Posts

Showing posts from November, 2016

তেজেনবাবুর গল্প

                                                                    <১> তেজেনবাবুর মনমেজাজটা একদম-ই ভালো নেই আজ, এই শীতের সকালে গিন্নির তাড়া খেয়ে যাও বা বাজারে গেলেন, দু-একপিস রোগা ফুলকপির বাচ্চা আর জলডোবা পটল ছাড়া কিছুই পেলেন না, মাছের বাজারে ঢুকে মনে হলো সেদিন বেশী দূরে নেই যে মানুষ ব্যাগভর্তি পয়সা নিয়ে বেরুবে আর পকেটে ভরে বাজার নিয়ে বাড়ি ফিরবে, সামনের মাসে আবার বাবার বাৎসরিক, ভেবেই পেটটা একটু বকমবকম করে উঠলো যেন ! পৌনে একঘন্টা অকারণ দর-দাম করে একজোড়া বিষণ্ণ মাগুরমাছ আর পেয়াঁজকলি নিয়ে বাড়ির চৌকাঠ ডিঙ্গোতেই টের পেলেন টুবাই-টিকলু আবার পড়াশোনা থামিয়ে টিভিটা চালিয়েছে, আর পাশের বাড়ির অবিনাশবাবুও এই সক্কালবেলাই দাঁত মেজে দাদু-গেঞ্জি পরে চলে এসেছেন - চা খেয়ে, টেলিগ্রাফ পড়ে তারপর কালকের ম্যাচ আর কেন্দ্রীয় সরকারের বঞ্চনার বেত্তান্ত নিয়ে ঝাড়া একটি ঘন্টা এখন বরবাদ ... নাঃ, সকালগুলো বড্ড বিরক্তিকর লাগে আজকাল ... ...

নানা রঙের দিনগুলি

Image
শীতকালের ভোরবেলা, ধরুন সাড়ে চারটে কি বড়ো জোর পাঁচটা, আকাশে অন্ধকার একটু একটু করে ফিকে হয়ে আসছে, দু চারটে বাড়িতে আস্তে আস্তে একটা করে আলো যেন জ্বলে উঠেই আবার নিভে গেলো, ছেঁড়া স্বপ্নগুলো জানলা দিয়ে আস্তে আস্তে মিশে যাচ্ছে কলের শব্দ আর বাসনের আওয়াজের সাথে, এমনি সময় ঠাহর করলে দেখবেন, বনহুগলীর ঝিলের পাশে একটা গুমটি ঘরে আলো জ্বলে উঠলো, তাপসদা জল চাপালেন একটা স্টোভে, আর একটায় সসপ্যানে তেলের ছ্যাঁকছোঁক আওয়াজ ... এতো সকালে যখন উঠেই পড়েছিস, ভিতরে চলে আয় ... একটা ফাঁকা জায়গা দেখে এইবেলা বসে পড়, আরেক রাউন্ড স্পেশাল চা এসেই যাবে এক্ষুনি, কোনটা যে কার কেউ জানে না, আর নেভি কাটের প্যাকেট তো অক্ষয় তূণ - খুঁজলে একটা আধটা সিগারেট ঠিক-ই পেয়ে যাবি (ছেড়ে দিয়েছিস? কদিন? নাকি ঘন্টা?) ... চল তোকে নতুন একটা স্ক্রিপ্ট পড়ে শোনাই ! স্পটলাইট তো কবেই নিভে গেছে, এইবেলা স্টেজে উঠলেই বা দোষ কি?  আমাদের বাড়ির ঠিক পিছনেই এক-কালে দু-দুটো বিশাল পানাপুকুর ছিলো, তাদের একটার পাশে পাঁচিল দিয়ে ঘেরা একটা ছোট্ট জমি - আইনি মারপ্যাঁচে ফেঁসে গিয়ে যে দেশলাই বাক্স হতে হতে হয়ে গেলো আমাদের খেলার মাঠ, আ...

কলকাতা - ১০৩ !

এই হাল্কা হাল্কা শীতকালের সকালে যদি মর্নিং ওয়াক করতে করতে চলে যান জামরুলতলায় আমাদের সেই ছোট্টো ভাড়াবাড়িটায়, একদম কোনের ঘরটায় দেওয়ালে দেখতে পাবেন, অল্প-অল্প খসতে থাকা পলেস্তারার পাশ থেকে, শাহরুখ খান আর মধুবালার থেকে নিরাপদ দূরত্বে একটা ঢাউস বাঁধানো ছবি - আস্তে আস্তে ড্যাম্প ধরে ঝাপসা হয়ে যাচ্ছে দিন কে দিন, ছবিটা মাটি থেকে দেখলে মাথামুন্ডু কিস্যু বোঝা যায় না, একটা ছাদে ইউনিফর্ম পরা গুচ্ছের লোকজন, লিট্যার‍্যালি-ই যাকে বলে 'দেড়শো খোকার কান্ড'। অত্যুৎসাহী দর্শকদের জন্য তলায় একটা লিস্টও দেওয়া, 'যে যেখানে দাঁড়িয়ে'। সেইটা না দেখলে বোঝা মুশকিল যে যাঁরা গাঁটের পয়সা খরচা করে এই বিশাল জিনিষটা টাঙ্গিয়ে রেখেছেন, তাঁদের পোলাপান-ও ওই ভিড়ের-ই অংশ ... কোথাও একটা পিছনের দিকে লুকিয়ে আছে, চট করে ধরা মুশকিল ... সত্যি বলতে নরেন্দ্রপুর নিয়ে আমার দশা ওই ছবিটার মতন-ই, ঝাপসা, অন্ধকার, আস্তে আস্তে নামগুলো মুছে যাচ্ছে। তাও, হঠাৎ একটা রোববারের বিকেলে পুরোনো ছবি থেকে ধুলো ঝাড়তে কার না ভালো লাগে বলুন? আজকের এই লেখাটা অনেকটা সঞ্জয় মঞ্জরেকারের কমেন্টারির মতন, ধরুন শচীন একটা দারুণ ইনিংস খেলে যখন ...