Posts

Showing posts from September, 2017

রাঙিয়ে দিয়ে যাও

Image
একটা সময় ছিলো, আমাদের বয়েস তখন একক ছেড়ে দশকের ঘরে পৌঁছয়নি, এই চতুর্থী-পঞ্চমীতেও রাস্তাঘাটে নিরাপদে বেরোনো যেত, এমনকি সামনের রায়পাড়ার মাঠে ষষ্ঠীর দিনও দেখেছি প্যাণ্ডেলের বাঁশে কাপড় পরানো হচ্ছে আর সেই ফাঁক দিয়ে দেখা যাচ্ছে এক চিলতে প্রতিমা, তার হাত খালি আর মুখের সামনে তেরপল টাঙানো ... মা বলতেন, 'এই তো মা একটু ঘুমোচ্ছেন, অনেকটা জার্নি করে এসেছেন কিনা !' আর বেশ মনে পড়ে, জ্ঞান হওয়া ইস্তক সপ্তমীর রাতটা বাঁধা ছিলো হোল-নাইট ঠাকুর দেখা্র জন্যে, আর আমি ষষ্ঠী থেকেই রাতবিরেতে উঠে মাকে ঘুম ভাঙ্গিয়ে জিজ্ঞেস করতাম, 'সপ্তমী কি এসে গেছে?' আমাদের সেই ছোট্টবেলায় পুজো শুরু হতো একটা অদ্ভুত রিচুয়াল দিয়ে, বাবা সকাল হতে না হতেই ঝাঁপিয়ে পড়ে বলতেন এই লাইন টানা খাতায় একশো বার শ্রী শ্রী দুর্গা সহায় লেখো ... সে এক দুঃসহ যাতনা ! তবে এর উদ্দেশ্য কিন্তু হাতের লেখা প্র্যাক্টিশ নয়, সে তো আপনি চাইলেই পি আচার্যের রচনা লিখতে পারতেন, বা আনন্দবাজার থেকে গৌতম ভটচাযের দাদাইস্ট পেইন্টিং-ও অক্লেশে টুকে দিতে পারতেন...  কিন্তু নাহ, ওই একটাই বাক্য, সেই যাত্রাপথের "মা খু চিহল ও পঞ্জম হস্তম" এর মতন ....

১৭-ই সেপ্টেম্বর

Image
আমাদের এই অঙ্কের লাইনে অনেক ওপেন প্রব্লেম আছে, মানে এমন অদ্ভুত অঙ্ক, যার উত্তর আগেই বলা আছে, কিন্তু কি করে অঙ্কটা কষতে হবে কেউ জানে না ... তো আমার জীবনেও ওই লার্ভা থেকে পিউপা হওয়ার মাঝখানটা ভর্তি ছিলো এরম গাদা গাদা প্রশ্নে ... ওপেন প্রবলেম! না না বারমুডা অথবা তজ্জনিত ট্রায়াঙ্গল নয়, ঈস্টার দ্বীপপুঞ্জ বা লক নেসের জলোসরাস-ও নয়, একদম পাতি ছাপোষা শহরতলির বাঙলা মিডিয়াম প্রব্লেম, এই যেমন  ধরুন, ১) আসল দুলাল চন্দ্র ভড় কে? (R) চিহ্ন না পুরো নাম? ২) আসল বেণীমাধব শীল বা আদি-তম শ্রীভৃগুই বা কারা? ৩) আর সন্তান দল প্ল্যাটফর্মের দেওয়ালে দেওয়ালে রাম নারায়ণ রাম লিখতে লিখতেই বা কিকরে জানলেন নেতাজী এবার ল্যাদ কাটিয়ে রিটার্ন টিকিটটা বুক করলেন কবে ? কিন্তু সবথেকে আশ্চর্য লাগতো এইটা দেখে যে বাকি সব পুজো-পার্বণ এদিক-ওদিক গড়াগড়ি খায়, কিন্তু ওই এক বিশ্বকর্মা পুজো নট-নড়নচড়ন, ফি বচ্ছর ১৭-ই সেপ্টেম্বর বাঁধা ... সেই দমদম জংশনের প্ল্যাটফর্মে যেমন সদর্পে ঘোষণা থাকতো, 'সব জ্যোতিষী বারবার, অমৃতলাল একবার!' ... (বলাই বাহুল্য, অমৃতলালের কেরিয়ার নিয়ে সেই থেকে কিছুটা সংশয় এযাবৎ রয়েই গেছে) ... তো এবারের গল্প আম...

“ফসল কাটা মাঠে এখন সদ্যকৃত বধ্যভূমি”

আমি লোরকা-র কথা প্রথম পড়ি শুভঙ্করকে লেখা নন্দিনীর চিঠি-তে, “নতুন কবিতা কিছু লিখেছো কি? লোরকা পড়ছো খুব? বেশি পড়ো, কম সিগারেট খাও” ... (কথোপকথন ৩) দিন-কয়েক পরে একটা বাংলায় অনুবাদ করা বই পেয়ে যাই কলেজ স্ট্রীটে, পড়তে পড়তে প্রেমে পড়ে যাই নিজের অজান্তে – কি অদ্ভুত ম্যাজিকে লোরকার কবিতার প্রাগৈতিহাসিক আন্দালুশিয়া হয়ে যায় আমার-ই ভিটেমাটি - তার বইয়ের পাতায় কান পাতলে শুনতে পাই ফ্ল্যামেঙ্কো - র ছন্দ, টের পাই অবিকল শরীরের উত্তাপ আর মরা বাতাসে ফিসফাস করে বয়ে চলে ‘সনেটস অফ ডার্ক লভ’-এর অস্ফুট গোঙানি আর জমে-থাকা চিৎকার ... অনন্ত কুয়োর তলা থেকে উঠে আসা শব্দের মতো। মাত্র আটত্রিশ বছর বয়সে, ১৯শে আগস্ট, ১৯৩৬, খুন করা হয় লোরকা-কে, গ্রানাডা-র তখতে তখন উগ্র-জাতীয়তাবাদী ফ্যালাঞ্জিস্ট গুন্ডাবাহিনী, আর লোরকা? সোশ্যালিস্ট, স্পষ্টবক্তা, মুক্তচিন্তক, তায় সমকামী, ফ্যাসিস্ত রাষ্ট্রযন্ত্রের সাক্ষাৎ জুজু [১] তিরিশ-তিরিশটা বছর লেগেছিলো (১৯৭০ অব্দি [২]) শুধু এই কথাটুকু প্রকাশ্যে স্বীকার করতে যে লোরকার খুন ব্যক্তিগত দ্বন্দ্বে-ঈর্ষায় নয়, হয়েছিলো একটি রাষ্ট্রশক্তির হাতে – তাঁর বধ্যভূমি আজ-ও নিশানাহীন ......