Posts

Showing posts from 2017

না-মানুষী ছানাপোনা

Image
ঈশ্বরের ন-লক্ষ কোটি নামের মতন আমারও ন-লক্ষ কোটি অ্যাকাউন্ট আর কাছাকাছি সংখ্যার পাসওয়ার্ড আছে, তো কাল সকালে সেরকম একটা গোলমেলে পাসওয়ার্ড খুঁড়ে বের করতে গিয়ে দেখি সিক্রেট কোশ্চেন উত্তর দিতে বলছে, মনে মনে ঘাবড়ে গেলাম, গোপন কথাটি কি রয়েছে গোপনে? তারপর দেখলাম প্রশ্নটা খুব-ই সহজ, 'তোমার প্রথম পুষ্যির নাম কি?' ... চট করে উত্তর দিলাম, আর দিতে দিতে মনে অনেক অনেক তুলতুলে নরম স্মৃতি ভেসে উঠলো - এই লেখাটা সেই তুলতুলেদের জন্য !  ... ভজার গল্প ... আমার প্রথম পুষ্যি, একটি মিষ্টি মেনি বেড়াল এবং আমার এক খুব কাছের বন্ধুর ডাকনাম এক-ই, 'ভজা' ! ভজা-কে আমার পাশের বাড়ির দুই দাদা কুড়িয়ে এনেছিলো কাক-চিলের ঠোক্কর খাওয়ার হাত থেকে - তখন অতো হুলো-মেনি জ্ঞান হয়নি, ওইটুকু ছোট্ট, চোখ না মেলা, প্রায় মুমুর্ষু ছানাটাকে কিছু একটা ডাকতে হয়, তাই নাম দেওয়া হলো 'ভজা' ! দিন কয়েকের মধ্যে দেখা গেলো, রোজ চেলপার্ক কালির ড্রপারে করে ফোঁটা ফোঁটা দুধ খাইয়ে খাইয়ে ভজা অল্প অল্প দৌড়ে বেড়াচ্ছে, আর ঘর ঝাঁট দেওয়ার সময় এসে লাফিয়ে ফুলঝাড়ুর ফুল-টিকে প্রবল বিক্রমে আক্রমণ করছে ! আমি এদিক ভজার পুরুষকার দেখে একটা ...

মিমিক্রি

Image
স্টেজে ওঠার সময় একবার টুক করে পকেট থেকে একটা লজেন্স বের করে মুখে দিলো সুমন, একটা জলের বোতল সঙ্গে থাকে, তা-ও গলাটা আর্দ্র না থাকলে পারফরম্যান্সে তার ছাপ টের পাওয়া যায়। এটা অবিশ্যি একটা দক্ষিণ কলকাতার মাঝারি সাইজের একটা বার - শুক্রবার সন্ধ্যে তাই এই সন্ধ্যে সাতটাতেই বেশ লোক হয়েছে। অবশ্য সবাই যে সুমনের স্ট্যান্ড-আপ কমেডির ফার্স্ট শো শুনতে এসেছে তা নয়, অনেকেই দূরে দূরে বসেছে, আর্ধেক উৎসাহ আর আর্ধেক বিরক্তি নিয়ে - তবে স্টেজের সামনে বেশ কয়েকটা চেনামুখ, পুরনো বন্ধুবান্ধব - অফিস কলিগ, উৎসুক হয়ে অপেক্ষা করছে। সত্যি বলতে এই জনা-কয়েক ফ্যানদের উপর ভরসা করেই পাকা চাকরিটা দুম করে ছেড়ে দেওয়ার কথা ভাবছে সুমন । তার সেন্স অব হিউমার মোটামুটি ভালোই, সামান্য কথাকে ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে 'পান' করার অভ্যেসটাও এক্কেবারে ছোট্টবেলার থেকেই আছে, তবে তার আসল দক্ষতা লোকের গলা এবং আদব-কায়দা অর্থাৎ ম্যানারিজম নকল করা। ইস্কুল-কলেজে পড়ার সময় টিফিন বা ক্লাসের মাঝখানে বন্ধুরা ঘিরে ধরতো, 'একবার এস্কেজি-টু করে দ্যাখা, একবার হেডু যে মর্নিং প্রেয়ারে লেকচারটা দেয় সেটা কর !' ... কলেজে বেঞ্চের উপর বসেও একের পর এক প্র...

টুকি !

Image
আমাদের মতন অ্যাকাডেমিকদের জীবনের একটা বড়ো সময় কাটে ক্লাসঘরে, আর ছোটো থেকে বড়ো হওয়া মানে আসলে প্রবল সংগ্রাম করে কোনোমতে টেবিলের একদিক থেকে আরেকদিকে এসে বসা - আজ থেকে দশ বছর আগের এই দিনে হয়তো কোথাও কাঁপতে কাঁপতে পরীক্ষা দিচ্ছিলাম, আজ হয়তো হাই তুলতে তুলতে গার্ড দিতে দিতে ভাবছি সময়টা কোথায় কেটে গেলো, টের-ই পেলুম না ... ভাবতে ভাবতে মনে পড়লো ছোটোবেলার সেই পরীক্ষার দিনগুলোর কথা - জীবনে সব থেকে ভয়ের দুটো শব্দ, হাপিয়ার্লি আর অ্যানুয়াল ... আর মনে পড়লো সেইসব দুর্যোগের দিনে কিছু অসাধারণ সাহস এবং তার চাইতেও অসাধারণ উদ্ভাবনী শক্তির গপ্পো ... বলাই বাহুল্য, সব চরিত্র কাল্পনিক ... এবং সব ঘটনাও কাল্পনিক, আর তা ছাড়া আমার বয়ানে টুকলি বা হলে-ম্যানেজ করার গপ্পো মানে গাভাস্করের টি-টোয়েন্টির কমেন্টারি, মাঠে নামলে কি ছড়াতাম কেউ জানে না, তা-ও ... বলতে কি আছে? ইস্কুলে পড়ার সময়ে দেখতাম পরীক্ষার গার্ড দুই প্রজাতির হয়, প্রথম প্রজাতি মহা ঘোড়েল, হলে টুকলি ধরায় সাক্ষাৎ শার্লক, চোখে কালা চশমা পরে টহল দেন যাতে কার উপর শনি দৃষ্টি পড়ছে বোঝা দায় হয়, হিসু করতে গেলে পিছু নিয়ে টয়লেট অব্দিও যেতে থামেন না, আর ধরা পড়লে হয়...

রাঙিয়ে দিয়ে যাও

Image
একটা সময় ছিলো, আমাদের বয়েস তখন একক ছেড়ে দশকের ঘরে পৌঁছয়নি, এই চতুর্থী-পঞ্চমীতেও রাস্তাঘাটে নিরাপদে বেরোনো যেত, এমনকি সামনের রায়পাড়ার মাঠে ষষ্ঠীর দিনও দেখেছি প্যাণ্ডেলের বাঁশে কাপড় পরানো হচ্ছে আর সেই ফাঁক দিয়ে দেখা যাচ্ছে এক চিলতে প্রতিমা, তার হাত খালি আর মুখের সামনে তেরপল টাঙানো ... মা বলতেন, 'এই তো মা একটু ঘুমোচ্ছেন, অনেকটা জার্নি করে এসেছেন কিনা !' আর বেশ মনে পড়ে, জ্ঞান হওয়া ইস্তক সপ্তমীর রাতটা বাঁধা ছিলো হোল-নাইট ঠাকুর দেখা্র জন্যে, আর আমি ষষ্ঠী থেকেই রাতবিরেতে উঠে মাকে ঘুম ভাঙ্গিয়ে জিজ্ঞেস করতাম, 'সপ্তমী কি এসে গেছে?' আমাদের সেই ছোট্টবেলায় পুজো শুরু হতো একটা অদ্ভুত রিচুয়াল দিয়ে, বাবা সকাল হতে না হতেই ঝাঁপিয়ে পড়ে বলতেন এই লাইন টানা খাতায় একশো বার শ্রী শ্রী দুর্গা সহায় লেখো ... সে এক দুঃসহ যাতনা ! তবে এর উদ্দেশ্য কিন্তু হাতের লেখা প্র্যাক্টিশ নয়, সে তো আপনি চাইলেই পি আচার্যের রচনা লিখতে পারতেন, বা আনন্দবাজার থেকে গৌতম ভটচাযের দাদাইস্ট পেইন্টিং-ও অক্লেশে টুকে দিতে পারতেন...  কিন্তু নাহ, ওই একটাই বাক্য, সেই যাত্রাপথের "মা খু চিহল ও পঞ্জম হস্তম" এর মতন ....

১৭-ই সেপ্টেম্বর

Image
আমাদের এই অঙ্কের লাইনে অনেক ওপেন প্রব্লেম আছে, মানে এমন অদ্ভুত অঙ্ক, যার উত্তর আগেই বলা আছে, কিন্তু কি করে অঙ্কটা কষতে হবে কেউ জানে না ... তো আমার জীবনেও ওই লার্ভা থেকে পিউপা হওয়ার মাঝখানটা ভর্তি ছিলো এরম গাদা গাদা প্রশ্নে ... ওপেন প্রবলেম! না না বারমুডা অথবা তজ্জনিত ট্রায়াঙ্গল নয়, ঈস্টার দ্বীপপুঞ্জ বা লক নেসের জলোসরাস-ও নয়, একদম পাতি ছাপোষা শহরতলির বাঙলা মিডিয়াম প্রব্লেম, এই যেমন  ধরুন, ১) আসল দুলাল চন্দ্র ভড় কে? (R) চিহ্ন না পুরো নাম? ২) আসল বেণীমাধব শীল বা আদি-তম শ্রীভৃগুই বা কারা? ৩) আর সন্তান দল প্ল্যাটফর্মের দেওয়ালে দেওয়ালে রাম নারায়ণ রাম লিখতে লিখতেই বা কিকরে জানলেন নেতাজী এবার ল্যাদ কাটিয়ে রিটার্ন টিকিটটা বুক করলেন কবে ? কিন্তু সবথেকে আশ্চর্য লাগতো এইটা দেখে যে বাকি সব পুজো-পার্বণ এদিক-ওদিক গড়াগড়ি খায়, কিন্তু ওই এক বিশ্বকর্মা পুজো নট-নড়নচড়ন, ফি বচ্ছর ১৭-ই সেপ্টেম্বর বাঁধা ... সেই দমদম জংশনের প্ল্যাটফর্মে যেমন সদর্পে ঘোষণা থাকতো, 'সব জ্যোতিষী বারবার, অমৃতলাল একবার!' ... (বলাই বাহুল্য, অমৃতলালের কেরিয়ার নিয়ে সেই থেকে কিছুটা সংশয় এযাবৎ রয়েই গেছে) ... তো এবারের গল্প আম...

“ফসল কাটা মাঠে এখন সদ্যকৃত বধ্যভূমি”

আমি লোরকা-র কথা প্রথম পড়ি শুভঙ্করকে লেখা নন্দিনীর চিঠি-তে, “নতুন কবিতা কিছু লিখেছো কি? লোরকা পড়ছো খুব? বেশি পড়ো, কম সিগারেট খাও” ... (কথোপকথন ৩) দিন-কয়েক পরে একটা বাংলায় অনুবাদ করা বই পেয়ে যাই কলেজ স্ট্রীটে, পড়তে পড়তে প্রেমে পড়ে যাই নিজের অজান্তে – কি অদ্ভুত ম্যাজিকে লোরকার কবিতার প্রাগৈতিহাসিক আন্দালুশিয়া হয়ে যায় আমার-ই ভিটেমাটি - তার বইয়ের পাতায় কান পাতলে শুনতে পাই ফ্ল্যামেঙ্কো - র ছন্দ, টের পাই অবিকল শরীরের উত্তাপ আর মরা বাতাসে ফিসফাস করে বয়ে চলে ‘সনেটস অফ ডার্ক লভ’-এর অস্ফুট গোঙানি আর জমে-থাকা চিৎকার ... অনন্ত কুয়োর তলা থেকে উঠে আসা শব্দের মতো। মাত্র আটত্রিশ বছর বয়সে, ১৯শে আগস্ট, ১৯৩৬, খুন করা হয় লোরকা-কে, গ্রানাডা-র তখতে তখন উগ্র-জাতীয়তাবাদী ফ্যালাঞ্জিস্ট গুন্ডাবাহিনী, আর লোরকা? সোশ্যালিস্ট, স্পষ্টবক্তা, মুক্তচিন্তক, তায় সমকামী, ফ্যাসিস্ত রাষ্ট্রযন্ত্রের সাক্ষাৎ জুজু [১] তিরিশ-তিরিশটা বছর লেগেছিলো (১৯৭০ অব্দি [২]) শুধু এই কথাটুকু প্রকাশ্যে স্বীকার করতে যে লোরকার খুন ব্যক্তিগত দ্বন্দ্বে-ঈর্ষায় নয়, হয়েছিলো একটি রাষ্ট্রশক্তির হাতে – তাঁর বধ্যভূমি আজ-ও নিশানাহীন ......

ট্রেনের গল্প

লীলা মজুমদার লিখেছিলেন, গল্প হয় ভূতের, নয় চোরের, নয় বাঘের নয় ট্রেনের ... তা আমার এ ইহজীবনে খাঁচার বাইরে বাঘ দেখার সৌভাগ্য হয়নি, আর শোনা সব বাঘের গল্পেই গরু আছে, কাজেই সেসব এখন মুলতুবি ...  তবে চোর আর ভূত দেখেছি গণ্ডা গন্ডা, আমাদের ওদিকে তো নাইটগার্ড বলে কিছু হয় না, সিঁধকাটা আর স্কন্ধকাটারাই দেখেশুনে রাখে। ওরাই ছাতে মাদুর পেতে ঘুমোয়, রাত্রে পাড়া টহল দেয়, ব্যানার্জীদের রকে বসে আড্ডা মারে, তিনপাত্তি খেলে - তবে হুট করে কাছে গেলেই তারা মিলিয়ে যায়, দু-একটা পোড়া বিড়ির টুকরো আর খালি ঠোঙা উড়ে বেড়ায় মৃদু বাতাসে ... তা এই রকের আড্ডায় যা দারুণ সমস্ত গল্প শুনেছি, বলবো একদিন, একটু রাত্তির করে বেশ জমিয়ে বসে, একটা মোমবাতি জ্বালিয়ে ... তবে উত্তর কলকাতার ভুত তো, ভয়-টয়ের কারবারে নেই, বরং বেশীর ভাগই বেশ লাজুক এবং নিতান্ত ছাপোষা ... এই যেমন এক জেঠুমানুষ ছিলেন পাড়ায়, সাত্ত্বিক প্রকৃতির, মাঝে মাঝেই এসে গাঁটের ব্যাথার জন্য একদাগ আর্ণিকা আর আমাশার জন্যে অ্যালোজ নিয়ে যেতেন। বাবার কাছে শুনেছি জেঠ্যু সাধনোচিত ধামে পাকাপাকি চলে যাবার পরেও মাঝে মাঝে সকালে উদয় হতেন চেম্বারে, বাজারের লঙ্কা থেকে লাউ কেমন আগুন...

রঙ-রুটের বাস

শিকড়-বাকড় প্রায় সব-ই ছিঁড়ে গেছে অনেকদিন হলো, তাও পলিটিক্স আর পপুলেশন বৃদ্ধির বাইরেও এককালে একটু-আধটু খবর রাখতাম, আর কিছু না হোক কবে কি পালা-পার্বণ হচ্ছে ্সেটা ঠিক জেনেই যেতাম - হঠাৎ আজ সকালে ফেসবুক  খুলে জানতে পারলাম দেশজুড়ে দোল হচ্ছে .. শুনেই এই প্যাচপেচে বৃষ্টির দিনে মনটা আরেকটু স্যাঁতসেঁতে হয়ে গেলো ... এ পোড়া দ্যাশে ভাঙ-টাঙ পাওয়ার তো কোনো আশাই নেই, উদ্যমী দেশোয়ালি ভাই-বেরাদরদের দেখা পাওয়াও মির‍্যাকলের সমতূল্য, কাজে এক্কাপ কফি খেয়েই চোখ বুজে কল্পনা করে ফেললাম খানিক। পষ্ট দেখলাম চারদিকে রংজলে ভরা বেলুন ছুটছে কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধের মতন, কিছু হনুমান রঙ মাখা ছেলেপিলে জামা কাপড় ফর্দাফাঁই করে হিংস্র উল্লাসে লাফাচ্ছে - আমার আবার ভায়োলেন্স পোষায় না, তাই মাঠের এককোণে একটা থান ইঁটে মাথা দিয়ে দিব্য নাক ডাকাচ্ছি ... আর পাশে কোনো এক সদ্য প্রেম সেরে ওঠা কিশোর, ভারি দুঃখের সাথে ধানাইপানাই করছে, সিদ্ধিলাভ মনে হচ্ছে আর বেশী দূরে নেই ... অবিশ্যি ছোটোবেলায় দোল ব্যাপারটা আদৌ হোলি ছিলো না আমাদের বাড়িতে, বাবা-মা কচি বয়সেই ঘোষণা করে দিলেন, দোল মানে বড়োজোর গুরুজনদের পায়ে অল্প একটু এবং বিনিময়ে...