লর্ড অফ মিটিং রিভারস, বাসবন্ন


আমাদের অতীতের সিন্দুকে কতকিছু লুকিয়ে আছে, তোরঙ্গে জমে থাকা দস্তাবেজের মতো, তীব্র আলোর ঝলকানির মধ্যে দু-একটি ক্ষীণ অপসৃয়মান বিন্দু, যা চোখে পড়ে না, অথচ এই বিন্দুগুলিই যেন শত-সহস্র বছরের ওপার থেকে অন্ধকারের মধ্যে পথচলার ভরসা দেয় দুঃস্বপ্নতাড়িত মানুষদের।


আজকে যে কবির কথা বলবো তাঁর নাম বাসবন্ন (১১০৬-৬৮)। দ্বাদশ-ত্রয়োদশ শতাব্দীতে খুব অল্প সময়ের জন্য মধ্যযুগের ভারতবর্ষের সামাজিক আন্দোলনের পুরোভাগে ছিলেন এই মিস্টিক-সাধু। উত্তর কর্ণাটক-কে (ম্যাঙ্গালোর) কেন্দ্র করে প্রায় শ-তিনেক মাইল জুড়ে ছড়িয়ে পড়েছিলো এক ভক্তি-আন্দোলন, যে আন্দোলনের কেন্দ্রে ছিলো সব-কিছু-মিলিয়ে দেওয়ার একটা দুঃসাহসিক স্বপ্ন – আত্মপরিচয়, জাতি, ধর্ম, লিঙ্গ সব বিলীন হয়ে একজন নিরীশ্বরের সাধনা। তার কবিতার কিছু অনুবাদ পাওয়া যায় রামানুজনের আশ্চর্য সব অনুবাদে, সেই বইটির নাম “স্পিকিং অফ সিভা’ – এই শিব কিন্তু মন্দিরের দেবতা নন, কোনো জাতির ঈশ্বর নন, তাঁর বর্ণনা বাসবন্ন করেছেন, ‘Lord or meeting rivers’, নদীসঙ্গমের প্রভু।

কেন এনার কবিতা পড়ছি এখন সে গল্প বড়ো লম্বা, এই পরিসরের যোগ্য নয়, তবু এইটুকু বলা যেতেই পারে যে আজ প্রায় আটশো-নশো বছর পরে, আরেকবার আমাদের এই লুপ্ত ধারাটির খোঁজ দরকার বোধ করি, প্রথম কবিতাটা পড়া যাক,

'The rich
will make temples for Siva.
what shall I,
a poor man,
do?

My legs are pillars,
the body the shrine,
the head a cupola
of gold,

Listen o lord of the meeting rivers,
things standing will fall,
but the moving ever shall stay.'

শেষ দুই পংক্তি আমাদের চেনা আরেকজন কথা মনে করায়, তাই না? এই স্বর্ণ-আর-দর্পের বুদবুদের আস্ফালনের মাঝে দাঁড়িয়ে সেই দম্ভের দিকে, ঘৃণার দিকে বলতে ইচ্ছে করে, ‘the moving ever shall stay’ !

দ্বিতীয় যে কবিতাটির কথা বলবো, সেটিও আশ্চর্য। নিরাকার, নিরবলম্ব সেই ঈশ্বরের প্রেমে, তার কাছে আত্মসমর্পণের আকুতিতে বাসবন্ন হয়ে যাচ্ছেন যেন অর্ধনারীশ্বর। (এই চেতনাটিও কি চেনা লাগছে না? ফিরে আসবে না এই কথাগুলো অনেক যুগ পরে অন্য কারুর হাত ধরে?)

'I wear these men’s clothes
only for you.
Sometimes I am man,
sometimes I am woman.
O lord of the meeting rivers
I’ll make wars for you
but I’ll be your devotees’ bride.'

আসলে এই সময়ে দাঁড়িয়ে বিশ্বাস করতে কষ্ট হয় দ্বাদশ শতাব্দীর একজন কবি (যিনি মন্ত্রীও ছিলেন) লিখে ফেলেছেন এই সব অগ্নিসম্ভব কবিতা, যেন এক ভালোবাসায়-পুড়ে-যাওয়া মানুষ, যাঁর ঈশ্বর তার অধিপতি, আবার তার প্রেমিক ...

'Don’t make me hear all day
‘Whose man, whose man, whose man is this?”
Let me hear, ‘This man is mine, mine, this man is mine’

পড়ছি খুব, কারণ আর কিছু করার নেই, এবং হাতে সময় কম, আর ভাবছি, where did we go wrong? পথ শুধু হারিয়েছি তাই নয়, বোধ হয় পথটি মুছে গেছে আমাদের কালেক্টিভ কনশাসনেস থেকে।

....
(সঙ্গের ছবিটি ইন্টারনেটে এক বন্ধুর থেকে পাওয়া, রামানুজনের বইটি আমার কাছে নেই।)

Comments

Popular posts from this blog

কামাই

যে ভাষায় আমের নাম ...