আলো ঘন হয়ে আসছে
সন্দেহ
একদিন সন্ধ্যায় টেবিল-ল্যাম্পের আলোকবৃত্তে
আমার লেখা নানান নাটক আর কবিতা দেখে
এক গভীর বিষাদে আক্রান্ত হলাম।
যা বলতে চেয়েছি বলেছি কি?
নাকি আয়নায় সব উল্টো হয়ে গেছে,
ডান হাতকে মনে হচ্ছে বাঁ-হাত?
('ম্যাকবেথে'র পাণ্ডুলিপির খাতায় উৎপল দত্তের একটি কবিতা।)

---
এই বইটির ভূমিকায় শমীক বন্দ্যোপাধ্যায় লিখেছেন,
"২৬ জুন ১৯৭৫ ভারতে এমারজেন্সি ঘোষিত হয়। তারই তিন মাস পূর্তি মুহূর্তে ২৭ সেপ্টেম্বর ১৯৭৫ রবীন্দ্রসদনে পিপলস লিটল থিয়েটার উৎপল দত্তের নির্দেশনায় ম্যাকবেথ অভিনয় করে। ১৯৮৯ সালে এক সাক্ষাৎকারে উৎপল দত্ত আমায় বলেন:
“শেক্সপিয়রের ম্যাকবেথ যখন আমরা করলাম, আমরা বুঝতে পেরেছিলাম যে শেক্সপিয়রের ম্যাকবেথ-এর চেয়ে স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে better play হতে পারে না। এমারজেন্সি-র বিরুদ্ধে এত ভালো নাটক আর নেই। এখনও পর্যন্ত লেখা হয়নি। কিন্তু আমরা জানতাম যে, এটা যে শ্রীমতী ইন্দিরা গান্ধীর এমারজেন্সির বিরুদ্ধে নাটক, সেটা ধরার মতো বুদ্ধি কংগ্রেসিদের নেই। ম্যাকবেথ করলে ওরা বলবে যে এ দল শেক্সপিয়র সাধনায় মগ্ন আছে, এদেরকে কিছু বোলো না । তাই হল। ম্যাকবেথকে ওরা কোনো বাধা-টাধা দেয়নি।"
তার আগে উৎপলবাবু আমায় বোঝাচ্ছিলেন, রাজনৈতিক মতাদর্শ ও কর্মসূচির প্রতি অঙ্গীকারবদ্ধ কোনো নাট্যগোষ্ঠী কীভাবে নাটক বাছে :
“আমরা সকলে মিলে বসে ঠিক করি যে এইবারে আঘাত হানা যাক। তারপরে আঘাত হানার পর আমরা আবার বসে ঠিক করি ... এইবারে আরম্ভ হবে ক্ল্যাসিক্স্-এর সাধনা। দু-রকমই করে যেতে হবে। শত্রুকে আঘাতও করব, আবার রিট্রীটও করব। সব সময় ক্রমশ গলা চড়িয়ে চড়িয়ে যাব না। সেটা আমাদের ধারণা স্থূল রাজনৈতিক ট্যাকটিক্স। ... “"
---
যাকে উৎপল দত্ত "স্থূল রাজনৈতিক ট্যাকটিক্স" বলেছিলেন, আপাতত সেইটিই একমাত্র রাজনৈতিক ডিসকোর্স। স্থূল-ই নয় শুধু, কদর্য ও অশ্লীল-ও বটে।
তবে, সে যাই হোক, ম্যাকবেথ প্রসঙ্গে একটি ব্যক্তিগত পাদটীকা না জুড়লে অন্যায় হবে, সেটি এ-ই যে, আমার দেখা মঞ্চে শ্রেষ্ঠ ম্যাকবেথ শ্রী অশোক মুখোপাধ্যায়। এই বছরের শুরুতে ওঁকে মঞ্চে ম্যাকবেথের নির্বাচিত অংশ পাঠ করতে শুনেছি, "রাজা ও রাণী" নাটকে। আমি এক্কেবারে সামনে বসেছিলাম, সেই রাত্রেও গায়ে কাঁটা দিচ্ছিল, এই যে এখন ভাবছি, মনে পড়লে এখনো গায়ে কাঁটা দিচ্ছে। তাই সেই নাটকের ঠিক একটি টুকরো, যেটি আমার প্রিয়তম, সেটির তিনটি রূপ নিচে টুকে রাখছি।
প্রথমটি শেক্সপীয়র (বলাই বাহুল্য)।
“Come, seeling night,
Scarf up the tender eye of pitiful day;
And with thy bloody and invisible hand
Cancel and tear to pieces that great bond
Which keeps me pale! Light thickens; and the crow
Makes wing to the rooky wood:
Good things of day begin to droop and drowse;
While night's black agents to their preys do rouse.”
উৎপল দত্তর অনুবাদে এই অংশটি -
“এস অন্ধ রাত্রি,
করুণ দিবসের মায়াময় নয়ন কর আবরিত;
তোমার রক্তসিক্ত অদৃশ্য হাতে মোচন কর ছিন্ন কর
বিবেকের মহা-বন্ধন, যার পেষণে আমি দ্বিধা ও শঙ্কায় রক্তশূন্য পাণ্ডুরবরণ।
আলো পড়ে আসছে, পাখিরা পাখায় শূন্য মন্থন করে
ফিরে চলেছে আরণ্যক নীড়ে। দিনের আনন্দোচ্ছল শষ্পপুষ্পরাজি
ধীরে ধীরে নিদ্রার আবেশে মাথা নত করছে
রক্তপায়ী নিশাচর শিকারের আশায় ঝেড়ে ফেলছে নিদ্রার জড়িমা"
আর, অশোকবাবুর ‘রাজা ও রাণী’তে এর অনুবাদ -
“এসো রাত্রি। তুমি তো সেলাই করো চোখের দু পাতা, এসো তবে। বন্ধ করে দাও হতভাগ্য দিনের করুণ চোখ।
আলো ঘন হয়ে আসে। গাছের শাখার গাঢ়তায় উড়ে যায় কাক। দিনের যা কিছু ভালো ঢলে পড়ছে ক্রমশঃ তন্দ্রায়। নিশীথের অনুচরেরা বেরিয়ে পড়ছে শিকারের খোঁজে … “

---
আবার পড়ি ঐ লাইনগুলি ... 'Light thickens' / 'আলো পড়ে আসছে' / 'আলো ঘন হয়ে আসছে' ...
আপনাআপনি মাথার মধ্যে গুনগুন করছে না সেই অলীক ও আশ্চর্য শুরুয়াত?
"আলো ক্রমে আসিতেছে। এ নভোমণ্ডল মুক্তাফলের ছায়াবৎ হিম নীলাভ। আর অল্পকাল গত হইলে রক্তিমতা প্রভাব বিস্তার করিবে, পুনৰ্ব্বার আমরা, প্রাকৃতজনেরা, পুষ্পের উষ্ণতা চিহ্নিত হইব। ক্রমে আলো আসিতেছে।"
---
ক্রমে আলো আসুক।
প্রথমটি শেক্সপীয়র (বলাই বাহুল্য)।
“Come, seeling night,
Scarf up the tender eye of pitiful day;
And with thy bloody and invisible hand
Cancel and tear to pieces that great bond
Which keeps me pale! Light thickens; and the crow
Makes wing to the rooky wood:
Good things of day begin to droop and drowse;
While night's black agents to their preys do rouse.”
উৎপল দত্তর অনুবাদে এই অংশটি -
“এস অন্ধ রাত্রি,
করুণ দিবসের মায়াময় নয়ন কর আবরিত;
তোমার রক্তসিক্ত অদৃশ্য হাতে মোচন কর ছিন্ন কর
বিবেকের মহা-বন্ধন, যার পেষণে আমি দ্বিধা ও শঙ্কায় রক্তশূন্য পাণ্ডুরবরণ।
আলো পড়ে আসছে, পাখিরা পাখায় শূন্য মন্থন করে
ফিরে চলেছে আরণ্যক নীড়ে। দিনের আনন্দোচ্ছল শষ্পপুষ্পরাজি
ধীরে ধীরে নিদ্রার আবেশে মাথা নত করছে
রক্তপায়ী নিশাচর শিকারের আশায় ঝেড়ে ফেলছে নিদ্রার জড়িমা"
আর, অশোকবাবুর ‘রাজা ও রাণী’তে এর অনুবাদ -
“এসো রাত্রি। তুমি তো সেলাই করো চোখের দু পাতা, এসো তবে। বন্ধ করে দাও হতভাগ্য দিনের করুণ চোখ।
আলো ঘন হয়ে আসে। গাছের শাখার গাঢ়তায় উড়ে যায় কাক। দিনের যা কিছু ভালো ঢলে পড়ছে ক্রমশঃ তন্দ্রায়। নিশীথের অনুচরেরা বেরিয়ে পড়ছে শিকারের খোঁজে … “

---
আবার পড়ি ঐ লাইনগুলি ... 'Light thickens' / 'আলো পড়ে আসছে' / 'আলো ঘন হয়ে আসছে' ...
আপনাআপনি মাথার মধ্যে গুনগুন করছে না সেই অলীক ও আশ্চর্য শুরুয়াত?
"আলো ক্রমে আসিতেছে। এ নভোমণ্ডল মুক্তাফলের ছায়াবৎ হিম নীলাভ। আর অল্পকাল গত হইলে রক্তিমতা প্রভাব বিস্তার করিবে, পুনৰ্ব্বার আমরা, প্রাকৃতজনেরা, পুষ্পের উষ্ণতা চিহ্নিত হইব। ক্রমে আলো আসিতেছে।"
---
ক্রমে আলো আসুক।
Comments
Post a Comment