বইমেলা ২০২৫

 এলিজাবেথ বিশপ নামে আমার একজন প্রিয় কবি ছিলেন। ছিলেন মানে চলে গেছেন অনেকদিন। আমার জন্মের-ও আগে। আমি চিনেছি বই পড়ে। আর ওঁর লেখা অপূর্ব সব চিঠি পড়ে। রবার্ট লাওয়েলকে লেখা চিঠি, আর অ্যান সেক্সটনকে, বলা বাহুল্য তারা দুজনেও কবি। 

তো সেই এলিজাবেথ বিশপ একসময় অনেকদিন টানা ব্রাজিলে ছিলেন। কেন গেছিলেন মনে নেই, কিন্তু এটা মনে আছে যে ঐ দু সপ্তাহ থাকবো বলে গিয়ে বছর পনেরো থেকে গেছিলেন। যেমন হয় আর কী! সেইখান থেকেই একটা চিঠি লেখেন অ্যান সেক্সটনকে। লিখেছিলেন, এতো দূরে থেকে আমার প্রায়ই মনে হয় যেন দুটো আমি ছিল, একটা আমি ব্রাজিল চলে এসেছে, আরেকটা আমেরিকায় রয়ে গেছে। যে আমিটা আমেরিকায় রয়ে গেছে, সে বোধহয় এতোদিনে আর বেঁচে নেই, সে খবর-ও আমার জানা নেই। 

(লিখেছিলেন, "In fact, living this far away I often feel there were two of me, one who stayed in the U.S.A and one who came to Brazil, and that the one who stayed in the U.S. may well have died without my knowing it.")

আমার মাঝে মাঝেই ঠিক এই কথাটাই মনে হয়, আর ভাবি যে, একটা সেই আমি যে কলকাতায় রয়ে গেছে সে কী করছে কে জানে? হয়তো এদ্দিনে সে শুধুই মন দিয়ে গ্রুপ থিয়েটার করেছে বা খুব চেষ্টা করেছে একটা দারুণ উপন্যাস লেখার, যেরকম আর কোনো শালাই আগে লেখেনি। অথবা সে হয়তো এ সব কিছুই করেনি, বিপুলবেগে নটা-পাঁচটার চাকুরি করেছে আর মাসকাবারি ইএমআই নিয়ে ভেবেছে। ভাস্করের ভাষায় "কালোজিরে-ধনেপাতা নিয়ে হয়তো বা ফেঁসে গেছে" খুব। অথবা সে মুক্তপুরুষের মত পাহাড়-টাহাড় চড়েছে। কে জানে? 

তবে, এইটা আমি নিশ্চিত জানি যে সেই ফেলে-আসা আমিটা বা প্যারালেল পৃথিবীর আমি-টা বইমেলায় গেছে। বন্ধুর সাথে পাল্লা মেরে মাঞ্জা দিয়েই গেছে। বইমেলার আনন্দে সে দুটো বিড়ি আজকে বেশিই খেয়ে ফেলেছে। দুটো না, পাঁচটা। সে যাই হোক, ঐ সব ধরতে নেই। আর এর-ই মধ্যে একদিন গুরুর স্টলে হঠাৎ করে সেই পঁচিশ বছর আগের একজন ক্লাসমেটকে দেখে সে দুম করে একটু ইমোশনাল হয়ে পড়েছে। 

--- 

পুনশ্চ: সঙ্গের ছবিগুলো সংহিতা ও অন্যান্য বন্ধুদের তোলা। ছবিতে নীল টিশার্ট পরে লাল ব্যাগ হাতে যে, সে আমার স্কুলজীবনের বন্ধু কৌশিক। সেই ইনফ্যান্টের, মানে, ক্লাস ওয়ানের-ও আগের বছর থেকে।















Comments

Popular posts from this blog

কামাই

যে ভাষায় আমের নাম ...