দুপুর সাড়ে বারোটায়
দুপুর সাড়ে বারোটায় আমি একটা সিগারেট ব্রেক নিই। দেশে তখন রাত দশটা। সিগারেটটা
ধরিয়েই বাবাকে ফোন করি। আজকেও যেমন করলাম। “বাবা, টিভির ভলিউমটা কমাও, ঐ বিকট আওয়াজেই
কালা হয়ে যাবে একদিন।“ বাবা পাত্তা দেয় না। খবরের সারাংশ শোনায়। বাঙালি সন্দেহে শ্রমিকের
কপালে জুটলো মার, ট্রেনলাইনে আত্মহত্যা করলেন যুবক, নেতার বাড়িতে অকস্মাৎ আবিষ্কার
এক মধ্যবয়েসী বেশ্যা নাকি উপপত্নী, পরীক্ষা এই বছরেও হ’লো না। পাড়ায় প্রত্যেক বাড়িতে
একটা করে গণেশ পুজো হচ্ছে। আর সেই সঙ্গে হিন্দি গান। হবে না? বাবা বলে, “আর করবেটাই
বা কী? চাকরি নেই, শিক্ষা নেই, ভবিষ্যৎ ঝরঝরে। ধুর ধুর”।
আমি মনে-মনে জ্বলন্ত সিগারেটের আংরা এগিয়ে দিই বাবাকে। গভীর টান দিই দুজনেই।
ফুসফুস কালো হয়ে যাচ্ছে। যাক!
বাবা বলেন, তোমার কাজ কেমন চলছে? বলি, মস্ত একটা প্রাইজ পেলাম জানো। প্রেস্টিজিয়াস,
বলেছে ন্যাশনাল কাউন্সিল। বলি, এ এক বিরাট সম্মান, হাতে গোনা ক’জন পায়, তাও সব বড়ো
বড়ো জায়গার লোক। তাদের পেরিয়েই কী করে যেন পেলাম, জানো? তবে আশা করিনি। নাঃ। একদম-ই
না। বলতে গেলে আরেকটু হলে নমিনেশনটাই জমা দিচ্ছিলাম না। তারপর একদম শেষ মুহূর্তে, কী
জানি কী যেন একটা খ্যাপ চাপলো। তবে, এতে মাইনে-ফাইনে বাড়বে না কিস্যু। নাঃ। এমনিই সম্মান।
ভিসা? না না ভিসার সাথে আর এইসবের কী, ধুর। সে তো কপালের নাম গোপাল, তাড়িয়ে দিলে দেবে।
তবে, এখানকার কাগজে একটা খবর বেরোবে বলছে।
বাবা শুনলেন। কতোটা খুশি হলেন, আদৌ হলেন কি না বুঝতে পারলাম না। অবশ্য বোঝার
কথাও না। এ আসলে আমাদের আশ্চর্য এক খেলা। আমি এক সামান্য শ্রমিক, চাকরি আছে এই ভাগ্য।
আর বাবা? সিগারেটের সাথে বাবাও ক্রমে ছাই হয়ে গেছেন আজ বারো বছর যায় যায়।
(অনির্বাণের তাগাদায় লেখা একটা অণুগল্প। কোন পত্রিকা কী সে সব জানি না। জানলে লিখে দেবো।)
Comments
Post a Comment