Posts

Showing posts from August, 2024

সেলিব্রিটি ও নৈতিক দায়িত্ব

  আমি এই বছর তিনেক আগে, ভারতীয় দলের যাবতীয় ক্রিকেটারদের সমস্বরে ট্যুইট করতে দেখে সবার উপর হেব্বি খচে গিয়ে ক্রিকেট দেখাই বন্ধ করে দিয়েছিলাম। তার আগে একদিন ঐরকম কিসে একটা রেগে গিয়ে বলিউডি ব্লকবাস্টার দেখা ছেড়ে দিয়েছিলাম। এখনো দেখি না। তখন নিজেকে এই বুঝিয়েছিলাম যে আমার পকেট থেকে যে এপসাইলন বাই টু পরিমাণে রেভিনিউ ঐসব যজ্ঞে যাচ্ছে, সেটা আর না-ই বা গেল। তাতে মহাবিশ্বে কারুর কিস্যু যাবে-আসবে না, সে অবশ্য কিসেই বা যায় আসে? আর এগুলো এমন কিছু জিনিষ নয় যে ছেড়ে দিলাম মানে বিশাল কিছু আত্মত্যাগ হ'ল। অবশ্য, দু-একজন বন্ধু জিজ্ঞেস করেছিল যে কেন এই ক্রিকেটার বা লেখক বা সেলিব্রিটিদের হায়ার মোরাল বা এথিক্যাল স্ট্যাণ্ডার্ডে ধরা হবে, একজন সাধারণ মানুষের চাইতে? গাঙ্গুলির কাজ ক্রিকেট খেলা, তার কভার ড্রাইভ দেখে হাততালি দিলাম হয়ে গেলো। বা শাহরুখ-খানের কাজ দু-হাত ছড়িয়ে পর্দায় প্যারাবোলা এঁকে দেওয়া, এঁকে দিলেন, হয়ে গেল। আবার তারা কোন ইস্যুতে কী বললেন, বা বললেন না, এই নিয়ে মাথা ঘামানো কেন, মুণ্ডপাত-ই বা করা কেন? এও তো সেই 'ক্যান্সেল কালচার'-এর ই সামান্য মিউটেটেড ভ্যারিয়েন্ট, নয়? অথবা হোয়াটাব্যাউটারি? আ...

ভুয়ো খবর ছড়াবেন না - ২

Image
  একজনের প্রোফাইল থেকে একটা ছবি ঝেঁপে তাদের অপরাধী বলে দাবী করে একটা মিথ্যা গুজব বানিয়ে ছড়াতে লাগে এক মিনিটের-ও কম, আর সেইটা ভুল প্রমাণ করতে লেগে যায় একাধিক দিন, বা আরও বেশি। আমার উক্তি না, প্রতীক সিনহার, আজকেই ট্যুইট করেছেন একটি প্রতিবেদন শেয়ার করে। প্রতিবেদনটা অল্ট নিউজ়ের। আর্শিয়ান আলমকে নিয়ে। করেছেন দুজন বাঙালি সাংবাদিক- শিঞ্জিনী মজুমদার আর ঐশানী ভট্টাচার্য। পড়তে পড়তে শিউরে উঠলাম। কতোটা সাঙ্ঘাতিক ঘৃণার চাষবাস করে হিন্দুত্ব-বাহিনীর আইটি সেল, আর সেটার প্রভাব কতোটা ভয়ানক, আমাদের কল্পনার বাইরে। পড়ে যা বুঝলাম, দিন পাঁচেক আগে, অর্থাৎ ১৫ তারিখ হিন্দুত্ব-নাইট (@HPhobiaWatch) নামে একটা কট্টর দক্ষিণপন্থী হ্যান্ডেল আর্শিয়ানের আর একজনের (গোলাম আজ়ম) ছবি দিয়ে ট্যুইট করেছিলেন। যার বক্তব্য যে এই দুজন "অভিযুক্ত"-কে আড়াল করছে সরকার। সেইটা ভাইরাল হয় মূহূর্তেই। ১০ লাখ ভিউ, হাজার সাতেক রিটুইট। তারপর ঐ হ্যাণ্ডেল ক-পুর নোটিশ খেয়ে সেটা নামাতে না নামাতে ঐ এক-ই জিনিষ আরেক দাগ চড়িয়ে টুইট করেছিলেন আরেক কুখ্যাত রাইট উইং ট্যুইটার পার্সোনা - মধু কিশওয়ার। এইবার শুধু মিথ্যেই নয়, সঙ্গে সাংঘাতিক ইসলামবিদ্...

ভুয়ো খবর ছড়াবেন না - ১

  অথরেটারিয়ান রেজিমের একটা বিশেষ লক্ষণ সমস্ত পাবলিক ইনস্টিটিউশনেই ঘোগের বাসা বানিয়ে তাদের একে একে নষ্ট করে ফেলা, তাদের বিশ্বাসযোগ্যতা একেবারে শূন্য করে দেওয়া। এই প্রক্রিয়া চলতে চলতে পুরো সিস্টেম এমন জায়গায় পৌঁছে যায় যে বিচারবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষ-ও আর ভরসা রাখতে পারে না যে পুলিশ বা প্রশাসন বা আইন-আদালতের উপর, বা কোনো সংবাদমাধ্যমের উপর। কারণ সবাই জানে কেউ-ই নিরপেক্ষ নয়, এবং এও সবাই জানে যে সত্যি ভয়ানক হলেই ধামাচাপা দেওয়ার সাঙ্ঘাতিক অপচেষ্টা চলতেই থাকে। চলছেই এবং চলবেই। আপাদমস্তক দুর্নীতিবাজ দলের হাতে ক্ষমতা থাকলে এ তো হবেই। হ্যাঁ, ফ্যাক্ট-চেকিং এজেন্সি নেই তা নয়, কিন্তু কোটিকে গুটিক, তাদের সাধ্য নেই এই বিশাল হোয়াটস-অ্যাপ আর ফেসবুকের মূহুর্তে ভাইরাল হওয়া মিস-ইনফর্মেশন আটকানো। আর দোষ কাকেই বা দেব? লোকে তো মানুষের ক্রেডিবিলিটি দেখে বিচার করে খবরের সত্যাসত্য। যিনি ছড়াচ্ছেন তিনি নিজে যদি প্রতিষ্ঠিত পেশাদার মানুষ হন - অথবা নিজেই জার্নালিস্ট হন - লোকে ধরেই নেয় যে সেই মানুষের প্রোফেশনাল ক্রেডিবিলিটি == তার পোস্ট করা খবরের ক্রেডিবিলিটি। "উরেব্বাবা অত বড় লোক, উনি কি আর ফেক ছড়াবেন?" কিন্তু ...

নাম-পরিচয় সম্পর্কে একটি অনুরোধ

আমি আইনজীবী নই, আইনের ব্যাখ্যা আমার কাজ না, কিন্তু আইনে কি লেখা আছে সেটা সাধারণ মানুষের জন্য বিভিন্ন ওয়েবসাইটে দেওয়া আছে। যেমন ইন্ডিয়াকানুন ডট অর্গ। সে খুঁজতে দুই মিনিট সময় লাগে না। সেই ওয়েবসাইট খুঁজেই এই নিচের কথাগুলো লেখা। আমাদের দেশের নতুন পিনাল কোডের নাম ভারতীয় ন্যায় সংহিতা, সংক্ষেপে বিএনএস। সেই ন্যায় সংহিতায় খুব স্পষ্ট করে বলা আছে, কিছু কিছু নির্দিষ্ট অপরাধের শিকার হওয়া ব্যক্তির পরিচয় প্রকাশ করা আইনতঃ দণ্ডনীয়। এর সাজা আর্থিক জরিমানা এবং সর্বোচ্চ দুই বছরের জেল। এর দু-একটি ব্যতিক্রম আছে, যদি সেই ভিকটিম বেঁচে না থাকেন, বা যদি সে শিশু হয় বা মানসিকভাবে অসমর্থ (“of unsound mind”), তাহলেও শুধু তার নিকটতম আত্মীয় “রেকগনাইজ়ড অথরাইজ়ড ওয়েলফেয়ার অর্গানাইজ়েশন”কে অনুমতি দিতে পারেন ভিকটিমের পরিচয় প্রকাশ করার। এই “রেকগনাইজ়ড অথরাইজ়ড ওয়েলফেয়ার অর্গে”র সংজ্ঞাও দেওয়া আছে, সহজে বলতে গেলে তাদের সরকারীভাবে স্বীকৃত হতে হবে। নিজেই পড়ে দেখুন অংশটি। এম্পফ্যাসিস দিয়েছি আমি। আর পুরো ন্যায় সংহিতা পড়তে গেলে এই লিঙ্কঃ https://indiankanoon.org/doc/149679501/ 72. Disclosure of identity of victim of certain off...

পরাজয়ের গ্লানি

  যত দিন যাচ্ছে আস্তে আস্তে একরকমের ডিফিটিজ়ম পেয়ে বসছে, নৈরাশ্যবাদ বা হতাশা নয়, একরকমের দৃঢ় বিশ্বাস যে এই বিশ্রী অন্ধকার সময় থেকে মুক্তি নেই, উত্তরণ নেই। আর-জি-করের ঘটনা দেখে সেটাই আরেকটু চেপে বসলো। শুধু উত্তরণ নেই তাইই না, আসলে ঠিক কতটা অন্ধকারে দাঁড়িয়ে আছি, তার-ও বোধ নেই। বোধ নেইঁ, তাই বিবেক-ও নেই। নেই কোনো কালেকটিভ কনসায়েন্স - যে সচেতনতা থেকে অতি সাধারণ, অসহায় মানুষ-ও বোঝে যে সে-ও আক্রান্ত। তার ঘর পোড়াও শুধুই সময়ের অপেক্ষা। আমাদের পড়ে আছে শুধু ব্যাপক সামাজিক অ্যামনেশিয়া, স্মৃতিলোপ। এবং সেটাও চাপিয়েই দেওয়া। এ দোষ ব্যক্তিগত নয়, এও এক বিশ্বজোড়া খেলা। গতবছর একজন ছাত্রর মৃত্যুর খবর দেখে ভেবেছিলাম, এর কি কোনো বিহিত নেই, এর শাস্তি নেই? তারপর ভেবেছিলাম নাঃ, নিশ্চয়ই কিছু একটা হবে, প্রশাসন 'নড়েচড়ে' বসবেন। বলাই বাহুল্য, কিছুই হয়নি। এ জীবন ফাস্ট ফরোয়ার্ডে বীতশোক হয় ও হবে। এখনও তাই-ই ভাবছি, কিছু হয়তো হবে? ভাবছি প্রাইভেসি ইত্যাদির চিন্তা চুলোয় যাক, আগে নিরাপত্তা সুরক্ষিত হোক, তাতে গোটা পৃথিবীই নজরাধীন হলে হবে, এমনিও আমরা একটা বিশাল ডিজিট্যাল প্যানঅপ্টিকনের মধ্যেই আছি। আরেকটু থাকলে কিছু এ...