Posts

Showing posts from 2016

নিকানো উঠোনে ঝরে রোদ

(বিধিসম্মত সতর্কীকরণঃ এই গল্পের সমস্ত ঘটনা কাল্পনিক, মনগড়া, আজগুবি এটসেটেরা। আসলে বাংলা মিডিয়ামের ছেলেরা আদৌ আমার মতন ল্যাদাভ্যারুস না, বরং অনেক স্মার্ট হয় ! কাউকে কাউকে দেখে, সত্যি বলছি, একচুলও বোঝা যায় না ! ঠিক তেমনি এটা যদিও তর্কের খাতিরে মেনেও নিই যে সব ট্যাঁশই ইংলিশ মিডিয়াম, আপনাকে-আমাকে আর মদন-মামাকে মানতেই হবে যে সব ইংলিশ মিডিয়াম-ই ট্যাঁশ নয়!) আর না মোটেও লজ্জা-টজ্জা পাই না, বরং বিশ্বাস করি বাংলাভাষা আমার উত্তরাধিকার, অস্বস্তিকর জন্মদাগ নয় - তবে আলিমুদ্দিনও একদিনে 'জাঙ্গিয়া পড়েনি, আর কথাঞ্জলিও রাতারাতি লেখা হয়নি ! বাইরে যখন বৃষ্টি ছিলো, তখন অনেক পাতা এদিক ওদিক গাছ-গাছালি, কূট-কচালি, বাপের খ্যাদানি আর প্রেমের প্যাঁদানিতে ভরিয়েছিলাম আমরা ! জলে ভিজে, উইয়ে ধরে সব নষ্ট হয়ে যাওয়ার আগে দেখি যদি একটুও উদ্ধার করা যায় - এই শীতের মিঠেকড়া রোদ্দুরে আচারের বয়ামের পাশে অমনি কয়েকটা পাতা ! যেরকম পেলাম তেমনি রেখে দিলাম পাশাপাশি, কেমন?) তেরোশত নদী শুধায় আমাকে, কোথা থেকে তুমি এলে ? আমি তো এসেছি চর্যাপদের অক্ষরগুলো থেকে ... তো সেটা কত সাল আমার মনে নেই, এটা মনে আছে যে কৃষ্ণমাচারি ...

তেজেনবাবুর গল্প

                                                                    <১> তেজেনবাবুর মনমেজাজটা একদম-ই ভালো নেই আজ, এই শীতের সকালে গিন্নির তাড়া খেয়ে যাও বা বাজারে গেলেন, দু-একপিস রোগা ফুলকপির বাচ্চা আর জলডোবা পটল ছাড়া কিছুই পেলেন না, মাছের বাজারে ঢুকে মনে হলো সেদিন বেশী দূরে নেই যে মানুষ ব্যাগভর্তি পয়সা নিয়ে বেরুবে আর পকেটে ভরে বাজার নিয়ে বাড়ি ফিরবে, সামনের মাসে আবার বাবার বাৎসরিক, ভেবেই পেটটা একটু বকমবকম করে উঠলো যেন ! পৌনে একঘন্টা অকারণ দর-দাম করে একজোড়া বিষণ্ণ মাগুরমাছ আর পেয়াঁজকলি নিয়ে বাড়ির চৌকাঠ ডিঙ্গোতেই টের পেলেন টুবাই-টিকলু আবার পড়াশোনা থামিয়ে টিভিটা চালিয়েছে, আর পাশের বাড়ির অবিনাশবাবুও এই সক্কালবেলাই দাঁত মেজে দাদু-গেঞ্জি পরে চলে এসেছেন - চা খেয়ে, টেলিগ্রাফ পড়ে তারপর কালকের ম্যাচ আর কেন্দ্রীয় সরকারের বঞ্চনার বেত্তান্ত নিয়ে ঝাড়া একটি ঘন্টা এখন বরবাদ ... নাঃ, সকালগুলো বড্ড বিরক্তিকর লাগে আজকাল ... ...

নানা রঙের দিনগুলি

Image
শীতকালের ভোরবেলা, ধরুন সাড়ে চারটে কি বড়ো জোর পাঁচটা, আকাশে অন্ধকার একটু একটু করে ফিকে হয়ে আসছে, দু চারটে বাড়িতে আস্তে আস্তে একটা করে আলো যেন জ্বলে উঠেই আবার নিভে গেলো, ছেঁড়া স্বপ্নগুলো জানলা দিয়ে আস্তে আস্তে মিশে যাচ্ছে কলের শব্দ আর বাসনের আওয়াজের সাথে, এমনি সময় ঠাহর করলে দেখবেন, বনহুগলীর ঝিলের পাশে একটা গুমটি ঘরে আলো জ্বলে উঠলো, তাপসদা জল চাপালেন একটা স্টোভে, আর একটায় সসপ্যানে তেলের ছ্যাঁকছোঁক আওয়াজ ... এতো সকালে যখন উঠেই পড়েছিস, ভিতরে চলে আয় ... একটা ফাঁকা জায়গা দেখে এইবেলা বসে পড়, আরেক রাউন্ড স্পেশাল চা এসেই যাবে এক্ষুনি, কোনটা যে কার কেউ জানে না, আর নেভি কাটের প্যাকেট তো অক্ষয় তূণ - খুঁজলে একটা আধটা সিগারেট ঠিক-ই পেয়ে যাবি (ছেড়ে দিয়েছিস? কদিন? নাকি ঘন্টা?) ... চল তোকে নতুন একটা স্ক্রিপ্ট পড়ে শোনাই ! স্পটলাইট তো কবেই নিভে গেছে, এইবেলা স্টেজে উঠলেই বা দোষ কি?  আমাদের বাড়ির ঠিক পিছনেই এক-কালে দু-দুটো বিশাল পানাপুকুর ছিলো, তাদের একটার পাশে পাঁচিল দিয়ে ঘেরা একটা ছোট্ট জমি - আইনি মারপ্যাঁচে ফেঁসে গিয়ে যে দেশলাই বাক্স হতে হতে হয়ে গেলো আমাদের খেলার মাঠ, আ...

কলকাতা - ১০৩ !

এই হাল্কা হাল্কা শীতকালের সকালে যদি মর্নিং ওয়াক করতে করতে চলে যান জামরুলতলায় আমাদের সেই ছোট্টো ভাড়াবাড়িটায়, একদম কোনের ঘরটায় দেওয়ালে দেখতে পাবেন, অল্প-অল্প খসতে থাকা পলেস্তারার পাশ থেকে, শাহরুখ খান আর মধুবালার থেকে নিরাপদ দূরত্বে একটা ঢাউস বাঁধানো ছবি - আস্তে আস্তে ড্যাম্প ধরে ঝাপসা হয়ে যাচ্ছে দিন কে দিন, ছবিটা মাটি থেকে দেখলে মাথামুন্ডু কিস্যু বোঝা যায় না, একটা ছাদে ইউনিফর্ম পরা গুচ্ছের লোকজন, লিট্যার‍্যালি-ই যাকে বলে 'দেড়শো খোকার কান্ড'। অত্যুৎসাহী দর্শকদের জন্য তলায় একটা লিস্টও দেওয়া, 'যে যেখানে দাঁড়িয়ে'। সেইটা না দেখলে বোঝা মুশকিল যে যাঁরা গাঁটের পয়সা খরচা করে এই বিশাল জিনিষটা টাঙ্গিয়ে রেখেছেন, তাঁদের পোলাপান-ও ওই ভিড়ের-ই অংশ ... কোথাও একটা পিছনের দিকে লুকিয়ে আছে, চট করে ধরা মুশকিল ... সত্যি বলতে নরেন্দ্রপুর নিয়ে আমার দশা ওই ছবিটার মতন-ই, ঝাপসা, অন্ধকার, আস্তে আস্তে নামগুলো মুছে যাচ্ছে। তাও, হঠাৎ একটা রোববারের বিকেলে পুরোনো ছবি থেকে ধুলো ঝাড়তে কার না ভালো লাগে বলুন? আজকের এই লেখাটা অনেকটা সঞ্জয় মঞ্জরেকারের কমেন্টারির মতন, ধরুন শচীন একটা দারুণ ইনিংস খেলে যখন ...

সেই ছিলো এক দিন আমাদের

আমার পুরো ছোটোবেলা জুড়েই বাড়িতে একটা দারুণ ব্ল্যাক-অ্য্যান্ড-হোয়াইট টিভি ছিলো, আপট্রন কোম্পানির - তার সঙ্গী ছিলো ছাদের উপর একটা নড়বড়ে অ্যান্টেনা, তাতে কাক-পায়রা একসাথে বসে পাড়া পাহারা দিতো, আর মা বলতেন বাইরে বাজ চমকালেই দৌড়ে গিয়ে টিভি অফ করে দিতে - বজ্রবিদ্যুত-সহ বৃষ্টি  না হলে ওই অ্য্যান্টেনা বেয়ে টিভিতে ঢুকে পড়বে যে কোনোদিন। সত্যি বলতে কোনোদিনই জানা হয়ে ওঠেনি, সত্যি ওর'ম হয় কিনা, তবে এখনো বাইরে বাজ-টাজ পড়লে অল্প-স্বল্প ভয় করে ওঠে। আপট্রনের কৈবল্যপ্রাপ্তি আর কোনোদিনই হয়নি - শুধুই ডিডি ওয়ান, ডিডি টু আর মাঝে মাঝে টিভির কানটা আরো বেশ কয়েক ঘর মুলে দিলে ঝাপসা করে ডিডি থ্রি। আমাদের পাশের ঘর ভাড়াটেদের আবার বাংলাদেশের লাইন ছিলো, মাঝে মাঝে বিকেলের মলয় বাতাসে দুই অ্য্যান্টেনায় ঠোকাঠুকি লাগলে দিব্যি ঢাকার খবর শুনতে পেতাম, কিস্যু বুঝি আর না বুঝি - বেশ খানিকক্ষণ হাঁ করে দেখে নিতাম, এখন যেমন জুপিটারে নাসার পাঠানো প্রোবের তোলা ছবি দেখি অবাক বিস্ময়ে ... ঠিক মাঝের ঘরে একটা মান্ধাতার আমলের পুরোনো টেবিল ছিলো, তার উপরে রামকৃষ্ণ-সারদা-বিবেকানন্দের ছবি আর দুটো সাদা ফুলদানির মাঝে জ্বলজ্বল করতো আমা...

ইস্কুলের গল্প - ১

(শীর্ষেন্দু একজায়গায় লিখেছিলেন, 'মানুষ মরে গেলে ভুত হয়, আর ভুত মরে মার্বেল হয়', তেমনি আমাদের অনেক মুখচোরা, ভয় পাওয়া ইচ্ছেরা মরে তৈরী হয় এক-একটা মন-কেমন করা বিকেল, আর বিকেলগুলো মরে কী তৈরী হয় জানো?               বাজারের থলে দেখেছো? উল্টোলেই একটা দুটো পেয়াঁজের খোসা কোত্থেকে ঠিক বেরিয়ে পড়বে, সেইরকম কতগুলো জিনিষ কেমন করে যেন আলগা হয়ে লেগে থাকে আমাদের সাথে, কবে এসেছিলো জানিনা, আবার কোনদিন ঝাড়তে গিয়ে বেরিয়েও যাবে, তাই গল্পগুলো এইবেলা লিখে ফেলা ভালো।) আমরা যে স্কুলটায় পড়তাম, তার নাম বরাহনগর মিশন, এবং তার নামকরণ যে সার্থক একথা কেউ কোনোদিন অস্বীকার করবে বলে মনে হয় না, যদিও সরকারী বানানে 'হ'টা বেমালুম উড়ে গেছে কাউকে না বলে - আমাদেরও তাই আর কিছুই হয়ে ওঠা হয় নি শেষমেশ। তা এই বরানগর স্কুলে ওয়ান থেকে টেন অব্দি ক্লাস, প্রথম পাঁচটা ক্লাস ভেতরে প্রাইমারি, শেষের পাঁচটা সামনের খেলার মাঠের পাশেই, বি-আই কোম্পানির সঙ্গে পাচিঁল ভাগাভাগি করে। দিব্যি ছিলো স্কুলটা, পাড়াতেই রাজকুমারী স্কুল, আর রোজ সকালে ঠিক দশটা বাজতে দশে সামনে দিয়ে এক এক করে বাসগুলো যায়, ...