, it is everywhere, it's in the bread, it's in the coffee! বলাই বাহুল্য, দেরিদা ভেবেছিলেন, ওঁকে cinnamon নিয়ে কিছু জিগ্যেস করা হয়েছে। 

যাই হোক, এই আমার গল্প হলো সারা। কিন্তু সুকুদা বলে গেছেন, 'যদু আর বংশীধর যমযজ ভাই তারা', যাই বংশীধরকে খুঁজি।