Posts

Showing posts from May, 2024

সামাজিক সমঝোতা

Image
  "সন্দীপন চট্টোপাধ্যায়ের ডায়রি" বইটি শুরুই হচ্ছে এই ছোট্ট এন্ট্রি-টি দিয়ে। মাঝে মাঝেই হন্টিং সুরের মত, পুরোনো বকেয়া কাজের অপরাধবোধের মত এই একটা লাইন ফিরে ফিরে আসে। মাঝে মাঝেই চারদিকে তাকিয়ে মনে হয় যেন আর মানুষের বিবেক, চেতনা, ভালো-খারাপ বোধ কিচ্ছু নেই, অন্যায়ের দিকে ওঠা আঙ্গুল নেই, সামনে কোনো আয়না নেই। আছে শুধু অনন্ত "সামাজিক সমঝোতা"। এইসব ভাবনা এলেই মনে মনে দাঁত চিপে ভাবি (আসলে প্রার্থনা করি অন্ধকার ভবিষ্যতের দিকে তাকিয়ে) যেন এমন একদিন আমার-ও না আসে যে সমস্ত সামাজিক ও অন্যান্য সমঝোতা-ই আমার বধ্যভূমি হয়, আমার জেলখানা হয়ে যায়। তাতে যদি জীবন বন্ধুহীন ও অসামাজিক হয়ে যায়, যাক। আমাকে এই বিস্ফোরক জিনিষটি পড়িয়েছিল অনির্বাণ। একদিন মেসেঞ্জারে ঠিক এই ছবিটাই পাঠিয়েছিল। সঙ্গে আর কিছু টেক্সট নেই। এইটাই। না সন্দীপন লোক বড়ো ভালো ছিলেন এমন কথা আমি আদৌ ভাবি না। কিন্তু আমি ওঁর লেখার মধ্যে আটকে গেছি। আর 'বেরুনোর দরজা ক্রমশই ভারি হয়ে আসছে' আমি জানি।

গুরুচণ্ডা৯-র তিনটি বই

Image
  বাংলা ভাষায় প্রথম রান্নার বই সম্ভবত ‘পাক রাজেশ্বর’ – সেই উনিশ শতকের কথা। তার কিছু পরেই বিপ্রদাস মুখোপাধ্যায়ের ‘পাক প্রণালী’। তবে খাদ্যাখাদ্যের গল্পের পাকাপোক্ত শেকড় তার-ও অনেক আগে। পুঁথির ভাষায় বললে, সেই চতুর্থ শতকের চন্দ্রকেতুগড়ের ফলকে, অষ্টম শতাব্দীর পাহাড়পুর কিংবা ময়নামতির পোড়ামাটিতে জলশস্য মৎস্যরূপে আকীর্ণ হয়েছেন। মৎস্যমুখী বাঙালি সেই মাটির আঁচড়ে ধরে রেখেছিল তার রোজকার জীবনের একটুকরো মাছ কোটার স্মৃতি। ঐটুকু যেন সে ধরে রাখতে চেয়েছিলো অনাগত প্রজন্মের কাছে একটি শান্ত দুপুরের চিহ্নের মত। জানেন তো নিশ্চয়ই, ঈশ্বরী পাটনীর যাঞ্চা কিন্তু আসলে ‘দুধেভাতে’ নয়, জোড়হাতে চেয়েছিলেন ওনার সন্তান ‘যেন থাকে মাছেভাতে’। স্মৃতিই ক্রমশ বদলে যায় পদচিহ্নে। আমরা সেইসব ইতিহাস অথবা সাহিত্যের হাত ধরেই চলে যাই পূর্বপুরুষদের রসুইঘরে। সেই চর্যাপদের পাতায় ডালের গন্ধ নেই, কিন্তু চন্ডীমঙ্গলের কালকেতু পেট ভরায় জাউ আর ডাল খেয়ে, মঙ্গলকাব্যের কবি বিস্তারে বর্ণনা দেন খুল্লনাকে বাড়িতে আনার পর মাছের বিভিন্ন পদের। মোগল শাসনের সময় “রিয়াজ-উস-সালাতীন” থেকে জানি “ঘিয়ের রান্না খাসি এবং মোরগের মাংস তা...

পুরোনো খবর

Image
একটা বাচ্চা ছেলের ইন্টারভিউ দেখে কুড়ি একুশ বছর আগের একটা খবর মনে পড়ল। মানে ওই কিশোরের জন্মের আগের ঘটনা আর কি, যাকে বলে এনসিয়েন্ট হিস্ট্রি। ভাগ্যিস তখন সোশ্যাল মিডিয়া ছিল না। হুপহাপ করে কিছুই ভাইরাল হতো না। ভাগ্যিস!! আবার বাংলা মিডিয়াম, তাই seduce শুনে কিঞ্চিৎ উত্তেজিত হয়েছিলাম মনে আছে। এখন দেখে মনে হলো, seduction শুধু না, একটু ভালবাসাও ছিল, আবার একুশ বছর ফিরে গেলে, আবারও এইই ছাইপাঁশ নিয়েই পড়তাম! এত বছর পরেও সেই কৈশোরের প্রেম রয়ে গেছে দেখি। আর ওই শার্প ব্রিলিয়ান্ট ছেলেটি, যার নাম সৌম্যদীপ, যাকে আমি চিনি না কিন্তু চিনি — তাকে জানালাম অজস্র শুভেচ্ছা। বড়ো হও বাবা। দেখেও ভালো লাগে।

ব্রেশট

ব্রেশটের একটি দুটি লাইন আমরা বারংবার বলতাম, নাটকের দিনগুলোতে। হেঁকে বলতাম, "আমাদের অন্ধকার দিনগুলিতে গান হবে?"। জানতাম একজন বন্ধু ঠিক উত্তর দেবে, "হ্যাঁ, আমাদের অন্ধকার দিনগুলি নিয়ে গান হবে।" আর এই কবিতাটা কোথাও যেন টুকে রেখেছিলাম। ভাবতাম এই ক্রাইসিসটুকু কারুর কেন নেই? ব্রেশটের সেই বিখ্যাত, বহুব্যবহৃত ও বিপর্যস্ত দুটো লাইন পড়েছিলাম সন্দীপনের কোনো একটি চটি বইয়ের পুস্তানিতে, এখন বিস্মৃত। যে সন্দীপন লিখেছিলেন, তাঁর কাছে শ্রেষ্ঠ কবিতা যেন একটি জ্যামুক্ত তির। যা ক্রমাগত লক্ষ্যের দিকে যেতে যেতে, বারংবার লক্ষ্যভ্রষ্ট হবে, অথচ, কি আশ্চর্য, তবুও সে লক্ষ্যের দিকে যেতেই থাকবে, সে লক্ষ্যের দিকেই যেতে থাকবে। (ঠিক এইটাই বলেননি, কিন্তু এর কাছাকাছিই কিছু একটা।) ব্রেশটের কবিতা সেই তিরের মত। রাজনৈতিক ক্ষমতার পিছু পিছু অতর্কিত আততায়ীর মত সে ধাওয়া করেই যাবে। যতদিন আকাশে সূর্য তারা আছে। আজকে ১০, ওঁর জন্মদিন গেল। আর কদিন পরে ২৭ ফেব্রুয়ারি, রাইখস্ত্যাগে বই পোড়ানোর দিন। তার ঠিক পরের দিন, ২৮, ব্রেশট জার্মানি ত্যাগ করেন। ১৯৩৩ সালে। আশা করি সেই ইতিহাস আর কোনোদিনই ফিরে আসবে না। অবশ্য আশ...

হাঙ্গার আর্টিস্ট

  এই লেখাটি "অপদার্থের আদ্যক্ষর" পত্রিকায় প্রকাশিত। সম্ভব হলে সেই সংখ্যাটি কিনে ফেলুন।   কাফকার “হাঙ্গার আর্টিস্ট” নিয়ে একটি গরুর রচনা (১) “It was impossible to fight this incomprehension, this world of incomprehension.” আশা করছি এই লেখাটা যখন পড়ছেন-ই, বইটা আপনি কিনেই ফেলেছেন বা কিনতে চলেছেন, অর্থাৎ আপনার কোমরের ব্যথা, মর্টগেজের বোঝা ও তামাম ছোটোবেলার ক্ষতের মত এইটাও আপনার অস্থাবর অস্তিত্বের এক কোণে থেকেই যাবে, অর্থাৎ আপনার সেই অর্থে এখন কোনো তাড়া নেই। তা তাড়া যখন নেই-ই, তাহলে অনুরোধটুকু রাখুন, ফ্রানৎজ কাফকার ‘হাঙ্গার আর্টিস্ট’ (কোনো কোনো ইংরেজি অনুবাদে স্টার্ভেশন আর্টিস্ট) গল্পটা ইন্টারনেটে সার্চ করলেই পাবেন, বস্তুতঃ না পাওয়ার উপায় নেই। পড়ে নিন। তাই বলে আবার নেটের বাংলা অনুবাদগুলো পড়ে বসবেন না। সেগুলো মানুষে করেছে না রোবোটে জানি না, কিন্তু যেই করুক, সে এক জঘন্য উদরাময় হয়েছে। পড়ে আসুন যাইহোক, তারপর আমরা না হয় একটা চেয়ার টেনে বসে দুটো-চারটে কথা বলবো এই নিয়ে? কারণ সত্যি বলতে কি, ভালো এক পাত্তর মদ খেতে কেমন, বা সফল অর্গ্যাজ়মের আনন্দ কেমন, সে যেমন আপনি হাজার লাইন লিখ...

মিমেটিক ডিজ়ায়ার

রেনে জিরার্দের কথা লিখি একটু আজকে। ওঁর মিমেটিক ডিজায়ারের তত্ত্ব। ব্যাপারটা এইরকম যে মানুষ কোনো কিছুই যখন "চায়", তখন সেই চাওয়ার মূল কারণ ঐ অভীষ্ট বস্তুটির অন্তর্নিহিত বা ইন্ট্রিনজ়িক ভ্যালু নয়, চাওয়ার মূল কারণ এই যে অন্য লোককেও সে দেখে ঐ এক-ই জিনিষ চাইতে। "Man is the creature who does not know what to desire, and he turns to others in order to make up his mind. We desire what others desire because we imitate their desires." এই যেমন আমরা বাড়ি-গাড়ি-শাড়ি-স্মার্টফোন-ফ্যান্সি ভেকেশন, বা এই রক্তজল করা বালের চাকুরি যাই-ই চাই, সবের-ই মূল কারণ ঐ মিমেটিক ডিজ়ায়ার। জিরার্দের বক্তব্য "all desire is merely an imitation of another's desire!" এই মিমেটিক ডিজ়ায়ারের ফল - দ্বন্দ্ব - দুজন মানুষ (বা দুই দেশ বা দুই দল) হয়তো এক-ই জিনিষ (বা ভূখণ্ড বা লক্ষ্য) চাইছে। এই ত্রিকোণের তিনটি অংশ - সাবজেক্ট - যে নকল করছে, মডেল - যার নকল করছে আর অবজেক্ট - অভীষ্ট। কিন্তু দুজনে যদি শেয়ার না করতে পারে, যেমনটা প্রায় সবসময়েই হয়, তাহলে অবশ্যম্ভাবী ফল সেই নিয়ে সংঘাত। আর সংঘাতের পরের স্টেজ ...