Friday, September 20, 2024

ভুয়ো খবর যাচাই করে নিন

 

"There are known knowns; there are things we know we know. We also know there are known unknowns; that is to say we know there are some things we do not know. But there are also unknown unknowns—the ones we don't know we don't know."


ইতিহাসের বিখ্যাত বা কুখ্যাততম উক্তিগুলোর একটি। ডোনাল্ড রামসফেল্ডের। তাও আজকে হঠাৎ মনে হ'ল একদিকে দুর্নীতিতে মোড়া প্রশাসন আরেকদিকে ‘সনসনিখেস’ মিডিয়া আর হোয়াটসঅ্যাপ ইউনিভার্সিটি - এইসবের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় আমরা এখন সেই রামসফেল্ডিয়ান আননোন-এর টেরিটোরিতে চলে গেছি। ভুয়ো খবরের দাপট বাড়তে বাড়তে এমন অবস্থা যে এইটা বললেও অত্যূক্তি হবে না যে একজন মানুষ তার সারাদিনে যা যা শুনছেন, ভাবছেন, যা তাকে আলোড়িত করছে, তার একটা বিরাট অংশ সম্পূর্ণ মনগড়া, ধোঁকার টাটি। আবার এক-ই সঙ্গে যা তার সত্যিই শোনা উচিত, তা আর এসে পৌঁছচ্ছে না এইসব পেরিয়ে। এ যেন সেই ‘অদ্ভুত এক আঁধার’, তাই ‘সকলেই সকলকে আড়চোখে দেখে’।

এই গোটা স্মোক-শো বা ইন্দ্রজালের খ্যালা কিন্তু দুর্ঘটনা না, বরং এটাই উদ্দেশ্য ছিল বিভাজনকামী শক্তির আর রাষ্ট্রযন্ত্রের আর তাদের অনুগামী মিডিয়ার। তাই, লাগাতার একের পর এক কখনো ভুয়ো মিথ্যা খবর ছড়িয়ে ছড়িয়ে একটা এমন জায়গায় নিয়ে যাওয়া যে মানুষ নিজের সাধারণ বুদ্ধিকে, কমন সেন্সকেই, প্রশ্ন করতে শুরু করে দেয়। সত্যি যা-ই হোক, সমস্ত তথ্য আর তাদের পরিবেশন পেঁচিয়ে-পেঁচিয়ে এমন জায়গায় নিয়ে যাওয়া যে তার কাছে সব-ই সম্ভাব্য, প্লজ়িবল। অবিশ্বাস্য লাগুক বা না লাগুক, সব-ই 'হতেই তো পারে', এবং তার উল্টোটা, অর্থাৎ সব-ই তো ভুয়োও হতে পারে। আর তার সঙ্গে বাই ওয়ান গেট ওয়ান ফ্রি-এর মত কী জঘন্য মর্মান্তিক এবং অমানবিক কোন্দল! সেখানে শোকের অবকাশ নেই, সংযমের শিক্ষা নেই, শুধুই চিৎকার। যার গলার জোর যতো বেশি, তার ফ্যাক্ট ততো মজবুত।

মনে রাখা দরকার, এই ভুয়ো খবরের সর্বগ্রাসী ঢেউ শুধু এই একটি আন্দোলনেই সীমাবদ্ধ নয়। একটি দেশেও নয়। পৃথিবীর যে কোনো দেশে যে কোনো সোশ্যাল মিডিয়াতেই ফেক নিউজ়, ফেক প্রোফাইলের অবাধ চারণভূমি। এক্স/টুইটারে “কমিউনিটি নোট” নামক কিছু বালির বাঁধ আছে বটে, তবে সে-ও জনগণের ভরসায়, অনেকে যদি ধরতে পারে তবে মূল খবরের নিচে একটি ছোট্ট চৌকো বাক্স, আর এতই সামান্য যে ওর উপরে ভরসা করার উপায় নেই। টুইটারের বাইরে অন্য কিছুতে, যেমন হোয়াটস-অ্যাপে সেইসবের-ও বালাই নেই।

আসলে, এই ২০২৪-এর মানুষ দিনের একটা বিশাল সময় কাটায় ফোনে, তার খবর, বিনোদন থেকে শুরু করে সামাজিক যোগাযোগ, বিনিময় সবটুকুই ঘটে ফোনে। এবং ইন্টারনেট যথেষ্ট সহজলভ্য। ফলে যে কোনো সামাজিক মাধ্যমের অ্যাপে এতো প্রচণ্ড বেগে তথ্য, ছবি, ভিডিও ঢুকতে থাকে যে, তার সাথে পাল্লা দিয়ে ফ্যাক্ট চেক করা অত্যন্ত দুরূহ ব্যাপার, প্রায় অসম্ভব। খেয়াল করলেই দেখা যায় টিভি-তেও সারাদিন-ই ব্রেকিং নিউজ়, ছটা স্ক্রিনে ছ-জন লোক চ্যাঁচাচ্ছেন, আর সারাক্ষণ-ই হোয়াটস-অ্যাপে ক্রমাগত হয় ফরোয়ার্ডেড মেসেজ, নয় ভিডিও, নয় একগাদা ছবি। এবং তাদের বেশীর ভাগ-ই জ্বালাময়ী, প্রোভোকেটিভ। সেগুলোর মূল উদ্দেশ্য কিন্তু মানুষকে কিছু খবর জানানো বা ‘ইনফর্ম’ করা নয়, মূল উদ্দেশ্য খোঁচা দেওয়া, আঘাত করা স্পর্শকাতর জায়গায়, আর ছড়িয়ে পড়া। সোশ্যাল মিডিয়া বাঁচেই মানুষের যোগাযোগে, অর্থাৎ এই আদান-প্রদান-ই তার অক্সিজেন, তার লাভক্ষতির অঙ্কের আয়ের ঘরের মূল অঙ্ক। তাই যাবতীয় অ্যালগোরিদমের লক্ষ আসলে ঐটিই, কত দ্রুত ছড়িয়ে পড়া যায়, কত সহজে মানুষকে বাধ্য করা যায় নির্বিচারে মেসেজ দিকে-দিগন্তরে ছড়িয়ে দিতে।   

গোদের উপর বিষফোঁড়া, একের পর এক সংবাদ-মাধ্যমের সম্পূর্ণ কাণ্ডজ্ঞানহীন, দায়িত্বহীন কাজ। উদাহরণ - এই কয়েকদিন আগেই খবর বেরিয়েছিল, আরজিকর কাণ্ডের সেই প্রিন্সিপাল সন্দীপ ঘোষের পাশে দাঁড়িয়ে অভিযুক্ত  সঞ্জয় কেক কাটছে। পরে জানা গেলো তিনি অন্য একজন লোক - প্রসূন চ্যাটার্জি। কিন্তু এই ভুয়ো খবর টাইমস নাউ, জ়ি, রিপাব্লিক - সবাই ছেপেছিল। সেই খবর, সেই ছবি নিজেদের টাইমলাইনে পোস্ট করেছিলেন তাবড়, তাবড় সেলিব্রিটি, পাবলিক পার্সোন্যালিটি – সৃজিত মুখার্জি, প্রতীম ডি গুপ্তা ইত্যাদি অনেকেই। সৃজিতবাবুর ফলোয়ার এই আজকের তারিখে ৯০৪,০০০। ভাবুন! ঠিক আছে, সেলিব্রিটিদের না হয় প্রভাব বিশাল কিন্তু কৃতকর্মের দায়ভার শূন্য, কারণ শিল্পসৃষ্টি করতে এতো সত্যিমিথ্যা ভেদাভেদ করা শক্ত, সে না হয় একপ্রকার মেনেই নিলাম, কিন্তু ঐ জ়ি, টাইমস- এরা সবাই তো প্রতিষ্ঠিত মিডিয়া, স্কুলের  হোয়াটস-অ্যাপের চ্যানেল না। তারাও ফেক নিউজ় চেক না করে ছড়িয়ে দিলে আর কাকে দোষ দেবেন। আর দোষ দেবেন-ই বা কার কাছে? অভিযোগ জানানোর যে জায়গা, সেই পুলিশ-ও এই আরজিকর কাণ্ডের সময়কালেই অন্ততঃ দুবার ভুয়ো খবর ছড়িয়ে ধরা পড়ে বিব্রত হয়ে পোস্ট মুছে দিয়েছে। লজ্জার একশেষ!

আরও লজ্জার ব্যাপার এই যে, এই খবরটা যে ভুয়ো সেটা ধরা এমন কিছুই কঠিন ছিলো না। একজন-ও যদি একটা রিভার্স ইমেজ সার্চ করে দেখতো, তাহলেই ধরা যেতো ঐ ছবির উৎস কোথায়? সেটা একজন সাধারণ মানুষ যার ইন্টারনেট যোগাযোগ আছে তিনিই করতে পারেন। কিচ্ছু বিশাল টেক-স্যাভি হতে লাগবে না।

আজকালকার গুগল সার্চ ইঞ্জিন খুব-ই উন্নত। যে কোনো ছবির উপর রাইট ক্লিক করলেই “সার্চ উইথ লেন্সে”-র অপশন দেখায়। সে দিয়ে শুধু খবরের সত্যতা-ই নয়, চাইলে ফুলের ছবির উপর রিভার্স সার্চ করে জেনে নিতে পারবেন সেটি কোন প্রজাতি, কোনো পেইন্টিং ভালো লাগলে লেন্স বলে দেবে কার আঁকা, অন্য ভাষার ডকুমেন্ট হলে অনুবাদ-ও করে দেবে সঙ্গে-সঙ্গে, এমন কি বইয়ের পাতার কি ছাপানো অক্ষরের ছবি তুলে তার মধ্যে থেকে শুধু টেক্সট-টুকু সেঁচে বের করে দিতে পারে আপনাকে এতো উন্নত সেই টুল। এ ছাড়াও, অন্য ওয়েবসাইট/অ্যাপ-ও আছে। গুগলের-ই images.google.com, আরেকটু শক্তিশালী অস্ত্র চাইলে ইন-ভিড (https://chromewebstore.google.com/detail/fake-news-debunker-by-inv/mhccpoafgdgbhnjfhkcmgknndkeenfhe?hl=en&pli=1)। এই শেষোক্ত জিনিষটি “দায়িত্ববান” সাংবাদিক-রা ব্যবহার করেন। মানে সত্যিকারের সাংবাদিক-রা, ইনফ্লুএন্সার-পদপ্রার্থী চিল্লানোসরাসদের ঐসব বালাই নেই।

তবে, রিভার্স ইমেজ সার্চের থেকেও আরও প্রাথমিক স্তরেই বোঝার উপায় “প্যারালাল রিডিং”। সেটা কী জিনিষ? সহজে বললে, যেই দেখবেন এমন কিছু হাতে এসেছে যে দেখেই খুব আঁকুপাঁকু করছে শেয়ার করতে, ছড়িয়ে দিতে দিকে-দিগন্তরে, সঙ্গে সঙ্গে একটু থমকে দাঁড়ান। ঠিক এইটাই তো ফেক-ফ্যাক্টরি চায়। সেনসেশনাল খবর দেখলেই একটু, দু-মিনিট দাঁড়িয়ে যান। মানুষের দৈনন্দিন জীবন কিন্তু আসলে প্রচণ্ড সেনসেশনাল, উত্তেজনাপূর্ণ নয়। খবরটা দুবার-তিনবার পড়ুন, ভাবুন এটা কি কোনোভাবে যাচাই/ভেরিফাই করা সম্ভব? পারলে একাধিক "নির্ভরযোগ্য" জায়গা খুঁজে দেখুন। এই একাধিক জায়গা থেকে খুঁজে দেখাকেই বলে সমান্তরাল পাঠ - প্যারালাল রিডিং। তার মধ্যে "নির্ভরযোগ্য" জায়গা কি, সে ঠিক করার দায়িত্ব-ও অবশ্য পাঠকের-ই, তাও এতে ভুয়ো খবর ধরা পড়ার সম্ভাবনা বেশ ভালোই। আর কিছু এমন মিডিয়া বা সাইট আছে, যাদের কাজ-ই ভুয়ো খবর ধরা, এই যেমন অল্ট-নিউজ় একটা নামকরা প্রতিষ্ঠিত ফেক-বাস্টিং এজেন্সি। সেখানে একবার ঢুঁ মেরে আসা হয়তো মন্দ হবে না।

আর যেটা আরো প্রাথমিক, বা বলা ভালো, সত্যিকারের দরকার সেটা হ'ল ক্রিটিক্যাল থিঙ্কিং। একটু তলিয়ে, গভীরে গিয়ে ভাবা। বেশির ভাগ ভুয়ো খবর-ই কিন্তু অত্যন্ত বিশ্বাসযোগ্য অন্ততঃ একেবারে ভয়ানক অবিশ্বাস্য না। সেই জন্য নিজের বায়াসকেও প্রশ্ন করতে হবে প্রতিনিয়ত। এই যেমন আমার সামান্য বাঁদিকে কান্নিক, আমাকে কেউ যদি বলে বিজেপির প্রোটেস্ট মিছিলে চটুল নাচ হচ্ছে স্টেজে, বিশ্বাস করতে ইচ্ছে হবে। যেমন হয়েছিল গুচ্ছ লোকের। আমার বন্ধুদের-ও কেউ কেউ শেয়ার করেছিলেন। পরে জানা গেলো ঐটা নবদ্বীপের একটা মেলার ভিডিও। এই প্রোটেস্টের সাথে সম্পর্কহীন। কাজেই “এমনটা হতেই তো পারে” ভাবা-ই যথেষ্ট না, আপনার বিশ্বাস করতে ইচ্ছে করছে কি না সেটাও হয়তো আসলে ভুল দিকেই নিয়ে যাচ্ছে, নিজের বায়াস সরিয়ে রেখেই যাচাই করতে হবে প্রত্যেকটি খবর।

আসলে সব ফেক নিউজ-ও এইরকম-ই। এতো সুচারু ভাবে সেগুলো বানানো যে শুনে মনে হবে কী জানি হতেও তো পারে। আজকালকার সমাজে কী-ই না সম্ভব? কিন্তু ঐরকম-ই একটা ফেক নিউজ়ের ফলে গণরোষের শিকার হতে পারেন নির্দোষ কেউ, বা সাঙ্ঘাতিক সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা লেগে যেতে পারে কোথাও। জীবন-মরণের প্রশ্ন। ক্রিটিক্যাল থিংকিং প্রসঙ্গে আরেকটা উদাহরণ দিই। গত বছর অর্থাৎ ২০২৩-এর ঘটনা, একটি ছবি ভাইরাল হয়ে ছড়িয়ে পড়ে সোশ্যাল মিডিয়ায়, তাতে দেখা যাচ্ছে একজন মোটরসাইকেলের পেছনে প্লাস্টিকে মোড়া কিছু একটা নিয়ে যাচ্ছে, আর প্লাস্টিকের ফাঁক দিয়ে একটি মানুষের পা উঁকি দিচ্ছে। কিন্তু এর মধ্যে কোনো রহস্যরোমাঞ্চ সাঙ্ঘাতিক হত্যাকাণ্ড কিস্যু নেই। ছবিটা আসলে কায়রো-র। একটি দোকান থেকে ম্যানিকুইন ডিস-অ্যাসেম্বল করে অর্থাৎ বিভিন্ন অংশ খুলে নিয়ে আরেকটি দোকানে নিয়ে যাওয়ার পথের ছবি। যেটা উঁকি মারছে সেটা ঐ পুতুলের পা। এই ছবিটিই বিজেপির রাইট-উইং আইটি-সেল টুইট করে ভাইরাল করে দেয়, সঙ্গে মেসেজ “উসকা আবদুল সব সে অলগ থে” , আর মূহুর্তের মধ্যে ইন্টারনেট ভরে যায় জঘন্য সব মেসেজে। সবকটার-ই অন্তর্নিহিত উদ্দেশ্য মুসলিম মানুষদের নামে মিথ্যাচার ও বিশ্রী কালিমালেপন। অথচ, এটা দেখেই একজন লোকের মাথায় প্রথম প্রশ্নই আসা উচিত যে কেউ খুন করলে বাইকে চাপিয়ে লাশ নিয়ে গটগটিয়ে রাস্তা দিয়ে যাবে এমন হওয়াটাই তো আশ্চর্যের। দেখি তো এটা ভুয়ো কি না? বিশেষ করে এমন মেসেজ যেখানে চরিত্রহনন করা হচ্ছে একটি সম্প্রদায়ের মানুষদের, আর করা হচ্ছেই একটি সাম্প্রদায়িক সংগঠনের হ্যান্ডল থেকে।

ভেবে দেখুন ঠাণ্ডা মাথায়, আপনি শুরু করেননি গুজব, কিন্তু দুম করে ক্রোধে উন্মত্ত হয়ে শেয়ার করে ফেললে কিন্তু আপনিও সেই বিস্তৃত চক্রান্তের অংশীদার হয়ে গেলেন, চেয়ে বা না চেয়ে। তাই প্রাথমিক প্রতিরোধ, আরো অনেক কিছুর মতই শুরু করতে হবে বাড়িতেই।

হয়তো একদিন এমন পৃথিবী আসবে সভ্যতার বা প্রযুক্তির হাত ধরে যেদিন সামাজিক মাধ্যমের এই দানবের দাপাদাপিতে লাগাম পরাতে পারবো আমরা। হয়তো একদিন সরকার হবে এমন একটি ব্যবস্থা যারা সত্যিই সত্যির দিকেই থাকার চেষ্টা করবে প্রাণপণ আর আমাদের এই প্রতিটি মূহুর্তে প্রতিটি তথ্যকে সন্দেহের চোখে দেখতে হবে না। সহজে বিশ্বাস করে নিতে পারবো আত্মীয়-স্বজন বা বন্ধুদের দলকে, বিখ্যাত লোকেদের কথার দাম থাকবে সামান্য, কোনো প্রতিষ্ঠান মিথ্যা বলবে না সর্বসমক্ষে। কিন্তু আমি সেই আশায় বুক বাঁধতে পারছি না, তাই সবাইকেই অনুরোধ, এই একটু সাবধান হোন, ইন্টারনেট সাবালক হয়ে হাতের বাইরে চলে গেছে, সে এখন এক ওয়েপন অফ মাস ডিস্ট্রাকশন শুধু নয় ডেস্ট্রাকশন-ও বটে, আপনারাও তাকে সামলাতেই না হয় একটু বড়ো হয়ে উঠুন।

পুনশ্চঃ অল্ট-নিউজ়ের পেজে একটি মেথডোলজির পাতা আছে – মেথডোলজি ফর ফ্যাক্ট চেকিং – সত্য যাচাই-এর উপায়সমূহ। নিচে লিংক দিলাম। আগ্রহীরা পড়ে দেখুন।

সূত্রঃ

১) বিজেপির প্রতিবাদ সভায় নাচের ভুয়ো খবর -

https://www.altnews.in/woman-dancing-at-bjps-r-g-kar-protest-no-viral-video-is-from-a-bengal-village-fair/

২) সন্দীপ ঘোষের পাশে দাঁড়িয়ে সঞ্জয় রায়ের কেক কাটার ভুয়ো খবর -

https://www.altnews.in/sanjay-roy-cutting-cake-next-to-ex-principal-sandip-ghosh-no-man-in-viral-photo-is-not-the-r-g-kar-accused/

৩) কায়রোয় ম্যানিকুইন পরিবহণের ছবিকে কেন্দ্র করে দক্ষিণপন্থী আইটি সেলের ছড়ানো ভুয়ো খবর -

https://www.altnews.in/mannequin-carried-on-bike-image-from-cairo-viral-with-communal-spin-in-india/

৪) অল্ট-নিউজ় ফ্যাক্ট চেকিং মেথডোলজ়ি - https://www.altnews.in/methodology-for-fact-checking/



 





ভাষার হিংস্রতা

 

ভাষার হিংস্রতা নিয়ে ভাববার দরকার আছে বৈকি। শব্দের ব্যবহারিক প্রয়োগের সুবিশাল অত্যাচারের ইতিহাস তার সাক্ষী হয়তো অবচেতনেই সেই হিংস্রতা বাসা বেঁধে থাকে আমরা অক্লেশে বলে ফেলি 'অমুক খেলোয়াড় আজ জাত চিনিয়ে দিলেন', 'চায়ে চুধ মিশিয়ে জাত নষ্ট' - সব- বর্ণপরিচয়ের সূক্ষ্ম মোহ আর তার ভেতর থেকে উঁকি দেয় প্রাচীন হিংস্রতা ঠিক যেরকম এখন চলছে প্রতিনিয়ত এগুলি প্রচন্ড প্রহারের মত হিংসা নয়, এগুলি প্রাত্যহিক দোতলা থেকে ছুঁড়ে দেওয়া জঞ্জালের মত, মশার কামড়ের মত ভিকটর ক্লেম্পারের বলেছিলেন

"It's not the big things that are important, but the everyday life of  tyranny, which may be forgotten. A thousand mosquito bites are worse than a blow on the head. I observe, I note, the mosquito bites." 

এইসব অপমান সহস্র মশার কামড়। জ্বলুনি হয়। রাগ হয়। তার থেকেও বড়ো কথা দমবন্ধ লাগে। বারংবার মনে হয়এই কী প্রতিবাদের ভাষ্য না ভায়োলেন্ট স্পিচ? কি শুধু ব্যাঙ্গ না ডমিনেট করার টুল

প্রাজ্ঞ লোকে বলবেন, কৈ না তো। স্লোগান তো আমিও শুনি, আমার তো কানে লাগে না। আমার আপত্তি হয় না "ছোটোলোক" শুনে, "হাওয়াই চটি" শুনে, "টালির চাল" নিয়ে বিদ্রূপ শুনে। আমার কানে লাগে না মহিলা রাজনীতিকদের "আপা", "পিসি", "তাই" বলে সম্বোধন। মনে হয় না, যেগুলি আদতে ছিল স্নেহের সম্পর্ক, স্লোগানে বদলে যায় তাচ্ছিল্যে। তবুও স্বাভাবিক লাগে। লাগবেই। আরে, চটি মানে তো চটি-, পিসি মানে তো অভিধানেই আছে, তাছাড়া উনি তো "ভাইপো"- "পিসি" ইন্ট্রিনজ়িক্যালি শব্দগুলো বাজে না। কিন্তু এইরকম একটা স্নেহের সম্পর্ক-কে রাতদিন ভিলিফাই করলে আমি ব্যক্তিগতভাবে কোথাও একটা বিপন্ন বোধ করি। আমার যেমন একমাত্র কাছের আত্মীয় ছিলেন পিসিই। এবার লোকে বলবে ধুত্তেরি  তো তোর পিসিকে বলেনি। আমি জানি। কিন্তু কেন লোকে এই সম্বোধনগুলো করে সেটা বুঝি। বুঝি এইসব ডাক ভালোবাসার নয়, ভায়োলেন্সের।

হ্যাঁ, ভাষা-হিংস্রতা বাংলা ভাষায় নতুন নয়। পাবলিক ট্রান্সপোর্টে যারা যাতায়াত করেছেন তারা জানেন। ময়দানে খেলা দেখতে যাওয়া লোক জানেন। রাজনৈতিক পরিসরেও নয়। বাংলাদেশের সড়ক নিরাপত্তা আন্দোলনের সময়ের স্লোগান দেখে চমকে উঠেছিলাম মনে পড়ে। রাজপথে হাতে লেখা স্লোগান ‘পুলিশ কোন চ্যাটের বাল’, ‘পাতার নাম পুদিনা পুলিশ তোমায় …’। গতকাল দেখলাম অবিকল প্রতিবিম্ব, অভিনেত্রী দেবলীনা দত্ত গাইছেন, “পুলিশের গালে গালে, চটি মারো তালে তালে।“ তারও কয়েকদিন আগে এক গেরুয়া ছাত্রনেতা পুলিশকে চুড়ি পরতে বলেছিলেন জলকামানের গোলা খেয়ে। আর … আমেরিকা বা পশ্চিম দেশে কী হয় সে প্রসঙ্গ এড়িয়েই গেলাম, কারণ সে তো আমার ভাষা নয়, এবং তার হিংসার ইতিহাস আরও ব্যাপক।
 
কেউ হয়তো বলবেন এইসব পোলিটিক্যাল কারেক্টনেস। এই সব ছিদ্রাণ্বেষণ। এবং তোমাদের তো সবেতেই বড্ডো বাড়াবাড়ি। কেউ বলবেন, ভাষা কি আর সত্যিই হিংস্র? সে কী শারীরিক আঘাতের সমতুলএই প্রসঙ্গে ভিটগেন্সটাইনের ল্যাঙ্গোয়েজ-গেম স্মর্তব্য, যার গোড়ার কথা এই যে শব্দের অর্থ সততই ম্যালিএবল, শেপ-শিফটিং, এবং কনটেক্সট-নির্ভর। অপমানজনক লাগছে কি না বুঝতে গেলে আভিধানিক অর্থ নয়, বুঝতে হবে কনটেক্সট।

 

এবং বুঝতে হবে বিষয়ে ঐকমত্য সম্ভব না। যদি আমি বলি আমার ভয় করে আপনাদের এই রাজনৈতিক বাস্তবতায়, আপনাদের প্রতিবাদের নামে ঐ হিংস্র ভাষায়ও - আপনি হর্গিজ় বলতে পারেন না, নাঃ, সে ভয় অমূলক।  

 
"When Milo Yiannopoulos says “feminism is cancer,” for instance, it may be heard differently by Haidt and Lukianoff than by Lisa Feldman Barrett. As white men, Haidt and Lukianoff likely don’t have a reference point to understand what it feels like for a woman to hear these words. They won’t cut the same way.

For people who occupy positions of power in society, there may not be a single word they would ever consider violence. But that doesn’t mean other people can’t legitimately experience some speech as violence."

Wittgenstein on Whether Speech Is Violence, When is speech violence? Sometimes. It depends. That’s a complicated question. (https://daily.jstor.org/wittgenstein-whether-speech-violence/)