উঁচু-নিচু জ্যোৎস্না


এইসব অবসন্ন, স্বপ্নতাড়িত দিনরাতগুলোয় হঠাৎ হঠাৎ মনে হয় বোবা হয়ে যাচ্ছি, তখন ইচ্ছে করে চিৎকার করতে, বা কম্বল গায়ে হুট করে বেরিয়ে যেতে খোলা মাঠে শিশিরের তলায় ... যেখানে কোনো এক পার্কের কোণে একচিলতে বারোয়ারী আগুন জ্বলছে, আর একজন লোক সেই নিশুতি রাতে শুকনো পাতার স্তুপে একটা চিঠি খুঁজছে খালি
এইসব রাত্রে অবিকল শুনতে পাই, রান্নাঘর থেকে গানের কলি ভেসে আসছে (সুরটা লাগছে ঠিক-ই, কিন্তু কথাগুলো শেখা হয়নি এখনো), সেইসব হলুদ-মাখা আঁচল আর সিগারেটের গন্ধ বড্ডো দুঃসহ লাগে সেসময় ...
তখন আমি ভাস্কর চক্রবর্তীর কাছে গিয়ে বসি ... মনে হয় যেন এই পরিত্যক্ত রাত্রির মতো তার কবিতা দুই বিশাল ডানা দিয়ে ঢেকে রাখছে আমাকে। যেন প্রবল বৃষ্টির রাতে ক্ষয়ে যেতে যেতে, গলে যেতে যেতে ঘরে ফেরা হবে কিনা জানিনা আমি, অথচ বহুদূরে যেন চেনা একটা মোমবাতির হলদে আলো দেখতে পাই ...

“তোমাকে অজ্ঞাত দেশে দেখি প্রায়
একটি নির্জন ছাতে দাঁড়িয়ে রয়েছো ।
সব কথা
শেষ হয়ে গেছে ।
আর কোনো কথা নেই – স্বপ্ন নেই –
শুধু কিছু দিন আর রাত্রি পড়ে আছে।“

ভাস্কর লিখেছিলেন ‘শেষ নেই এমন এক পাহাড়ে অনবরত চড়তে থাকার সঙ্গে কবিতা লেখার তুলনা করা যায় কিছুটা’...
সেই বোবাপাহাড়ের ঠিক তলায় দাঁড়িয়ে আমি, সিসিফাসের উত্তরাধিকার বহন করে চলেছি যেন, তবু বিশ্বাস করি এরপরের স্টপেই আলো-ভরা উপত্যকা আসছে একটা, আর অনেক চিঠি হাতে সেখানে আমার জন্য নিশ্চয়ই একটা আস্ত ডাকবাক্স বানিয়ে রেখেছেন একজন রুপোলি চুলের নিঃসঙ্গ মানুষ।

Comments

Popular posts from this blog

কামাই

যে ভাষায় আমের নাম ...