Posts

বিষের ইতিহাস, ইতিহাসের বিষ

Image
 গুরুচণ্ডা৯-তে প্রকাশিত - https://www.guruchandali.com/comment.php?topic=32285 ("Alle Dinge sind Gift, und nichts ist ohne Gift; allein die Dosis macht, dass ein Ding kein Gift ist.") "What is there that is not poison? All things are poison and nothing is without poison. Only the dose makes a thing not a poison”  (প্যারাসেলসাস, ১৪৯৩-১৫৪১) বিষ এবং বিষক্রিয়া নিয়ে মানুষের কৌতূহল ঠিক কবে থেকে শুরু তার কোনো ঠিক নেই। প্রাগিতিহাস থেকে এই গতকালের খবরের কাগজ অব্দি প্রায় নিঃশব্দে তার পদচারণা। কিন্তু সেই ইতিহাস রহস্যময়, আকর্ষণীয়, অন্তহীন এবং কিঞ্চিৎ জটিল। “জটিল”, কারণ, বিষ ঠিক কাকে বলে, সেই কড়া সংজ্ঞা দেওয়াই একটু মুশকিল। টক্সিকোলজি, অর্থাৎ বিষবিজ্ঞানের বইয়ের শুরুয়াতেই লেখা,  “Toxicology is often regarded as the science of poisons or poisoning, but developing a strict definition for poison is problematic” । শুধু তাই-ই নয়, যে উপাদান খুব সামান্য পরিমাণে দিলে হয়তো জীবনদায়ী ওষুধ হতে পারে, সেই এক-ই বস্তু মাত্রাতিরিক্ত পরিমাণে হয়ে উঠতে পারে প্রাণঘাতী বিষ। আর্সেনিক ট্রাইঅক্সাইডের কথাই ...

ঋতেন্দ্রনাথ

Image
ঋতেনদা (ছবিটি তোলা অনিরুদ্ধ নিয়োগী, ওরফে নিও-দা'র) 'আমাদের দিনগুলিও অপূর্ণ, অপূর্ণ আমাদের রাত্রি, তবুও হাত ফস্কে জীবন চলে যায় যেন অকম্পিত ঘাসের মধ্যে একটি মেঠো ইঁদুর।' লিখেছিলেন এজরা পাউন্ড। জীবনের দিকে, এবং বারবার এই সন্ধেবেলায় নিজেদের দিকে তাকিয়ে মনে হয়েছে সত্যিই অদ্ভুত ঘটনাহীন জীবন যেন নিস্তরঙ্গ দুপুরের উঠোন। পুকুরের বুক চিরে ব্যাঙাচি খেলার মত একটা করে ঢিল ছুটে যায় মাঝেমাঝে - সত্যিই কি জলের স্তর চিরে যায়? চেরে না। মাঝে মাঝে মনে হয় জীবন যেন ঐরকম, কত কিছু হয়ে যায় দাগ পড়ে না। তবু সেইসব নিস্তরঙ্গ দিনগুলোর মধ্যে একদিন একটা বিপর্যয় ঘটে যায়। আমরা বোঝার আগেই একটা অন্য পৃথিবীতে গিয়ে পৌঁছুই। আর জেনে যাই - সময় দুইরকম হয়। বিপর্যয়ের আগে, আর বিপর্যয়ের পরে। 'যেমন অসত্য ছিল দীর্ঘ গতকাল, যেমন অসত্য হবে অনন্ত আগামী'।  আগামী তবুও আসবেই। আমরা তো আসলে মনে মনে জানি যে সেকেণ্ড ল' অফ থার্মোডায়নামিক্স বলেছে, যে টোটাল এন্ট্রপি কমতে পারে না, সময়ও শুধু সামনের দিকেই চলতে পারে। যেভাবেই সে যাক না কেন। তাই সেই ঘন্টা, মিনিট, সেকেণ্ড একদিন নরম করে দেবে এইসব যন্ত্রণা। তবে, কোথাও একটা ছোট্ট গর্...

বইমেলা ২০২৫

Image
 এলিজাবেথ বিশপ নামে আমার একজন প্রিয় কবি ছিলেন। ছিলেন মানে চলে গেছেন অনেকদিন। আমার জন্মের-ও আগে। আমি চিনেছি বই পড়ে। আর ওঁর লেখা অপূর্ব সব চিঠি পড়ে। রবার্ট লাওয়েলকে লেখা চিঠি, আর অ্যান সেক্সটনকে, বলা বাহুল্য তারা দুজনেও কবি।  তো সেই এলিজাবেথ বিশপ একসময় অনেকদিন টানা ব্রাজিলে ছিলেন। কেন গেছিলেন মনে নেই, কিন্তু এটা মনে আছে যে ঐ দু সপ্তাহ থাকবো বলে গিয়ে বছর পনেরো থেকে গেছিলেন। যেমন হয় আর কী! সেইখান থেকেই একটা চিঠি লেখেন অ্যান সেক্সটনকে। লিখেছিলেন, এতো দূরে থেকে আমার প্রায়ই মনে হয় যেন দুটো আমি ছিল, একটা আমি ব্রাজিল চলে এসেছে, আরেকটা আমেরিকায় রয়ে গেছে। যে আমিটা আমেরিকায় রয়ে গেছে, সে বোধহয় এতোদিনে আর বেঁচে নেই, সে খবর-ও আমার জানা নেই।  (লিখেছিলেন, "In fact, living this far away I often feel there were two of me, one who stayed in the U.S.A and one who came to Brazil, and that the one who stayed in the U.S. may well have died without my knowing it.") আমার মাঝে মাঝেই ঠিক এই কথাটাই মনে হয়, আর ভাবি যে, একটা সেই আমি যে কলকাতায় রয়ে গেছে সে কী করছে কে জানে? হয়তো এদ্দিনে সে শুধুই মন দিয়ে ...

"স্বার্থপরতাই আমাদের সমষ্টিগত দুর্দশার দিকে নিয়ে যেতে পারে"

কেউ দুইডোকু খেলেছেন? খেলে দেখতে পারেন, মন্দ না। সুডোকু-ই কিন্তু খেলতে হবে দুইজনে। যে শেষ "ভ্যালিড" চাল দেবে সে জিতবে। সঙ্গে একজন খেলার সঙ্গী থাকলে তো কথাই নেই, না থাকলেও https://www.duidoku.com/ সাইটে এখন এ্যাই-এর সাথে খ্যালা যাচ্ছে। আমি আবার হেব্বি আনতাবড়ি খেলে প্রথম রাউন্ডে এ্যাই-কে হারিয়ে দিলাম। মনে হচ্ছে ভালো কোম্পানির এ্যাই না। হয়তো শীর্ণ নিউরাল নেট। কে জানে! এই খেলাটার কথা জানতে পারলাম একটি খ্যাতনামা অর্থনীতিবিদ কৌশিক বসুর উপরেই অমিতাভ গুপ্ত-র লেখা একটি ফিচার থেকে। কৌশিকবাবু ট্রাভেলার্স ডিলেমা নিয়ে গতবছর শারদীয়া উদ্বোধনে একটা প্রবন্ধ লিখেছিলেন। সেটা আতিপাতি করে খুঁজতে গিয়ে অমিতাভ গুপ্তর লেখাটা পেলাম। বলাই বাহুল্য, ট্রাভেলার্স ডিলেমা, দুইডোকু দুটোই কৌশিকবাবুর মস্তিষ্কপ্রসূত। যাই হোক, উদ্বোধনের প্রবন্ধটা যখন পাই-ই নি, ট্রাভেলার্স ডিলেমা কী সেটাও ছোটো করে নিজের ভাষায় বলে দিই। আমি একদম অজ্জিনাল থেকেই চোথা করে দিচ্ছি। তাও, আমার বন্ধুদের মধ্যে প্রচুর প্রচুর দারুণ অর্থনীতির ছাত্রছাত্রী আছে, ভুলভাল বললে কেউ ঠিক করে দেবে আশা করছি। ধরা যাক দুজন লোক - রামবাবু আর শ্যামবাবু ফরেন ট্য...

৩১শে অক্টোবর, ১৯৮৪

Image
--- ১ ---- আজ থেকে ঠিক চল্লিশ বছর আগের কথা। ১৯৮৪! নাইনটিন এইট্টি ফোর। অরওয়েলের ডিস্টোপিয়ান উপন্যাস সার্থকনামা মনে হতে পারে পরপর ঘটনার দিকে তাকালে। এই এক বছরের ইতিহাসে খোদাই করা থাকবে একের পর এক জ্বলন্ত অঙ্গারের দাগ। চট করে ঝালিয়ে নেওয়া যাক। এই চুরাশিতেই, একদিকে প্রথম ও একমাত্র ভারতীয় মহাকাশচারী রাকেশ শর্মা সয়ূজ টি-ইলেভেনে চেপে পাড়ি দিচ্ছেন অনন্ত শূন্যের দিকে, গ্রীষ্ম অলিম্পিকসে ১/১০০ সেকেন্ডের জন্য পদক হাতছাড়া হচ্ছে সোনার মেয়ে পিটি ঊষার, প্রথম ভারতীয় পর্বতারোহী হিসেবে বাচেন্দ্রী পাল স্পর্শ করছেন এভারেস্ট, আর অক্টোবর মাসে যাত্রা শুরু করছে কলকাতার পাতাল রেল। আবার এই ১৯৮৪-তেই   পাঞ্জাবে বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলনের হিংসাত্মক কার্যকলাপের জেরে জুন মাসে শুরু হচ্ছে অপারেশন ব্লু-স্টার -   অমৃতসরের স্বর্ণমন্দিরে সামরিক অভিযান। উগ্রপন্থীদের সাথে সেনাবাহিনীর দীর্ঘ যুদ্ধ, সামরিক সাফল্যের বলি কিছু নিষ্পাপ নাগরিক, কিছু সাধারণ মানুষ। ব্লু-স্টারের পাঁচ মাসের মধ্যেই, অক্টোবরের ৩১শে, ভারতের একমাত্র মহিলা প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর অ্যাসাসিনেশন - যেদিন সকালে দুই দেহরক্ষী - কনস্টেবল সৎবন্ত ...