Monday, August 19, 2024

সেলিব্রিটি ও নৈতিক দায়িত্ব

 আমি এই বছর তিনেক আগে, ভারতীয় দলের যাবতীয় ক্রিকেটারদের সমস্বরে ট্যুইট করতে দেখে সবার উপর হেব্বি খচে গিয়ে ক্রিকেট দেখাই বন্ধ করে দিয়েছিলাম। তার আগে একদিন ঐরকম কিসে একটা রেগে গিয়ে বলিউডি ব্লকবাস্টার দেখা ছেড়ে দিয়েছিলাম। এখনো দেখি না।

তখন নিজেকে এই বুঝিয়েছিলাম যে আমার পকেট থেকে যে এপসাইলন বাই টু পরিমাণে রেভিনিউ ঐসব যজ্ঞে যাচ্ছে, সেটা আর না-ই বা গেল। তাতে মহাবিশ্বে কারুর কিস্যু যাবে-আসবে না, সে অবশ্য কিসেই বা যায় আসে? আর এগুলো এমন কিছু জিনিষ নয় যে ছেড়ে দিলাম মানে বিশাল কিছু আত্মত্যাগ হ'ল।
অবশ্য, দু-একজন বন্ধু জিজ্ঞেস করেছিল যে কেন এই ক্রিকেটার বা লেখক বা সেলিব্রিটিদের হায়ার মোরাল বা এথিক্যাল স্ট্যাণ্ডার্ডে ধরা হবে, একজন সাধারণ মানুষের চাইতে? গাঙ্গুলির কাজ ক্রিকেট খেলা, তার কভার ড্রাইভ দেখে হাততালি দিলাম হয়ে গেলো। বা শাহরুখ-খানের কাজ দু-হাত ছড়িয়ে পর্দায় প্যারাবোলা এঁকে দেওয়া, এঁকে দিলেন, হয়ে গেল। আবার তারা কোন ইস্যুতে কী বললেন, বা বললেন না, এই নিয়ে মাথা ঘামানো কেন, মুণ্ডপাত-ই বা করা কেন? এও তো সেই 'ক্যান্সেল কালচার'-এর ই সামান্য মিউটেটেড ভ্যারিয়েন্ট, নয়? অথবা হোয়াটাব্যাউটারি?
আবার এও ঠিক যে একজন সেলিব্রিটির - বা সেলিব্রিটি ছাড়ুন, একটু বেশি ফলোয়ার-ওয়ালা লোকের, একটা টুইট কি একটা ভুলভাল পোস্ট কত ক্ষতি করে দিতে পারে, তার-ও কি কোনো ঠিকঠাক মেজ়ার আছে? নেই। আর আমাদের দেশে সেলিব্রিটিদের নিয়মিত দ্বিতীয় ইনিংস রাজনীতির মাঠে, সেখান থেকে সো-ও-জা ক্যাবিনেট। তারপর শিক্ষা-স্বাস্থ্য-আইন সবেতেই আপনার প্রতিনিধি, অর্থাৎ, আপনার গলার স্বর তিনিই। কাজেই সমালোচনার উর্ধ্বে তিনি নন। পাবলিক ফিগার হওয়ার, জনগণের নয়নের মণি হওয়ার বিনিময় মূল্য ঐটেই। বল্ডুইন বলেছিলেন, you can't risk love, without risking humiliation.
তার উপর আরও জটিলতা, একজন ঠিক কতোটা বড় শিল্পী - সেও একটা বিশাল ফ্যাক্টর। একজন খুব-ই সাদামাটা শিল্পী উনিজির সাথে সেলফি তুললে কি অযোধ্যায় গিয়ে নাচলে যে কারণে রেগে যাই, সেই এক-ই কারণে লতা মঙ্গেশকরের আজীবন সংঘ-যোগাযোগের জন্য রেগেও থাকি, কিন্তু ভুলে যাই। ভাবি এই এতো গান যে মাথায় ঘুরছে সব ফর্ম্যাট করে বের করি কী করে? আরও হাতের কাছেই আছেন কবীর সুমন। রক্তে এমন মিশে গেছেন, যে অতি বদ লোক জেনেও, আর্ট-ভার্সেস-আর্টিস্ট এইসব ভেবেটেবেও - ওঁর গান অবচেতনে বেজেই চলে। অতএব, ঠিক কোন থ্রেশহোল্ড পেরিয়ে আমরা সেলিব্রিটি বা শিল্পীকে ক্ষমাসুন্দর চোখে দেখবো, সেও জানি না।
তো এই সব প্রশ্নের মীমাংসা আমার কাছে নেই, তবে, একটা নিজের মত নিয়ম বানিয়ে নিয়েছি। সেটাও খুব পাকাপোক্ত কিছু নয়। আমি ভাবি যে, যে কোনো ইস্যুতে যা আমাকে খুব-ই আহত বা বিচলিত করে বা নাড়িয়ে দিয়ে যায়, সেই নিয়ে আমার যা বলার আমিই বলবো, কোনো সেলিব্রিটি কিছু বললেন কি না, কী ভাবে বললেন, ক'ছটাক নান্দনিকতা ঢেলে দিলেন তাই দিয়ে তাদের জাজ় করে সময় নষ্ট করবো না। আমার স্ট্যাণ্ড আমাকেই নিতে হবে, ওঁরা নেবেন আর আমি চোখ বুজে শেয়ার করে দেবো ঐটি হচ্ছে না। হ্যাঁ, ভাঁড়ামো চোখে পড়লে খ্যাকখ্যাক করতে পারি এই অব্দি। আবার তারা বা তাদের পি-আর টিম দুম করে ভালো কিছু বলে ফেললেও শিরদাঁড়াফাঁড়া বলে মাথায় তুলে নেত্য করবো না।
কিন্তু, এর উল্টোটা যখন হবে, মানে যখন দেখবো, একজন বিখ্যাত লোক তার সেলেব-স্ট্যাটাস ভাঙিয়ে ঘৃণার চাষে জৈবসার দিচ্ছেন, বা "যতক্ষণ দেহে আছে প্রাণ, প্রাণপণে ছড়াবো জঞ্জাল" বলে ফেক নিউজ় ছড়িয়ে ফ্যাসিজ়মের ছাতার তলায় দাঁড়িয়ে পড়েছেন, তাদের আর এনডোর্স করবো না। এবং তাদের বোকামি ও বজ্জাতি মনে রাখবো।
আর অবশ্যই, বন্ধুদের কাউকে সহসা কোনো সেলিব্রিটিকে নিয়ে গদগদ হতে দেখলে কিঞ্চিৎ বেসুরে বেজে উঠে বলবো ভাই এই সেলেবদের পোঁছা একটু বন্ধ কর ক'দিন। ওদের রাজনৈতিক বোধবুদ্ধি তোর থেকে বেশি এমন কেউ দিব্যি দেয় নি, আর বিখ্যাত লোকের বিবেকবুদ্ধি অদৃশ্য সুতোয় ক্ষমতার সাথে, আদিম পুঁজির স্বার্থের সাথে বাঁধা থাকে। সেইসব সুতোর টান সাংঘাতিক।
সেই এনডেভর সিরিজের কাল্পনিক দুষমণ সেবাস্তিয়ান ফেনিক্স যেমন ডায়লগ ঝেড়েছিলেন,
"Conscience is a negotiable commodity. There are no heroes. There's no white hat. There's no black hat. Only shades of green. Money."

ভুয়ো খবর ছড়াবেন না - ২

 একজনের প্রোফাইল থেকে একটা ছবি ঝেঁপে তাদের অপরাধী বলে দাবী করে একটা মিথ্যা গুজব বানিয়ে ছড়াতে লাগে এক মিনিটের-ও কম, আর সেইটা ভুল প্রমাণ করতে লেগে যায় একাধিক দিন, বা আরও বেশি। আমার উক্তি না, প্রতীক সিনহার, আজকেই ট্যুইট করেছেন একটি প্রতিবেদন শেয়ার করে।

প্রতিবেদনটা অল্ট নিউজ়ের। আর্শিয়ান আলমকে নিয়ে। করেছেন দুজন বাঙালি সাংবাদিক- শিঞ্জিনী মজুমদার আর ঐশানী ভট্টাচার্য। পড়তে পড়তে শিউরে উঠলাম। কতোটা সাঙ্ঘাতিক ঘৃণার চাষবাস করে হিন্দুত্ব-বাহিনীর আইটি সেল, আর সেটার প্রভাব কতোটা ভয়ানক, আমাদের কল্পনার বাইরে।
পড়ে যা বুঝলাম, দিন পাঁচেক আগে, অর্থাৎ ১৫ তারিখ হিন্দুত্ব-নাইট (@HPhobiaWatch) নামে একটা কট্টর দক্ষিণপন্থী হ্যান্ডেল আর্শিয়ানের আর একজনের (গোলাম আজ়ম) ছবি দিয়ে ট্যুইট করেছিলেন। যার বক্তব্য যে এই দুজন "অভিযুক্ত"-কে আড়াল করছে সরকার। সেইটা ভাইরাল হয় মূহূর্তেই। ১০ লাখ ভিউ, হাজার সাতেক রিটুইট। তারপর ঐ হ্যাণ্ডেল ক-পুর নোটিশ খেয়ে সেটা নামাতে না নামাতে ঐ এক-ই জিনিষ আরেক দাগ চড়িয়ে টুইট করেছিলেন আরেক কুখ্যাত রাইট উইং ট্যুইটার পার্সোনা - মধু কিশওয়ার। এইবার শুধু মিথ্যেই নয়, সঙ্গে সাংঘাতিক ইসলামবিদ্বেষী বক্তব্য। সে এমন জঘন্য জিনিষ যে আমি চেষ্টা করলেও অত নোংরা জিনিষ টাইপ করতে পারবো না নিজের হাতে। ওঁকেও কপু নোটিশ ধরিয়েছে কি না, ধরালেও বা উনি আদৌ সেসবে ডরান কি না জানি না। কারণ, সেই ট্যুইট-টাও এখনো দিব্যি ঝুলছে ওঁর প্রোফাইলে। সার্চ করলেই পাবেন, প্রতিবেদনেও স্ক্রিনশট দেওয়া। এই পোস্ট-টা লেখার সময় সেটার ভিউ ২৫০.৪ হাজার।
অল্ট-নিউজ়ের টিম অনেক পরিশ্রম করে খেটেখুটে প্রমাণ জোগাড় করেছে যে আর যাই হোক না কেন ঐ ঘটনার সময় আর্শিয়ান বাড়িতেই ছিলেন। কী করে ভেরিফাই করেছেন সেই বৃত্তান্ত খবরেই পড়ে নিন।
তবে তার আর দৌড় কদ্দূর বলুন? একে তো ইংরেজিতে লেখা, ক'জন পড়বেন? নগণ্য। যারাও বা পড়বেন তারা কি আর টাইম মেশিনে গিয়ে পুরোনো পোস্ট মুছে আসবেন? বা, অন্তত, নিজের বিবেকের কাছে পরিস্কার থাকতে পাবলিক স্পেসে ক্ষমা চাইবেন ঐ ছাত্রটির কাছে? চাইবেন না। কিস্যু করবেন না। অবশ্য চাইলেও কিছুই কি বদলে যেতো? কোন হঠকারিতার মাশুল কি, এসব ভাবতে গেলে আর গোয়েন্দা ফেবুদার রহস্যরোমাঞ্চ মারানো হয় না।
তাই এইসব চলবে। চলতেই থাকবে। চলতে চলতে একদিন দেখা যাবে একজন মানুষের কাছে আর সত্যের কোনো প্রয়োজন থাকবে না, তার অস্তিত্বের শেষ টুকরোটুকুও তখন চলে যাবে সর্বময় কর্তা বা কর্ত্রীর জিম্মায়। আর তখন, ঠিক তখন-ই সে পরিণত হবে একটি আদর্শ ও এফিশিয়েন্ট যন্ত্রে, কারণ তখন সে কটিমাত্র বস্ত্রাবৃত হইয়াও যে কোনো মিথ্যার কাছে সম্পূর্ণ বলিপ্রদত্ত।
এটাও ঠিক আমি বলিনি। বলেছেন হ্যানা আরেণ্ট।
"This constant lying is not aimed at making the people believe a lie, but at ensuring that no one believes anything anymore.
And such a people, deprived of the power to think and judge.. such a people, you can do whatever you want."

May be an image of 1 person, beard and text that says 'ARSHEAN ALAM SOCIAL MEDIA TRIAL: ALT NEWS PROBE FINDS HE WAS AT HOME AT THE TIME OF R G KAR RAPE-MURDER Madhu Purnima Kishwar @madhukishwar the ones guiity of Iti being ALLEGED that these five Geniuses could barbaric rape murder fM M the #RGKarCollege- They reportedily absconding since August The names may explain why there such determined attempt o shield them and hang just ONE man who was tricked into raping her dead body! 1. 2. 3.Dr. 3. Dr. Arsean Alam, 4. 5. alt news'
All reac

Friday, August 16, 2024

ভুয়ো খবর ছড়াবেন না - ১

 অথরেটারিয়ান রেজিমের একটা বিশেষ লক্ষণ সমস্ত পাবলিক ইনস্টিটিউশনেই ঘোগের বাসা বানিয়ে তাদের একে একে নষ্ট করে ফেলা, তাদের বিশ্বাসযোগ্যতা একেবারে শূন্য করে দেওয়া।

এই প্রক্রিয়া চলতে চলতে পুরো সিস্টেম এমন জায়গায় পৌঁছে যায় যে বিচারবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষ-ও আর ভরসা রাখতে পারে না যে পুলিশ বা প্রশাসন বা আইন-আদালতের উপর, বা কোনো সংবাদমাধ্যমের উপর। কারণ সবাই জানে কেউ-ই নিরপেক্ষ নয়, এবং এও সবাই জানে যে সত্যি ভয়ানক হলেই ধামাচাপা দেওয়ার সাঙ্ঘাতিক অপচেষ্টা চলতেই থাকে। চলছেই এবং চলবেই। আপাদমস্তক দুর্নীতিবাজ দলের হাতে ক্ষমতা থাকলে এ তো হবেই।
হ্যাঁ, ফ্যাক্ট-চেকিং এজেন্সি নেই তা নয়, কিন্তু কোটিকে গুটিক, তাদের সাধ্য নেই এই বিশাল হোয়াটস-অ্যাপ আর ফেসবুকের মূহুর্তে ভাইরাল হওয়া মিস-ইনফর্মেশন আটকানো।
আর দোষ কাকেই বা দেব? লোকে তো মানুষের ক্রেডিবিলিটি দেখে বিচার করে খবরের সত্যাসত্য। যিনি ছড়াচ্ছেন তিনি নিজে যদি প্রতিষ্ঠিত পেশাদার মানুষ হন - অথবা নিজেই জার্নালিস্ট হন - লোকে ধরেই নেয় যে সেই মানুষের প্রোফেশনাল ক্রেডিবিলিটি == তার পোস্ট করা খবরের ক্রেডিবিলিটি। "উরেব্বাবা অত বড় লোক, উনি কি আর ফেক ছড়াবেন?"
কিন্তু তারাও ছড়াতেই পারেন, জেনে বা না জেনে, আর ঐ ভেরিফাই করে নিতে নিতে যদি দেরি হয়ে যায়? তাই আগে পোস্ট করে ফেলি, উপরে একটা দায়সারা ডিসক্লেইমার লিখে দেওয়া যাবে না হয়, না হয় পরে ফেক নিউজ় প্রমাণিত হলে পোস্ট ডিলিট, না হলে একটা টুক করে উপরে "আপডেট" লিখে ঝেড়ে ফেলা, অথবা ক্যাজুয়ালি বলে দেওয়া যাবে 'কালকে যা ছড়িয়েছি সব ফেক, আজকে কিন্তু ঘোড়ার মুখের খবর।'
হ্যাঁ, এই সাংঘাতিক সময়ে মাথা ঠাণ্ডা রেখে ফ্যাক্ট-চেক করার দাবি তোলাও হয়তো অযৌক্তিক। তাও। একটু অন্তত ভেবে করুন। দুদিন আগে দেখলাম একজনের ছবি দিয়ে ভার্চুয়াল উইচ-হান্ট চলছে, অনতিবিলম্বে জানা গেলো ওটা ফেক, কিন্তু যারা ছড়িয়েছেন তাদের অ্যাকাউন্টেবিলিটি? নেই। আবার কাল বা পরশু থেকে প্রায় প্রত্যেকটা হোয়াটস্যাপ গ্রুপে একটা অডিও ক্লিপ ঘুরে বেড়াচ্ছে, আর সবাই কার ক্লিপ, সোর্স কি, কিছু না জেনে না ভেবে সেটাকেই দিকে-দিগন্তরে ছড়িয়েই যাচ্ছেন। ঐ ক্লিপের অভিযোগগুলো কি ১০০% ভুল? আমি জানি না, কিন্তু প্রমাণ ছাড়া এত সাঙ্ঘাতিক সব অভিযোগ বাজারে ছেড়ে দেওয়ার আগে ভাবা উচিত বৈকি।
আমার এ-ও বিশ্বাস যে ফেক নিউজ়/ আনভেরিফায়েড অডিও ইত্যাদি দেদার না ছড়িয়েও প্রতিবাদ এবং আন্দোলন চলতে পারে। চলবেও। বহু দূর থেকে রাস্তায় আবালবৃদ্ধ মানুষের ঢল দেখে সেইটুকু আশা করা যায়। তারা সবাই ঐ সব ভাইর্যাল পোস্ট পড়ে বা শুনে পথে নামেন নি, তাদের অনেকেই নেমেছেন কারণ তারা সহ্যের শেষ সীমায়, তিতিবিরক্ত।
এই দীর্ঘ অন্ধকারের মধ্যে একটাই আলোকবর্তিকা। একদম সাধারণ শহুরে মানুষ-ও মিছিলে নামছেন, রাজপথে নামছেন। শাসকের চোখরাঙানি এবং দমন-নিপীড়ন-গুণ্ডাবাহিনী আছে জেনেও। শান্তিপূর্ণ মিছিলের মাঝে দুষ্কৃতী ভিড়ে যাওয়ার আশঙ্কা আছে জেনেও। যে মানুষ সামান্য রাজনৈতিক আলোচনা হলে টেবিল ছেড়ে উঠে পড়তেন কাল অব্দি বা বিরক্ত হতেন, তিনিও রুখে দাঁড়াচ্ছেন। মরিয়া হয়ে। কারণ, এটা মরিয়া হওয়ার-ই সময়।
আমি সেই সবাইকেই আবেদন করতে চাই যে এই রাগটুকু পুষে রেখে দিন। রাত্রি এখনো দীর্ঘ। খুব-ই দীর্ঘ।
---
পুনশ্চঃ আবারও, খবর পেলেই ছড়িয়ে দেওয়ার ইচ্ছে বা তাগিদ আমি বুঝি। আমি কোথায় পড়েছিলাম যে মানুষ কন্সপিরেসি থিওরি ভালোবাসে কারণ তার সেই মুহূর্তে মনে হয় সত্যিই যা "ফ্যাক্ট" বা সত্য - সেটি তার অধিগত কিন্তু বাকি পৃথিবীর নয়, অতএব তার পবিত্র কর্তব্য সেটাকে আড়াল থেকে বের করে সামনে আনা। এটাও মনে করি যে সেই চাহিদার সবটুকু মিথ্যে নয়। কেউ-ই এরকম না ভাবলে পৃথিবীতে একজন-ও হুইসল-ব্লোয়ার থাকতেন না, আর রাষ্ট্রযন্ত্রের শয়তানি আরও সহজ হত।
আমার শুধু দাবি, একটু দু-মিনিট ভেবে, পারলে একটু যাচাই করে পোস্ট করুন।

নাম-পরিচয় সম্পর্কে একটি অনুরোধ

আমি আইনজীবী নই, আইনের ব্যাখ্যা আমার কাজ না, কিন্তু আইনে কি লেখা আছে সেটা সাধারণ মানুষের জন্য বিভিন্ন ওয়েবসাইটে দেওয়া আছে। যেমন ইন্ডিয়াকানুন ডট অর্গ। সে খুঁজতে দুই মিনিট সময় লাগে না। সেই ওয়েবসাইট খুঁজেই এই নিচের কথাগুলো লেখা।
আমাদের দেশের নতুন পিনাল কোডের নাম ভারতীয় ন্যায় সংহিতা, সংক্ষেপে বিএনএস। সেই ন্যায় সংহিতায় খুব স্পষ্ট করে বলা আছে, কিছু কিছু নির্দিষ্ট অপরাধের শিকার হওয়া ব্যক্তির পরিচয় প্রকাশ করা আইনতঃ দণ্ডনীয়। এর সাজা আর্থিক জরিমানা এবং সর্বোচ্চ দুই বছরের জেল। এর দু-একটি ব্যতিক্রম আছে, যদি সেই ভিকটিম বেঁচে না থাকেন, বা যদি সে শিশু হয় বা মানসিকভাবে অসমর্থ (“of unsound mind”), তাহলেও শুধু তার নিকটতম আত্মীয় “রেকগনাইজ়ড অথরাইজ়ড ওয়েলফেয়ার অর্গানাইজ়েশন”কে অনুমতি দিতে পারেন ভিকটিমের পরিচয় প্রকাশ করার। এই “রেকগনাইজ়ড অথরাইজ়ড ওয়েলফেয়ার অর্গে”র সংজ্ঞাও দেওয়া আছে, সহজে বলতে গেলে তাদের সরকারীভাবে স্বীকৃত হতে হবে।
নিজেই পড়ে দেখুন অংশটি। এম্পফ্যাসিস দিয়েছি আমি। আর পুরো ন্যায় সংহিতা পড়তে গেলে এই লিঙ্কঃ https://indiankanoon.org/doc/149679501/
72. Disclosure of identity of victim of certain offences, etc.
(1) *Whoever prints or publishes the name or any matter which may make known the identity of any person against whom an offence under section 64 or section 65 or section 66 or section 67 or section 68 or section 69 or section 70 or section 71 is alleged or found to have been committed* (hereafter in this section referred to as the victim) shall be punished with imprisonment of either description for a term which may extend to two years and shall also be liable to fine.
(2) Nothing in sub-section (1) extends to any printing or publication of the name or any matter which may make known the identity of the victim if such printing or publication is
(a) by or under the order in writing of the officer-in-charge of the police station or the police officer making the investigation into such offence acting in good faith for the purposes of such investigation; or
(b) by, or with the authorisation in writing of, the victim; or
(c) *where the victim is dead* or a child or of unsound mind, by, or with the authorisation in writing of, the *next of kin of the victim*: Provided that no such authorisation shall be given by the next of kin to anybody other than the chairman or the secretary, by whatever name called, of any recognised welfare institution or organisation.
Explanation. - For the purposes of this sub-section, "recognised welfare institution or organisation" means a social welfare institution or organisation recognised in this behalf by the Central Government or the State Government.
এতে লেখা আছে সেকশন ৬৪ থেকে ৭১ অব্দি যে কোনো অপরাধের শিকার হলেই (এমন কি হওয়ার অভিযোগ থাকলেও) এই শাস্তি হতে পারে। সেই নির্দিষ্ট ৬৪ থেকে ৭১ বিভাগগুলি কি কি ন্যায় সংহিতা খুলেই পড়ে নিতে পারেন। যেমন, সেকশন ৬৮ “Sexual intercourse by a person in authority”, সেকশন ৬৯ “Sexual intercourse by employing deceitful means, etc.” আর সেকশন ৭০, “Gang rape.”
এই আইনগুলো যে আইপিসি বা সংহিতায় আছে তার কিন্তু একটা মানবিক এবং বাস্তবিক কারণ আছে। সেটা একটু ভেবে দেখলেই বোঝা যায়, ব্যাখ্যা নিষ্প্রয়োজন।
আর, এই এতকিছু লেখার কারণ, বহু বহু গান-কবিতা-চ্যানেল-ছবিতে দেখছি কোনোকিছুর তোয়াক্কা না করে দেদার লোকে নাম-ধাম লিখেই যাচ্ছে। আমাদের দেশে তো বটেই, প্রতিবেশী দেশেও দেখছি। সবাই যে বদুদ্দেশ্য নিয়ে করছেন এমন না, কিন্তু "ভেবে কাজ করা" তো একটা বিরল গুণ এই উপমহাদেশে – তাই কেউ কিছুই ভেবে দেখেন না। তবে কি না, ন্যায় সংহিতার আওতায় শাস্তি হলে ভারতীয় নাগরিকদের হওয়ার সম্ভাবনা বোধহয় সামান্য হলেও বেশিই হবে।
তাই, আবারও অনুরোধ, আপনাদের প্রতিবাদ থামাবেন না, প্লিজ থামাবেন না, কিন্তু কোথাও নাম-পরিচয় দেখলে সেইসব পোস্টার, ছবি, মিম, গান ইত্যাদি আবেগের বশে শেয়ার করবেন না, নিজে তো লিখবেন-ই না, আর পারলে যারা লিখছেন তাদের-ও সতর্ক করে দিন।
পুনশ্চঃ আমার লেখার কোথাও তথ্যগত ভ্রান্তি বা ইন্টারপ্রিটেশনে ভুল থাকলে ধরিয়ে দিন, শুধরে নেবো।

Saturday, August 10, 2024

পরাজয়ের গ্লানি

 যত দিন যাচ্ছে আস্তে আস্তে একরকমের ডিফিটিজ়ম পেয়ে বসছে, নৈরাশ্যবাদ বা হতাশা নয়, একরকমের দৃঢ় বিশ্বাস যে এই বিশ্রী অন্ধকার সময় থেকে মুক্তি নেই, উত্তরণ নেই। আর-জি-করের ঘটনা দেখে সেটাই আরেকটু চেপে বসলো।

শুধু উত্তরণ নেই তাইই না, আসলে ঠিক কতটা অন্ধকারে দাঁড়িয়ে আছি, তার-ও বোধ নেই। বোধ নেইঁ, তাই বিবেক-ও নেই। নেই কোনো কালেকটিভ কনসায়েন্স - যে সচেতনতা থেকে অতি সাধারণ, অসহায় মানুষ-ও বোঝে যে সে-ও আক্রান্ত। তার ঘর পোড়াও শুধুই সময়ের অপেক্ষা।
আমাদের পড়ে আছে শুধু ব্যাপক সামাজিক অ্যামনেশিয়া, স্মৃতিলোপ। এবং সেটাও চাপিয়েই দেওয়া। এ দোষ ব্যক্তিগত নয়, এও এক বিশ্বজোড়া খেলা।
গতবছর একজন ছাত্রর মৃত্যুর খবর দেখে ভেবেছিলাম, এর কি কোনো বিহিত নেই, এর শাস্তি নেই? তারপর ভেবেছিলাম নাঃ, নিশ্চয়ই কিছু একটা হবে, প্রশাসন 'নড়েচড়ে' বসবেন। বলাই বাহুল্য, কিছুই হয়নি। এ জীবন ফাস্ট ফরোয়ার্ডে বীতশোক হয় ও হবে।
এখনও তাই-ই ভাবছি, কিছু হয়তো হবে? ভাবছি প্রাইভেসি ইত্যাদির চিন্তা চুলোয় যাক, আগে নিরাপত্তা সুরক্ষিত হোক, তাতে গোটা পৃথিবীই নজরাধীন হলে হবে, এমনিও আমরা একটা বিশাল ডিজিট্যাল প্যানঅপ্টিকনের মধ্যেই আছি। আরেকটু থাকলে কিছু এমন ক্ষতি নেই।
তবে, এসব কিস্যু হবে না। কয়েকজন মানুষ হয়তো কয়েকদিন চেঁচিয়ে যাবেন, তারপর অন্য কিছু চলে আসবে, অন্য কোনো আউটরেজের কারণ, অথবা একটা দারুণ সুখবর। হতেই হবে। না হয়ে আর উপায় কী?