Impfneid
প্যানডেমিকে আমরা যখন এদিকে বসে বসে ফাল্গুনি* করেছি আর ফেসবুকে সাহিত্যগ্রুপ খুলেছি মাথাপিছু তিনটে করে - ওইদিকে জর্মন-রা - সহজাত সময় নষ্ট না করার প্রতিভায় - গাদা নতুন শব্দ বের করে ফেলেছে, যার দুটো আমার খুব পছন্দ : ১) Abstandsbier (আক্ষরিক মানে “distance beer”), আর ব্যাপক মানে “socially distanced drink” - 'এই কূলে আমি আর ওই কূলে তুমি' আর ২) Impfneid - যার অর্থ “vaccine envy” - উদাঃ পাশের পাড়ার পিন্টুদা has, আর আপনি have-nots?
Envy অবশ্য এড়ানো মুশকিল, তবে আমাদের সৃজন কয়েকদিন আগে একটা ভালো কথা লিখেছিলো, আমি সেটা আরেকবার বলেই ফেলি। ভ্যাকসিন নিয়ে সেলফি দিতে ইচ্ছে হলে দেদার দিন, দিল খুলে দিন, চার-পাঁচটা অ্যাঙ্গেল থেকে দিন। কেউ ওজর-আপত্তি তুললে থোঁতা মুখ ভোঁতা করে আরো দুটো দিন। গুচ্ছের ফেক-নিউজ আর মিসইনফর্মেশনের থেকে এই অনেক ভালো।
আমিও দেবো, পেলেই দেবো, তবে কি না আমি পাইনি এখনো, এবং সত্যি বলতে সেই নিয়ে দুঃখও নেই। চিন্তাও নেই। দিনদিন বাড়িতে পচে পচে 'দুঃখেষু অনুদ্বিগ্নমনা, সুখেসু বিগতস্পৃহ' হয়ে গেছি আসলে।
তা ছাড়া আজকে সকালেই মনে হলো, ব্যাপারটা সপ্তমীর দিন মেট্রো চড়ার মত। উঠলেন হয়তো দমদমে, স্যাট করে ইনসুইং-আউটসুইং করে পাছা ঠেকিয়ে দিলেন ন্যায্য সিটে, কিন্তু নামতে হবে পার্ক স্ট্রীটে, এদিকে আপনার আর গেটের মাঝে এক জেলা লোক দাঁড়িয়ে। নিতান্ত মারামারি বা চিল্লামিল্লি করবেন সে জোর নেই। হয়তো বুদ্ধি করে উঠেই বন্ধ গেটের ধারে বডি ফেলে দিলেন, তাতেও চাপ। পয়ঁতাল্লিশ মিনিট ধরে কোমরে কুপিত কাকুবাহিনী খোঁচা মারবেন, 'দাদা নামবেন?', এবং একটু একটু করে পিছিয়ে পিছিয়ে আপনি যে তিমিরে, সেই তিমিরেই।
আমাদেরও অবস্থা তাই, অবশ্য লাইনের শেষে দাঁড়াতে আপত্তি নেই, অভ্যেস-ও প্রচুর। শুধু দোকানে পৌঁছতে পৌঁছতে ফুরিয়ে যাবে না এইটুকুই যা আশা। না হয় পার্ক স্ট্রীটের জায়গায় ময়দানেই নামলাম, একটু হেঁটে মেরে দেবো এই আর কি।
অনেকের কী তা-ও জোটে কপালে?
এই যেমন সুবীর-জেঠু**, আমাদের পাড়ায় থাকতেন, সজ্জন প্রতিবেশীর পরাকাষ্ঠা হয়ে জীবন কাটিয়ে বছর দুয়েক আগে কাউকে কিচ্ছু না বলে রামকৃষ্ণলোকে গেছেন। তবে গবরমেন্ট বলে কথা। বাঁচতে দিক না দিক, চট করে কাগজে-কলমে মরতেও দেন না। ফকনার এঁদের দেখেই বলে গেছিলেন, "The past is never dead. It's not even past.", আর শক্তিবাবু বলেছিলেন 'কিছু মায়া রয়ে গেলো'।
তো সুবীর-বাবুও এতোদিন এনাদের খাতায় বেঁচেবর্ত্তেই ছিলেন, রেশন-টেশন-ও তুলছিলেন কালেভদ্রে। শস্ত্রে ছেঁড়ে না, অগ্নি দহে না যাঁকে, করোনা আর তাঁর কি-ই বা করবে বলুন? তাই সময়ের নিয়মে, ভ্যাকসিনের এলিজিবিলিটির খাতায় নাম-ও উঠলো তাঁর।
পেয়েও যেতেন-টেতেন কি না বলা শক্ত, তবে এই কালকেই এক পাড়ার বন্ধুর কাছে শুনলাম কর্পোরেশনের লোকে সার্ভে করতে এসে শেষমেশ জানা গেছে, নাঃ উনি সত্যি-ই আর নেই।
বন্ধু বললো, পাড়ার লোকে এই দু-বছর পরে সুবীরবাবুর শোকে মুহ্যমান। বন্ধুর মা নাকি খবর শুনে বলেছেন, 'ইশ আর দুটো বছর বাঁচলে একেবারে ভ্যাকসিন-টা নিয়েই যেতে পারতেন।'
আমিও সেই ভেবেই বসে আছি। ওই এক-ই কবতেয় শক্তিবাবুই আরো বলে গেছেন না, "জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক, বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু"?
---------------------------------
পুনশ্চঃ এই গল্পটা সকালে কলেজের গ্রুপে বলতেই রাজা বললো, 'ওই জেডি আবার একটা গল্প বানিয়েছে', কিন্তু বিশ্বাস করুন, দু-একটা নামটাম বাদে আগাগোড়া সত্যি - আমার বাদবাকি গল্পগুলোর মতোই।)
পুপুনশ্চঃ নতুন শব্দের খবর - https://www.theguardian.com/world/2021/feb/23/from-coronaangst-to-hamsteritis-the-new-german-words-inspired-by-covid
পাদটীকাঃ
*এটি একটি বিখ্যাত মধ্যপদলোপী সমাস - সবাই অভ্যেসবশে করে তবে দুষ্টু লোকেরাই খালি এর মানে জানে।
** ধুর মশাই, আসল নাম নয়।
Comments
Post a Comment