Friday, August 16, 2024

ভুয়ো খবর ছড়াবেন না - ১

 অথরেটারিয়ান রেজিমের একটা বিশেষ লক্ষণ সমস্ত পাবলিক ইনস্টিটিউশনেই ঘোগের বাসা বানিয়ে তাদের একে একে নষ্ট করে ফেলা, তাদের বিশ্বাসযোগ্যতা একেবারে শূন্য করে দেওয়া।

এই প্রক্রিয়া চলতে চলতে পুরো সিস্টেম এমন জায়গায় পৌঁছে যায় যে বিচারবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষ-ও আর ভরসা রাখতে পারে না যে পুলিশ বা প্রশাসন বা আইন-আদালতের উপর, বা কোনো সংবাদমাধ্যমের উপর। কারণ সবাই জানে কেউ-ই নিরপেক্ষ নয়, এবং এও সবাই জানে যে সত্যি ভয়ানক হলেই ধামাচাপা দেওয়ার সাঙ্ঘাতিক অপচেষ্টা চলতেই থাকে। চলছেই এবং চলবেই। আপাদমস্তক দুর্নীতিবাজ দলের হাতে ক্ষমতা থাকলে এ তো হবেই।
হ্যাঁ, ফ্যাক্ট-চেকিং এজেন্সি নেই তা নয়, কিন্তু কোটিকে গুটিক, তাদের সাধ্য নেই এই বিশাল হোয়াটস-অ্যাপ আর ফেসবুকের মূহুর্তে ভাইরাল হওয়া মিস-ইনফর্মেশন আটকানো।
আর দোষ কাকেই বা দেব? লোকে তো মানুষের ক্রেডিবিলিটি দেখে বিচার করে খবরের সত্যাসত্য। যিনি ছড়াচ্ছেন তিনি নিজে যদি প্রতিষ্ঠিত পেশাদার মানুষ হন - অথবা নিজেই জার্নালিস্ট হন - লোকে ধরেই নেয় যে সেই মানুষের প্রোফেশনাল ক্রেডিবিলিটি == তার পোস্ট করা খবরের ক্রেডিবিলিটি। "উরেব্বাবা অত বড় লোক, উনি কি আর ফেক ছড়াবেন?"
কিন্তু তারাও ছড়াতেই পারেন, জেনে বা না জেনে, আর ঐ ভেরিফাই করে নিতে নিতে যদি দেরি হয়ে যায়? তাই আগে পোস্ট করে ফেলি, উপরে একটা দায়সারা ডিসক্লেইমার লিখে দেওয়া যাবে না হয়, না হয় পরে ফেক নিউজ় প্রমাণিত হলে পোস্ট ডিলিট, না হলে একটা টুক করে উপরে "আপডেট" লিখে ঝেড়ে ফেলা, অথবা ক্যাজুয়ালি বলে দেওয়া যাবে 'কালকে যা ছড়িয়েছি সব ফেক, আজকে কিন্তু ঘোড়ার মুখের খবর।'
হ্যাঁ, এই সাংঘাতিক সময়ে মাথা ঠাণ্ডা রেখে ফ্যাক্ট-চেক করার দাবি তোলাও হয়তো অযৌক্তিক। তাও। একটু অন্তত ভেবে করুন। দুদিন আগে দেখলাম একজনের ছবি দিয়ে ভার্চুয়াল উইচ-হান্ট চলছে, অনতিবিলম্বে জানা গেলো ওটা ফেক, কিন্তু যারা ছড়িয়েছেন তাদের অ্যাকাউন্টেবিলিটি? নেই। আবার কাল বা পরশু থেকে প্রায় প্রত্যেকটা হোয়াটস্যাপ গ্রুপে একটা অডিও ক্লিপ ঘুরে বেড়াচ্ছে, আর সবাই কার ক্লিপ, সোর্স কি, কিছু না জেনে না ভেবে সেটাকেই দিকে-দিগন্তরে ছড়িয়েই যাচ্ছেন। ঐ ক্লিপের অভিযোগগুলো কি ১০০% ভুল? আমি জানি না, কিন্তু প্রমাণ ছাড়া এত সাঙ্ঘাতিক সব অভিযোগ বাজারে ছেড়ে দেওয়ার আগে ভাবা উচিত বৈকি।
আমার এ-ও বিশ্বাস যে ফেক নিউজ়/ আনভেরিফায়েড অডিও ইত্যাদি দেদার না ছড়িয়েও প্রতিবাদ এবং আন্দোলন চলতে পারে। চলবেও। বহু দূর থেকে রাস্তায় আবালবৃদ্ধ মানুষের ঢল দেখে সেইটুকু আশা করা যায়। তারা সবাই ঐ সব ভাইর্যাল পোস্ট পড়ে বা শুনে পথে নামেন নি, তাদের অনেকেই নেমেছেন কারণ তারা সহ্যের শেষ সীমায়, তিতিবিরক্ত।
এই দীর্ঘ অন্ধকারের মধ্যে একটাই আলোকবর্তিকা। একদম সাধারণ শহুরে মানুষ-ও মিছিলে নামছেন, রাজপথে নামছেন। শাসকের চোখরাঙানি এবং দমন-নিপীড়ন-গুণ্ডাবাহিনী আছে জেনেও। শান্তিপূর্ণ মিছিলের মাঝে দুষ্কৃতী ভিড়ে যাওয়ার আশঙ্কা আছে জেনেও। যে মানুষ সামান্য রাজনৈতিক আলোচনা হলে টেবিল ছেড়ে উঠে পড়তেন কাল অব্দি বা বিরক্ত হতেন, তিনিও রুখে দাঁড়াচ্ছেন। মরিয়া হয়ে। কারণ, এটা মরিয়া হওয়ার-ই সময়।
আমি সেই সবাইকেই আবেদন করতে চাই যে এই রাগটুকু পুষে রেখে দিন। রাত্রি এখনো দীর্ঘ। খুব-ই দীর্ঘ।
---
পুনশ্চঃ আবারও, খবর পেলেই ছড়িয়ে দেওয়ার ইচ্ছে বা তাগিদ আমি বুঝি। আমি কোথায় পড়েছিলাম যে মানুষ কন্সপিরেসি থিওরি ভালোবাসে কারণ তার সেই মুহূর্তে মনে হয় সত্যিই যা "ফ্যাক্ট" বা সত্য - সেটি তার অধিগত কিন্তু বাকি পৃথিবীর নয়, অতএব তার পবিত্র কর্তব্য সেটাকে আড়াল থেকে বের করে সামনে আনা। এটাও মনে করি যে সেই চাহিদার সবটুকু মিথ্যে নয়। কেউ-ই এরকম না ভাবলে পৃথিবীতে একজন-ও হুইসল-ব্লোয়ার থাকতেন না, আর রাষ্ট্রযন্ত্রের শয়তানি আরও সহজ হত।
আমার শুধু দাবি, একটু দু-মিনিট ভেবে, পারলে একটু যাচাই করে পোস্ট করুন।

No comments:

Post a Comment