Posts

Showing posts from 2021

প্রোফেশনাল ডেভেলপমেন্ট

গতকাল একটা প্রোফেশনাল ডেভেলপমেন্ট ওয়ার্কশপে গেছিলাম। যাওয়ার যে আদৌ ইচ্ছে ছিলো এমন না, কিন্তু আগের বছর একটাতেও যাইনি বলে এই বছর একরকম কান মুলেই আর কি ...   তা যাই হোক, গিয়ে দেখি একজন বেশ ডাঁটোয়াল ও সফল প্রোফেসর-গোছের লোক বিবিধ জ্ঞান দিচ্ছেন কী ভাবে রিসার্চ করতে হয়, কী ভাবে গ্রান্ট প্রোপোজালে ঝুড়ি ঝুড়ি ঢপ দিতে হয় ইত্যাদি। 'দশে মিলি করি হ্যাজ, হারি-জিতি নাড়ি ল্যাজ' টাইপের বাণী শুনছি। শুনতে শুনতে উদাস হয়ে ফলস সিলিং-এ নেই-কড়িকাঠ গুনছিলাম, একটুস তন্দ্রা এসে গেছিলো। এমন সময়ে হঠাৎ দেখি বক্তা আমার দিকে-ই তাকিয়ে বেশ জোরের সঙ্গে বললেন, "we should not focus too much on Netflix!" এদিকে আমি আগের দিন-ই একটা অতি খাজা সিনেমা দেখে রাত করে ঘুমিয়েছি। সবেগে মাথা নেড়ে বললাম, তা বটেই তো, ইট ইজ সাচ আ ওয়েস্টেজ অফ টাইম, তবে কি না খুব-ই টেম্পটিং। মাস্কের আড়ালে বক্তার মুখে বোধহয় হাসি ফুটে উঠলো, "ইয়েস মাই ফ্রেণ্ড!" বলে তিনি আরো মিনিট পাঁচেক নেটফ্লিক্সের কুফল নিয়ে বলতে লাগলেন, কেন আমাদের চিরতরে বর্জন করা উচিৎ ইত্যাদি ... আমি একটু অবাক-ই হচ্ছিলাম যে এতো রাগ কেনো রে বাবা। শেষের দিকে বুঝলাম...

এভাবেও ফিরে আসা যায়?

একটাই কবিতা, জীবনে কতোবার কতরকম ভাবে ফিরে আসে! দ্য লাস্ট রাইড টুগেদার, ব্রাউনিং-এর, যেমন। ছোটোবেলায় পড়েছি বলে মনে হয় না কারণ অতো ইংরেজি পড়ার ক্ষমতা ছিলো না। মনে হয় কলেজে পড়ার সময় একটা অ্যান্থলজি কিনেছিলাম, সবুজ মলাটের পেপারব্যাক বই, প্রথম পাতায় ঝর্ণা কলমে আবছা নাম সই করা। ভেতরে অনেক লোকের বিখ্যাত বিখ্যাত কবিতা আর মার্জিনে ছোটো ছোটো নোট - সিলেবাসের, সাজেশনের আঁচড়। তার মধ্যে একটা কবিতা ছিলো 'দ্য লাস্ট রাইড টুগেদার'। পড়ার পরেই ইচ্ছে হয়েছিলো একজন কলকাতা ছেড়ে পাকাপাকি চলে যাওয়ার আগে তাকে শোনাবো। জিভের জড়তা, বাংলা মিডিয়ামের শ-ষ-স-হ হোঁচট ও খানাখন্দের ভয়ে আর শোনানো হয়নি। A. E. Housman-এর একটা লাইন বলে এসেছিলাম। 'The wind and I, we both were there, But neither long abode; Now through the friendless world we fare And sigh upon the road.' তার প্রায় বছর বারো কি তেরো পরে একদিন বাঙালনামা পড়তে গিয়ে দেখি ও'মা আমি একা নই। তপনবাবুও ভেবেছিলেন, এবং পারেননি, এবং আর সবাইকে ছেড়ে হাক্সলি লিখে এসেছিলেন। সে-ও এক অদ্ভুত মেলানকলিক বর্ণনা, পড়তে পড়তে একটা দীর্ঘশ্বাস চেপে যেতে হয়। 'বাঙাল...

“ফসল কাটা মাঠে এখন সদ্যকৃত বধ্যভূমি”

Image
আমি লোরকা-র কথা প্রথম পড়ি শুভঙ্করকে লেখা নন্দিনীর চিঠি-তে , “ নতুন কবিতা কিছু লিখেছো কি ? লোরকা পড়ছো খুব ? বেশি পড়ো , কম সিগারেট খাও” (কথোপকথন ৩, পূর্ণেন্দু পত্রী)   দিন-কয়েক পরে একটা বাংলায় অনুবাদ করা লোরকার কবিতার বই পেয়ে যাই কলেজ স্ট্রীটে , পড়তে পড়তে প্রেমে পড়ে যাই নিজের অজান্তে। কি অদ্ভুত ম্যাজিকে লোরকার কবিতার প্রাগৈতিহাসিক আন্দালুশিয়া হয়ে যায় আমার-ই ভিটেমাটি   -   তার বইয়ের পাতায় কান পাতলে শুনতে পাই   ফ্ল্যামেঙ্কো - র ছন্দ , টের পাই অবিকল শরীরের উত্তাপ আর মরা বাতাসে ফিসফাস করে বয়ে চলে ‘সনেটস অফ ডার্ক লভ’-এর অস্ফুট গোঙানি আর জমে-থাকা চিৎকার ... অনন্ত কবরের তলা থেকে উঠে আসা দেহহীন প্রেতশব্দের মতো। মাত্র আটত্রিশ বছর বয়সে , ১৯শে আগস্ট , ১৯৩৬ , খুন করা হয় লোরকা-কে , গ্রানাডা-র তখতে তখন উগ্র-জাতীয়তাবাদী ফ্যালাঞ্জিস্ট গুন্ডাবাহিনী , আর লোরকা ? সোশ্যালিস্ট , স্পষ্টবক্তা , মুক্তচিন্তক , তায় সমকামী , ফ্যাসিস্ত রাষ্ট্রযন্ত্রের সাক্ষাৎ জুজু। তিরিশ-তিরিশটা বছর লেগেছিলো (১৯৭০ অব্দি) শুধু এই কথাটুকু প্রকাশ্যে স্বীকার করতে যে লোরকার খুন ব্যক্তিগত দ্বন্দ্বে-ঈর্ষায় নয় , বরং হয়েছ...

অসংখ্য সমুদ্র বয়ে যাচ্ছে

Image
‘‘অসংখ্য সমুদ্র বয়ে যাচ্ছে। সময়ের স্রোত এবং কেই বা বিখ্যাত হতে চায় এবং অটোগ্রাফ সই করতে চায় সিনেমা স্টারদের মত… …আমি জানতে চাই আমার মৃত্যুর পর কী হবে…’ (অ্যালেন গীনসবার্গ, ‘ছবির দেশে কবিতার দেশে’ বই থেকে।) “আজ সন্ধ্যায় ডরথি নর্মানের পার্টিতে অনেকের সঙ্গে আলাপ হলো। প্রথমে উল্লেখ্য অ্যালান গিন্সবার্গ। তোমার মুখে যার নাম শুনেছি, কিন্তু যার লেখা আমি কিছুই পড়িনি। সম্ভ্রান্ত ককটেল-পার্টিতে একটা গলাখোলা লাল শার্ট গায়ে দিয়ে এসেছে (স্পষ্টতই আমার কবিতা পড়েনি); ভারি সুশ্রী দেখতে, আমি দেখামাত্র ভালোবেসে ফেলেছি, ছেলেটিকে দেখে তোমার কথা বড্ড মনে পড়ছিলো। বললে—আমেরিকার পাঁচজন শ্রেষ্ঠ কবি শীঘ্রই ভারতবর্ষ আক্রমণ করতে চলেছে : কেরুয়াক, গিন্সবার্গ, আরো কে-কে! ‘সুসভ্য ভারতীয়দের বিস্মৃত সোমরসে দীক্ষাদান এদের মহান ব্রত। আমি বললুম ‘সোম’ বোধহয় ফরাশি বা ইতালীয় ওয়াইনের মত নিরীহ দ্রাক্ষারস মাত্র ছিলো, কিন্তু হাক্সলি এদের মগজে যে-ভূত ঢুকিয়েছেন তা তাড়ানো আমার মত ওঝার কর্ম নয়। এরা বিবিধ নেশার চর্চা করে থাকে—গাঁজা, সিদ্ধি, চরস ইত্যাদি, তুরীয় অবস্থায় কবিতা লেখে, সাম...

সিম্পসন’স প্যারাডক্স

Image
  ১) একটা ধাঁধার মত ছোট্ট অঙ্ক দিচ্ছি, মন দিয়ে শুনুন। ধরা যাক, আপনার পাড়ায় দুটো ইস্কুল, আদর্শ বিদ্যানিকেতন আর হরিপুর মেমোরিয়াল। দুই স্কুলের খুব রেষারেষি, কে কার থেকে বেশী ভালো সেই নিয়ে বিতণ্ডার শেষ নেই। আপনি আবার এই পাড়ার মোড়ল, ঠিক করলেন, একটু খতিয়ে দেখবেন কোথায় কত নম্বর উঠেছে বোর্ডের পরীক্ষায়। দেখতে গিয়ে যা পেলেন, তা হচ্ছে এই – হরিপুরের ছেলেরাও আদর্শের থেকে গড় নম্বর পেয়েছে বেশী, আবার মেয়েরাও বেশী … ধরা যাক, তাদের গড় নম্বর এই রকম (সব-ই মনগড়া)।   হরিপুর (ছাত্র সংখ্যা) আদর্শ (ছাত্র সংখ্যা) ছেলে ৮৪   (৮০ জন) ৮৫ (২০ জন) মেয়ে ৮০   (২০ জন) ৮১   (৮০ জন)   আপনি এই অব্দি দেখে লিখতে যাচ্ছেন ছেলে-মেয়ে দুই বিভাগেই আদর্শ একটু এগিয়ে, এমন সময় হরিপুরের হেডমাস্টার জিগ্যেস করে বসলেন, আলাদা-আলাদা করে নয়, সব মিলিয়ে কার কত? কী আশ্চর্য কাণ্ড, সব মিলিয়ে দেখলে হরিপুরের গড়ঃ ৮৩.২ আর আদর্শের গড়ঃ ৮১.৮ ! মানে সোজা কথায়, ছেলে-মেয়ে মিশিয়ে দেখলে হরিপুর এগিয়ে, অথচ আলাদা-আলাদা করে আদর্শ...

জাস্ট অ্যানাদার স্নোম্যান

Image
কথাটা হচ্ছিলো কোহেন-কে নিয়ে? সবথেকে প্রিয় গান কোনটি? ফেমাস ব্লু রেনকোট? হ্যালেলুইয়া? সো লং ম্যারিয়ান? ফেয়ারওয়েল ভ্যালেন্টিনা? কোনটা? যদি আজকেই ঠিক একটু পরেই ঢলে পড়ি মৃত্যুর মুখে, শেষবারের মত শুনতে চাইলে শুনবো কোনটা?   আসলে কোহেনের সব-সব গান বড়ো প্রিয়, সব গান-ই আসলে আমার। শ্রীজাত-রই একটা প্রিয়তম লাইন একটু পালটে আমার বলতে ইচ্ছে করে,  "আজ থেকে সব মিথ্যে কথা তোমার হলো, যেমন আমার সব কান্নাই লেনার্ড কোহেন"। তাই একটা বাছা বাতুলতা, তাও ... গানটা হয়তো অনেকের শোনা, তাই কোহেনের গলায় আবৃত্তির ভিডিওটাই দিলাম - সেই ডার্ক কফির মত, বিগত জন্মের প্রেমের মতো, গভীর রাতলাগা কণ্ঠস্বর। কোহেনকে চাক্ষুষ দেখা হলো না এ জন্মে, এ এক বড়ো আক্ষেপ। এক বন্ধুনি যে দেখেছে তাঁকে, বলেছিলো, স্টেজে উঠলেন কোহেন। ষাট বছরের বৃদ্ধ প্রেমিক কোহেন, গলা অল্প কাঁপে উঁচু তারে। কোহেন গাইছেন না, শুধু আস্তে আস্তে আবৃত্তি করছেনঃ “My mirrored twin, my next of kin, I’d know you in my sleep And who but you would take me in, a thousand kisses deep I loved you when you opened like a lily to the heat You see I’m just another ...

লর্ড অফ মিটিং রিভারস, বাসবন্ন

Image
আমাদের অতীতের সিন্দুকে কতকিছু লুকিয়ে আছে, তোরঙ্গে জমে থাকা দস্তাবেজের মতো, তীব্র আলোর ঝলকানির মধ্যে দু-একটি ক্ষীণ অপসৃয়মান বিন্দু, যা চোখে পড়ে না, অথচ এই বিন্দুগুলিই যেন শত-সহস্র বছরের ওপার থেকে অন্ধকারের মধ্যে পথচলার ভরসা দেয় দুঃস্বপ্নতাড়িত মানুষদের। আজকে যে কবির কথা বলবো তাঁর নাম বাসবন্ন (১১০৬-৬৮)। দ্বাদশ-ত্রয়োদশ শতাব্দীতে খুব অল্প সময়ের জন্য মধ্যযুগের ভারতবর্ষের সামাজিক আন্দোলনের পুরোভাগে ছিলেন এই মিস্টিক-সাধু। উত্তর কর্ণাটক-কে (ম্যাঙ্গালোর) কেন্দ্র করে প্রায় শ-তিনেক মাইল জুড়ে ছড়িয়ে পড়েছিলো এক ভক্তি-আন্দোলন, যে আন্দোলনের কেন্দ্রে ছিলো সব-কিছু-মিলিয়ে দেওয়ার একটা দুঃসাহসিক স্বপ্ন – আত্মপরিচয়, জাতি, ধর্ম, লিঙ্গ সব বিলীন হয়ে একজন নিরীশ্বরের সাধনা। তার কবিতার কিছু অনুবাদ পাওয়া যায় রামানুজনের আশ্চর্য সব অনুবাদে, সেই বইটির নাম “স্পিকিং অফ সিভা’ – এই শিব কিন্তু মন্দিরের দেবতা নন, কোনো জাতির ঈশ্বর নন, তাঁর বর্ণনা বাসবন্ন করেছেন, ‘Lord or meeting rivers’, নদীসঙ্গমের প্রভু। কেন এনার কবিতা পড়ছি এখন সে গল্প বড়ো লম্বা, এই পরিসরের যোগ্য নয়, তবু এইটুকু বলা যেতেই পারে যে আজ প্রায় আটশো-নশো বছর পরে, আ...