Sunday, May 8, 2022

পঁচিশে


বসে বসে গ্রেডিং করছি আর মাঝে মাঝে ফেসবুক খুললেই দাদুকবি আছড়ে পড়ছেন, এই বিষম অবস্থায় একটা গল্প মনে পড়ে গেলো ...

তখন বয়েস ছয় কি সাত ! সে সময় পাড়ায় পাড়ায় পূণ্য পঁচিশের আশেপাশে ঢালাও রবীন্দ্র-নজরুল সন্ধ্যা হতো, তাতে পাড়ার যাবতীয় কুচোবাচ্চা ঘন্টার পর ঘন্টা ইস্কুলে শেখানো কবিতা আবৃত্তি করতো আর তাদের মা-বোনেরা দল বেঁধে প্রেম পর্যায়ের গান গাইতেন, কিংবা পূজা। যদিও দাদু বলে গ্যাচেন দুটোই সেম, সময় মতো নকুলদানা না দিলে কিংবা ধূপটুপ না দেখালে প্রাণদেবতা ও প্রাণাধিকা দুয়েই রুষ্ট হন। তো সে যাই হোক, আমার বাবার গুচ্ছ গুচ্ছ ঘরের খেয়ে বনের মোষ তাড়ানো অর্থাৎ সামাজিক কাজের মধ্যে একটা ছিলো পাড়ায়-বেপাড়ায় এই সব সন্ধ্যার সংগঠনের দায়িত্ব নেওয়া। ব্যাপারটা খুবি সোজা, বাঙালি হৃদয়ের কথা বলিতে, আঁকিতে, গাহিতে এবং পাকা স্টেজ পেলে নাচিতেও ব্যাকুল, তাকে কেহ একবার শুধাইলেই সে চালু করে দেবে। 
তা এইটা যে বছরের কথা, সেইবারে শীলস গার্ডেন লেনে অনুষ্ঠান, বাবার সেখানে আবার দাতব্য ক্লিনিক, অঞ্চলে সবাই ডাক্তারবাবুকে শ্রদ্ধা-ভক্তি করে, ভালো-ও বাসে। বাবা বললেন এইবারে আমাকে একটা ভালো কবিতা আবৃত্তি করতেই হবে, আর দিদিকে একটা গান ! তখন যা বয়েস রবিঠাকুর-কে ভালো বাসি না বাসি, বাবার থাবা কে নিয্যস ভয় পাই, তাই রাজি হয়ে গেলাম! আবৃত্তির অবশ্য অপশন বলতে গোটা দুয়েকঃ হয় "বীরপুরুষ" নয় "লুকোচুরি" ... বীরপুরুষ তো সবাই জানে, সেই যে বাচ্চাটা জ্যামে আটকে গিয়ে এসেমেস করছে "মনে করো যেন অনেক ঘুরে, উবার নিয়ে যাচ্ছি সোনারপুরে" - সেই বীরত্বের গল্প। আর লুকোচুরি-ই বা কে না জানে? যার বিষয় হচ্ছে একটি বদমাইশ বেড়েপাকা বাচ্চা সারাদিন চাঁপাগাছে চাঁপা হয়ে ফুটে থেকে মা-কে হয়রান করে, রাত্রে ফিরে আদৌ জবাবদিহি করবে না যে সে সারাদিন কোথায় ছিলো, এবং মা-ও কী আশ্চর্য তাকে কিছুই বললেন না, দু-ঘা ও দিলেন না, 'আজ থেকে তোর বাইরে যাওয়া বন্ধ' কিংবা "আসুক তোর বাবা" এসব বাস্তবসম্মত কিছুই হলো না ... বলাই বাহুল্য, এরকম ফ্যান্টাসি সে বয়সে দারুণ লাগার-ই কথা, তো মোটামুটি চাপ নিয়ে কবিতাটা গাঁতিয়ে ফেললাম, রিহার্সাল-ও দিলাম - বাবা খবরের কাগজ পড়তে পড়তে দুবার শুনে বলে দিলেন কোথায় কোথায় ক'ছটাক ইমোশন দিতে হবে ( বাবা নিজে ছোটবেলায় দুরন্ত আবৃত্তি করতেন, প্রুফ আছে) ... মোটামুটি এবার নামলেই হয়। 



ও মা, এতো কান্ড করে পাঞ্জাবি পরে গলায় পাউডার লাগিয়ে গিয়ে দেখি আমি একাই এতো বড়ো কবিতা গাঁতিয়ে এসেছি, বাকি সব দামড়া দামড়া খোকাখুকু "আতা গাছে তোতা পাখি" বলেই কেটে পড়ছে (যেটা মাইরি দাদুর লেখাও নয়), একজন তাও "আমাদের ছোট নদী" বললো কয়েক লাইন ! বুঝলাম এ কেরি প্যাকারের ওয়ান-ডে পৃথিবী, এখানে গাভাস্কর হওয়া বৃথা ... আমিও নির্ভীক চিত্তে স্টেজে উঠলাম, বললাম "নমস্কার, আজ আমি আপনাদের ...", তারপর আর্ধেক কবিতা গড়গড় করে বলে বাবার দিকে ফিরে মাইকেই জিগ্যেস করলাম "বাবা, বাকিটা বলবো?" ... বাবা হাত দিয়ে মুখ ঢাকছিলেন না কান বোঝা গেলো না, কিন্তু "মৌনং সম্মতিলক্ষণং" ... অতএব, আমি দর্শকদের দিকে ফিরে বললাম, "আচ্ছা বাবা বোধহয় চাইছেন আমি বাকিটাও বলি, তাহলে শুনুন বাকিটা !"

বলাই বাহুল্য, আমার বাড়বাড়ন্ত রবীন্দ্র-প্রেম সত্ত্বেও সেই আমার প্রথম এবং শেষ স্টেজে উঠে দাদু-কবিতা আবৃত্তি! বাবা আর কোনোদিন-ও আবৃত্তি করতে বলেন নি, আমিও সে পথ মাড়াইনি। আজ তিরিশ বছর বাদে হঠাৎ মনে পড়লো, কিন্তু কোথায় সে শীলস গার্ডেন, কোথায় সে থাবা, কোথায়-ই বা সে বাবা, এখানে পঁচিশ তারিখ সন্ধ্যা-ও হয় না। 
যদুবাবুকে ডাকাডাকি করবে এমন লোক-ও আর বেশী নেই পিতিবি-তে, তবে এখন কেউ ডাকলে পুরোটাই এক্কেবারে আউড়ে দিয়ে আসবো, প্রমিস !


Friday, March 25, 2022

ব্যক্তিগত অথবা নৈতিক

"Those who choose the lesser evil forget very quickly that they chose evil."

জতুগৃহের সামনে দাঁড়িয়ে তত্ত্বকথা অশ্লীল মনে হয়, তাও ... অর্ধশতাব্দী আগে Hannah Arendt এই চমৎকার কথাটা বলেছিলেন, যা (দুর্ভাগ্যবশতঃ) পুরোনো হওয়ার নয় কোনোদিন-ইঃ 

বলেছিলেন, সাংঘাতিক গণহত্যার পরেপরেই গোটা মানবসভ্যতাকেই কাঠগড়ায় দাঁড় করাতে ইচ্ছে করে, যেমনটি হয়েছিলো জর্মনিতে, কিন্তু সেই collective guilt আসলে একটা ফ্যালাসি বই কিছু না, "There is no such thing as collective guilt or collective innocence; guilt and innocence make sense only if applied to individuals"! 

অকল্পনীয় বাস্তবের সামনে দাঁড়িয়ে আমরা বুঝতে পারি না, কোথা থেকে কী হয়ে গেলো, বুঝতে পারি না একটু একটু করে আমাদের-ই প্রত্যেক দিনের আপোষ, এক-একটা সামান্য নৈতিক বিচ্যুতি জমতে জমতে একদিন এমন জায়গায় পৌঁছে যায় যে অপরাধের যথেষ্ট শাস্তি নেই আমাদের অভিধানে, আর ক্ষমা তো প্রশ্নাতীত। 

কিন্তু তবুও ব্যক্তিগত দায়িত্ববোধ তো একেবারেই এড়ানো যায় না, তাই না? আমি-আপনি কেউ তার ব্যতিক্রম নন। সে দায়িত্ববোধ শুধু হাওয়া মেপে দিকে-দিগন্তরে জাজমেন্টের বাণী ছড়িয়ে আর নিজেকে ছাড়া বাকি সবাইকেই কাঠগড়ায় তুলে শেষ হয় না। সেই দায়িত্ববোধের একটুখানি বোধ করি খানিকটা অকৃত্রিম ঘৃণা আর রাগ মনের মধ্যে পুষে রাখা, কারণ এখনো অনেক দীর্ঘ রাত্রি বাকী। 

অ্যারেন্ট বলেছিলেন যে নিতান্ত সাধারণ মানুষ যারা পিষে যাবেন জেনেও ঐ বিশাল চাকার সামনে দাঁড়িয়ে পড়েছিলেন, আর প্রতিবাদ করতে সাহস করেছিলেন, তাদের আর কিছু ছিলো না নৈতিক বিশ্বাসটুকু ছাড়া। সক্রেটিসের মতো তারাও ভাবতে পেরেছিলেন, "it is better to suffer an injustice than to commit one!” 

সেইটুকুও কি আমার/আমাদের আর অবশিষ্ট আছে? জানি না। তবে নিজের সাথে একান্তে একটু অপ্রিয় কথা বলাই যায়, নিজেকে নিজে অস্বস্তিকর প্রশ্ন-ও করাই যায়, অথবা সব কিছু শেষ হয়ে গেলেও নিজের হাতের দিকে তাকিয়ে আবছা অথবা স্পষ্ট দাগ-ও খোঁজাই যায়। প্রকাশ্যে হোক বা না হোক, যদ্দিন বেঁচে আছি, সেই নিজের সাথেই তো বাঁচতে হবে, তাই না? 

--- 

Excerpts from “Personal Responsibility Under Dictatorship,” Hannah Arendt’, available here: https://grattoncourses.files.wordpress.com/2016/08/responsibility-under-a-dictatorship-arendt.pdf  


Hannah Arendt,
Image credit: Barbara Niggl Radloff, CC BY-SA 4.0 via Wikimedia Commons

Sunday, November 21, 2021

প্রোফেশনাল ডেভেলপমেন্ট

গতকাল একটা প্রোফেশনাল ডেভেলপমেন্ট ওয়ার্কশপে গেছিলাম। যাওয়ার যে আদৌ ইচ্ছে ছিলো এমন না, কিন্তু আগের বছর একটাতেও যাইনি বলে এই বছর একরকম কান মুলেই আর কি ...  

তা যাই হোক, গিয়ে দেখি একজন বেশ ডাঁটোয়াল ও সফল প্রোফেসর-গোছের লোক বিবিধ জ্ঞান দিচ্ছেন কী ভাবে রিসার্চ করতে হয়, কী ভাবে গ্রান্ট প্রোপোজালে ঝুড়ি ঝুড়ি ঢপ দিতে হয় ইত্যাদি। 'দশে মিলি করি হ্যাজ, হারি-জিতি নাড়ি ল্যাজ' টাইপের বাণী শুনছি। শুনতে শুনতে উদাস হয়ে ফলস সিলিং-এ নেই-কড়িকাঠ গুনছিলাম, একটুস তন্দ্রা এসে গেছিলো। এমন সময়ে হঠাৎ দেখি বক্তা আমার দিকে-ই তাকিয়ে বেশ জোরের সঙ্গে বললেন, "we should not focus too much on Netflix!"

এদিকে আমি আগের দিন-ই একটা অতি খাজা সিনেমা দেখে রাত করে ঘুমিয়েছি। সবেগে মাথা নেড়ে বললাম, তা বটেই তো, ইট ইজ সাচ আ ওয়েস্টেজ অফ টাইম, তবে কি না খুব-ই টেম্পটিং। মাস্কের আড়ালে বক্তার মুখে বোধহয় হাসি ফুটে উঠলো, "ইয়েস মাই ফ্রেণ্ড!" বলে তিনি আরো মিনিট পাঁচেক নেটফ্লিক্সের কুফল নিয়ে বলতে লাগলেন, কেন আমাদের চিরতরে বর্জন করা উচিৎ ইত্যাদি ... আমি একটু অবাক-ই হচ্ছিলাম যে এতো রাগ কেনো রে বাবা। শেষের দিকে বুঝলাম, নেটফ্লিক্স নয়, মেট্রিক্স। উনি বলতে চাইছিলেন, এই খালি কটা পেপার, কটা গ্র্যান্ট এইসব হিসেব না কষে একটু ভালো কাজে মন দিতে। 

যাই হোক, ঠিক করলাম বাকী ওয়ার্কশপে আর কোনো কথাই বলবো না, কে না জানে, তাবৎ শোভন্তি মূর্খম ... অথবা বোবার কোনো শত্রু নাই। কিন্তু হলো কী, শেষের দিকে একটা সাদা পাতা সবাইকে ধরিয়ে দিয়ে বক্তা বললেন, 'পাঁচ মিনিট সময় দিচ্ছি, রাইট ডাউন হোয়াট ইউ মিন বাই পি-ভ্যালুজ!'

এইবার তো কমন কোশ্চেন পড়েছে। আমি কোনোদিকে না তাকিয়ে এক কোণে একটা নর্ম্যাল কার্ভ, তার এক লেজে একটু শেডিং ইত্যাদি দিয়ে বেশ জমিয়ে এক প্যারা লিখেছি। লাস্টে উপসংহার লিখবো লিখবো করছি যে সিপেমের ন্যায় প্রবল-পরাক্রান্ত পি-ভ্যালুর-ও আজ অশেষ দুর্দিন, বেইজিয়ান-রা উহাকে গালি না দিয়ে জল খান না। এমন সময় দেখলাম পাশের ছেলেটা নিজের চোতা দেখে পড়তে আরম্ভ করলো "ইন্টিগ্রিটি, ডিসিপ্লিন, ট্রাস্ট ..." বুঝলাম এতোদিনে কান-টা সত্যিই গেছে, লিখতে বলা হয়েছিলো "key values"। অফ কোর্স। যাই হোক, খাতাটা আর জমা দিতে হয়নি এই আমার ভাগ্য। 

তবে কি না একেবারে দুঃখের-ও কিছু নেই। মহামানুষদের সাথে এরকম হয়েই থাকে। শুনেছি দেরিদার টকে গিয়ে এক হল ভর্তি লোক শুনেছিলেন তিনি "cows" নিয়ে মনোজ্ঞ ভাষণ দিচ্ছেন। দিচ্ছেন তো দিয়েই যাচ্ছেন, লোকেও বুঝুক ছাই না বুঝুক, নোট টুকেই যাচ্ছে। ব্রেকের পর নাকি দেরিদা এসে বলেন, 'I'm told it's pronounced chaos'! 

এই গল্পের-ই আর এক সিক্যুয়েলে, দুই ছাত্র একবার কেম্ব্রিজ ক্যাফেতে দেরিদার সাথে দেখা করে জিগ্যেস করে, সিনেমা নিয়ে ওঁর মতামত কী? বিরক্ত দেরিদা বলেন, ওঁর মনে হয়, it is inescapable, it is everywhere, it's in the bread, it's in the coffee! বলাই বাহুল্য, দেরিদা ভেবেছিলেন, ওঁকে cinnamon নিয়ে কিছু জিগ্যেস করা হয়েছে। 

যাই হোক, এই আমার গল্প হলো সারা। কিন্তু সুকুদা বলে গেছেন, 'যদু আর বংশীধর যমযজ ভাই তারা', যাই বংশীধরকে খুঁজি।

Tuesday, July 13, 2021

এভাবেও ফিরে আসা যায়?

একটাই কবিতা, জীবনে কতোবার কতরকম ভাবে ফিরে আসে!

দ্য লাস্ট রাইড টুগেদার, ব্রাউনিং-এর, যেমন।

ছোটোবেলায় পড়েছি বলে মনে হয় না কারণ অতো ইংরেজি পড়ার ক্ষমতা ছিলো না। মনে হয় কলেজে পড়ার সময় একটা অ্যান্থলজি কিনেছিলাম, সবুজ মলাটের পেপারব্যাক বই, প্রথম পাতায় ঝর্ণা কলমে আবছা নাম সই করা। ভেতরে অনেক লোকের বিখ্যাত বিখ্যাত কবিতা আর মার্জিনে ছোটো ছোটো নোট - সিলেবাসের, সাজেশনের আঁচড়। তার মধ্যে একটা কবিতা ছিলো 'দ্য লাস্ট রাইড টুগেদার'।
পড়ার পরেই ইচ্ছে হয়েছিলো একজন কলকাতা ছেড়ে পাকাপাকি চলে যাওয়ার আগে তাকে শোনাবো। জিভের জড়তা, বাংলা মিডিয়ামের শ-ষ-স-হ হোঁচট ও খানাখন্দের ভয়ে আর শোনানো হয়নি। A. E. Housman-এর একটা লাইন বলে এসেছিলাম।
'The wind and I, we both were there,
But neither long abode;
Now through the friendless world we fare
And sigh upon the road.'
তার প্রায় বছর বারো কি তেরো পরে একদিন বাঙালনামা পড়তে গিয়ে দেখি ও'মা আমি একা নই। তপনবাবুও ভেবেছিলেন, এবং পারেননি, এবং আর সবাইকে ছেড়ে হাক্সলি লিখে এসেছিলেন। সে-ও এক অদ্ভুত মেলানকলিক বর্ণনা, পড়তে পড়তে একটা দীর্ঘশ্বাস চেপে যেতে হয়। 'বাঙালনামা'র সেই অংশটুকু হুবহু টুকে দিলাম নীচেঃ
"জেইব্রুখ থেকে এস্টোয়ার্প। বহুবার দেখা এই শহর। সেখানে পুরাতন বান্ধবী রিকা ওরফে ফ্রেডারিকা অপেক্ষা করছিল। হেগ অভিলেখাগারে ওর সঙ্গে পরিচয় হয়েছিল। সে তখন এন্টোয়ার্প বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণার ছাত্রী। ডাচ ভাষায় যাকে বলে ব্লন্ডচ্যা, স্বর্ণকেশী বালিকা, চোখের মণিতে সবুজের আভা। তারপর ক’বার এন্টোয়ার্পের কাছে ওদের বাড়ি হোবোকেন গ্রামে গিয়েছি। একসঙ্গে বুখ খেন্ট বেড়িয়েছি। এবারও গেলাম। একবার ইচ্ছে হয়েছিল ব্রাউনিংয়ের লাস্ট রাইড টুগেদার ওকে শোনাই। কিন্তু কেমন যেন হাসি পেল। ব্রাউনিংয়ের বদলে অলডাস হাক্সলি থেকে দুটি লাইন ওর অটোগ্রাফের খাতায় লিখে দিলাম: “ট্র্যাজেডি ইজ দা ফার্স হুইচ ইনভলভস আওয়ার সিমপ্যাথি। ফার্স ইজ দা ট্র্যাজিডি হুইচ হ্যাপেনস টু আদার্স।” এন্টোয়ার্প স্টেশনে ডেন হাগের ট্রেনে উঠলাম। অনেক দূর অবধি দেখতে পেলাম—রিকা রুমাল নেড়ে বিদায় জানাচ্ছে। ওর সঙ্গে আর কখনও দেখা হয়নি। চিঠিপত্র মারফত যোগাযোগ রাখার চেষ্টাও কখনও করিনি। সত্যিই কি রাতের সব তারাই থাকে দিনের আলোর গভীরে? লাইনটা লিখে কবি নিজেই সন্দিগ্ধ হয়েছিলেন। “সত্যি বললাম তো?"
তারপর আবার ভুলে গেছিলাম। মনে পড়লো কাল। আত্মজীবনী নয়,
আমার মতন বাচালের বিশ্রম্ভালাপ নয়, অন্যতম বিখ্যাত একটা পেপার - ব্র্যাডফোর্ড হিলের প্রেসিডেন্সিয়াল অ্যাড্রেস। যাতে সেই ন-খানা কজালিটি-র ক্রাইটেরিয়া দেওয়া আছে। পেপারের শেষ দুইটি প্যারা তুলে দিলাম। কবিতার পংক্তি উদ্ধৃত করছেন, কিন্তু সে কি সুন্দর, নাটকীয় এবং এমফ্যাটিক-ভাবে দেখুন।

"All scientific work is incomplete - whether it be observational or experimental. All scientific work
is liable to be upset or modified by advancing knowledge. That does not confer upon us a freedom to ignore the knowledge we already have, or to postpone the action that it appears to demand at
a given time.
Who knows, asked Robert Browning, but the world may end tonight? True, but on available
evidence most of us make ready to commute on the 8.30 next day."



ব্রাউনিং-এর কবিতাটিঃ https://www.bartleby.com/42/665.html
হিলের প্রেসিডেন্সিয়াল অ্যাড্রেসঃ https://www.ncbi.nlm.nih.gov/.../pdf/procrsmed00196-0010.pdf

Friday, July 9, 2021

“ফসল কাটা মাঠে এখন সদ্যকৃত বধ্যভূমি”




আমি লোরকা-র কথা প্রথম পড়ি শুভঙ্করকে লেখা নন্দিনীর চিঠি-তে,

নতুন কবিতা কিছু লিখেছো কি?

লোরকা পড়ছো খুব? বেশি পড়ো, কম সিগারেট খাও”

(কথোপকথন ৩, পূর্ণেন্দু পত্রী)

 

দিন-কয়েক পরে একটা বাংলায় অনুবাদ করা লোরকার কবিতার বই পেয়ে যাই কলেজ স্ট্রীটে, পড়তে পড়তে প্রেমে পড়ে যাই নিজের অজান্তে। কি অদ্ভুত ম্যাজিকে লোরকার কবিতার প্রাগৈতিহাসিক আন্দালুশিয়া হয়ে যায় আমার-ই ভিটেমাটি - তার বইয়ের পাতায় কান পাতলে শুনতে পাই ফ্ল্যামেঙ্কো-র ছন্দ, টের পাই অবিকল শরীরের উত্তাপ আর মরা বাতাসে ফিসফাস করে বয়ে চলে ‘সনেটস অফ ডার্ক লভ’-এর অস্ফুট গোঙানি আর জমে-থাকা চিৎকার ... অনন্ত কবরের তলা থেকে উঠে আসা দেহহীন প্রেতশব্দের মতো।

মাত্র আটত্রিশ বছর বয়সে, ১৯শে আগস্ট, ১৯৩৬, খুন করা হয় লোরকা-কে, গ্রানাডা-র তখতে তখন উগ্র-জাতীয়তাবাদী ফ্যালাঞ্জিস্ট গুন্ডাবাহিনী, আর লোরকা? সোশ্যালিস্ট, স্পষ্টবক্তা, মুক্তচিন্তক, তায় সমকামী, ফ্যাসিস্ত রাষ্ট্রযন্ত্রের সাক্ষাৎ জুজু। তিরিশ-তিরিশটা বছর লেগেছিলো (১৯৭০ অব্দি) শুধু এই কথাটুকু প্রকাশ্যে স্বীকার করতে যে লোরকার খুন ব্যক্তিগত দ্বন্দ্বে-ঈর্ষায় নয়, বরং হয়েছিলো একটি রাষ্ট্রশক্তির হাতে – তাঁর বধ্যভূমি আজ-ও নিশানাহীন।

১৭-ই আগস্ট, ১৯৩৬, ভোরের আলো ফুটতে তখনো দেরী খানিকটা। গ্রানাডার ঠিক বাইরে যে মেঠো রাস্তাটা জুড়েছে ভিজনার আর আলফাকার শহর-কে, সেইখানে থামলো একটি গাড়ি – দরজা খুলে একে একে নেমে এলেন চারজন বন্দী আর পাঁচজন বন্দুকধারী সৈন্য। বন্দীদের দুজন নৈরাজ্যবাদী বুলফাইটার, একজন পক্ককেশ স্কুলশিক্ষক যাঁর একটি পা কাঠের, আর চতুর্থ ব্যক্তিটির পরণে একটি ব্লেজার আর শাদা পাজামা, অন্ধকার আন্দালুশিয়ান আকাশের নীচে উদ্যত মাউজার রাইফেল আর অ্যাস্ট্রা-৯০০ পিস্তলের নিশানার তাঁরা হেঁটে যাচ্ছেন আল পেরিয়ে একটি জমিতে, জলপাই গাছের সারি উজ্জ্বল ভাসমান হয়ে আছে ঘাতকদের গাড়ির তীব্র হেডলাইটের আলোয়। ওঁরা জানেন সেই রাত্রিটির শেষ নেই।  

লোরকা জানতেন, লোরকা-রা যেমন জানেন, মৃত্যুর অনেক আগেই  আর তিনি যেন মিশে যান মার্কেসের সান্তিয়াগো নাসারের সাথে, হত্যার আগেই ঘাতকের ছুরি থেকে ঝরতে থাকে রক্ত, ‘Fable and round of three friends’ এ অভ্রান্ত তার এপিটাফঃ

“Then I realized I had been murdered.

They looked for me in cafes, cemeteries and churches

.... but they did not find me.

They never found me?

No. They never found me.”

 

১৮৯৮-এ উচ্চবিত্ত পরিবারে জন্ম। শুধু সোনার চামচ-ই নয়, প্রতিভাও নিয়েই এসেছিলেন স্বল্পায়ু জীবনটুকুর তলানি অব্দি শুষে নেবেন বলেই যেন। একাধারে সঙ্গীতজ্ঞ, নতুন ধারার কবি, আবার রঙ্গমঞ্চ-ভরিয়ে-ফেলা নাট্যকার – কী-ই না পারতেন গার্সিয়া? জেনারেশন অফ টোয়েন্টি-সেভেনের কবি শুধুই যে নতুন বাঁকে নিয়ে গেছিলেন স্প্যানিশ কবিতাকে তাই-ই নয়, ফোকলোরের সঙ্গে মিশিয়ে দিতে পেরেছিলেন বড়ো হয়ে ওঠার আন্দালুশিয়ার জিপসি-সুর। নেরুদা লোরকাকে নিয়ে উচ্ছ্বসিত হয়ে বলেছিলেন, “I have never seen grace and genius, a winged heart and a crystalline waterfall, come together in anyone else as they did in him.”

কিন্তু সেই ডানাওয়ালা হৃদয়ের মধ্যেই সিসিফাসের পাথর-প্রমাণ ভার - ভয়ঙ্কর হোমোফোবিক সমাজে একজন সমকামী মানুষ তিনি, সেই চেপে রাখা অস্ফুট গোঙানি ছড়িয়ে-ছিটিয়ে লোরকার প্রায় সব লেখায়, কোথাও সে বিরহ-অদর্শন, কোথাও ভয়ানক ট্রাজিক পরিণতি প্রেমের।

“The whole world’s broken.

Only silence remains.

(Leave me here, in this field,  weeping.)”                                  

[“Poem of the Solea”]

 

লোরকা যখন আস্তে আস্তে হয়ে উঠছেন স্পেনের কণ্ঠস্বর, পর্দার আড়াল থেকে শ্বদন্ত নিয়ে বেরিয়ে পড়েছে ফ্যাসিজমের দৈত্যরা। দীর্ঘদিন বামপন্থী শাসনে আনা হয়েছে একের পর এক পরিবর্তন – নারীর সমানাধিকার, কৃষিক্ষেত্রে ভূমিহীনদের রক্ষা করার নতুন আইন, চার্চ ও মিলিটারির জনজীবনে প্রতিপত্তি খর্ব করার একের পর এক নীতি। আর যতো সামনের দিকে এগোতে চেষ্টা করেছে স্পেন, ততোই বিত্তবান, ক্ষমতাবান, ঘৃণার কারবারিরা এক হয়েছেন জেনারেল ফ্র্যাঙ্কোর বাহিনীর আশ্রয়ে, সেই কুখ্যাত ঘাতকদের দল, যাঁদের স্লোগান ছিলো, “ভিভা লা মুয়ের্তে – মৃত্যু দীর্ঘজীবী হোক”।

 

সেই ফ্যাসিস্ত শক্তির রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে লোরকা লিখে চলেছেন তার কবিতা, আকাশে উড়িয়ে দিয়েছেন তার ইশ্তেহারঃ

 

“The artist, and particularly the poet, is always an anarchist in the best sense of the word. He must heed only the call that arises within him from three strong voices: the voice of death, with all its foreboding, the voice of love and the voice of art.”

 

১৯৩৬-এ হত্যা, ১৯৫৩ অব্দি সমস্ত লেখার উপর নিষেধাজ্ঞা, ১৯৭৩-এ ফ্রানিসিস্কো ফ্র্যাঙ্কো মারা না যাওয়া অব্দি লোরকার মৃত্যু (অথবা জীবন) নিয়ে আলোচনা-ও ছিলো অবৈধ, ১৯৮৪-র আগে অব্দি পাওয়াই যায়নি তার ‘ডার্ক লভ’-এর সনেটগুচ্ছ, এখনো কেউ জানেনা শেষ খসড়া কোথায় – তবু লোরকা বেঁচে আছেন, থাকবেন, আর স্পেনের ফ্যাসিস্ত ফ্যলাঞ্জিস্ট গুন্ডার দল নেই। কবিমাত্রেই প্রফেট হন কি না বলা খুব শক্ত, তবে লোরকা জানতেন শেষ সংলাপটি তাঁর-ই, বলেছিলেন পৃথিবীর আর সব জায়গায় মৃত্যুই শেষ অঙ্ক, যার পদশব্দ পেলেই পর্দা টেনে দিই আমরা, কিন্তু স্পেন আলাদা, স্পেনে মৃত্যু নিজের হাতে উন্মোচন করে পর্দা’। তিনিই বলেছিলেন না A dead man in Spain is more alive than a dead man anywhere else in the world”?

রুইজ আলোনসো, যে অফিসার-ইন-চার্জ সেই ১৬-ই আগস্টের রাত্রে একশো ফ্যালাঞ্জে সৈন্য নিয়ে ঘিরে ফেলেছিলেন লোরকার বাল্যবন্ধুর বাড়ি, খুনের পরেই তিনি বলেছিলেন, “He’s done more damage with a pen than others have with a pistol”!

সত্যি বলতে, প্রথমবার বিশ্বাস হয়নি, ভাবতে পারিনি একজন দুর্বল কবিকে জল্লাদবাহিনী টেনে দাঁড় করাচ্ছে ফায়ারিং স্কোয়াডের সামনে? একজন কবি-কে এতো ভয়?

অথচ পালটায় না কিছুই, অন্ধ, দিকশূন্য মানুষ দৌড়ে মরে সেই এক-ই বৃত্তে।

দেশ পালটে যায়, শাসকের কুনাট্যরঙ্গের মঞ্চ বদলে যায়। কিন্তু আজ-ও যতদূর চোখ যায় দেখা যায় কবিকে, তার স্পর্ধা, তার ধক, তার সামান্য কটি বজ্রবিদ্যুৎময় খাতা নিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন ফ্যাসিস্ত শাসকের চোখে চোখ রেখে।

আর পালটায় না মানুষের ভেতরের-ও ভেতরে ঘৃণার সেই রক্তবীজের ঝাড় - “plus ca change plus ca meme chose”!

১৯শে অগাস্ট, ১৯৩৬। লোরকার মৃত্যুর পর রাষ্ট্রযন্ত্র বলেছিলো, “he died because he was a fagg*t”!

জাম্প কাট, গত মঙ্গলবার, ৬-ই জুলাই, ২০২১। স্যামুয়েল লুইজ মুনিজ। ২৪-বছরের নার্সিং-এর ছাত্রটিকে ১২ জন উন্মত্ত মানুষ কিল-চড়-ঘুঁষিতেই মেরে ফেলেছে, স্পেনের একটি নাইটক্লাবের বাইরে।

তাঁর একমাত্র দোষ? সে সমকামী। 

 

Tuesday, May 4, 2021

অসংখ্য সমুদ্র বয়ে যাচ্ছে


‘‘অসংখ্য সমুদ্র বয়ে যাচ্ছে।
সময়ের স্রোত
এবং কেই বা বিখ্যাত হতে চায় এবং অটোগ্রাফ সই করতে চায়
সিনেমা স্টারদের মত…
…আমি জানতে চাই আমার মৃত্যুর পর কী হবে…’

(অ্যালেন গীনসবার্গ, ‘ছবির দেশে কবিতার দেশে’ বই থেকে।)


“আজ সন্ধ্যায় ডরথি নর্মানের পার্টিতে অনেকের সঙ্গে আলাপ হলো। প্রথমে উল্লেখ্য অ্যালান গিন্সবার্গ। তোমার মুখে যার নাম শুনেছি, কিন্তু যার লেখা আমি কিছুই পড়িনি। সম্ভ্রান্ত ককটেল-পার্টিতে একটা গলাখোলা লাল শার্ট গায়ে দিয়ে এসেছে (স্পষ্টতই আমার কবিতা পড়েনি); ভারি সুশ্রী দেখতে, আমি দেখামাত্র ভালোবেসে ফেলেছি, ছেলেটিকে দেখে তোমার কথা বড্ড মনে পড়ছিলো। বললে—আমেরিকার পাঁচজন শ্রেষ্ঠ কবি শীঘ্রই ভারতবর্ষ আক্রমণ করতে চলেছে : কেরুয়াক, গিন্সবার্গ, আরো কে-কে! ‘সুসভ্য ভারতীয়দের বিস্মৃত সোমরসে দীক্ষাদান এদের মহান ব্রত। আমি বললুম ‘সোম’ বোধহয় ফরাশি বা ইতালীয় ওয়াইনের মত নিরীহ দ্রাক্ষারস মাত্র ছিলো, কিন্তু হাক্সলি এদের মগজে যে-ভূত ঢুকিয়েছেন তা তাড়ানো আমার মত ওঝার কর্ম নয়। এরা বিবিধ নেশার চর্চা করে থাকে—গাঁজা, সিদ্ধি, চরস ইত্যাদি, তুরীয় অবস্থায় কবিতা লেখে, সামাজিক রীতিনীতিকে পদদলিত করে—অথচ, এই সমস্ত অতি পুরোনো অতি মলিন অতি ব্যবহৃত মুদ্রাদোষ সত্ত্বেও গি্নসবার্গকে আমি অস্বীকার করতে পারলুম না, আমার মনে হলো লোকটা সত্যি কিছু খুঁজছে, খুঁজে বেড়াচ্ছে, আর দশজনের মতো নয় সে, ভিতরে এক ফোঁটা আগুন জ্বলছে। আমি আবেগের বশে কাল রাত্রে তাকে খেতে বলে দিয়েছি, একজন বন্ধু নিয়ে আসবে বলেছে —কী অবস্থায় আসবে, আস্ত দল নিয়েই চড়াও হবে কিনা—এ-সব ভেবে এখন একটু উদবিগ্ন বোধ করছি, কিন্তু ছেলেটির চেহারা স্মরণ করে অনুতপ্ত হতে পারছি না”
বুদ্ধদেব বসু-র চিঠি জ্যোতিকে, ১৯/৩/৬১।

ছোটোবেলায় সুভাষ-স্যার ইংরেজি কবিতা পড়াতে পড়াতেই হঠাৎ একদিন বলেছিলেন অ্যালেন গিন্সবার্গ নামে একজন বিখ্যাত মার্কিন কবি ছিলেন, তাঁকে নাকি কোনো এক কবিতার আসরে একজন দর্শক কবিতার অর্থ বুঝিয়ে দিতে বললে গিনসবার্গ তার উত্তরে ধীরে ধীরে খুলে ফেলেন তার পরনের শেষ সুতোটুকুও। গল্পটা শেষ করে সুভাষ-দা বলেছিলেন, ‘কবিতা বুঝবার নয়, বাজবার’।

লরেন্স লিপটন আর আনাই নিনের বিবরণীতে সেই দিনের কথা ধরা আছে সুন্দরভাবে - সময়ঃ সন ১৯৫৭। কবিতা পড়তে স্টেজে উঠেছেন অ্যালেন, একজন হেকলার চেঁচিয়ে বল্লে “Come and stand here, stand naked before the people, I dare you! The poet is always naked before the world.” … উত্তরে অ্যালেন খুলে ফেলেন পরিধেয় সবকিছু।

প্রায় এক দশক পরে অ্যালেন নিজে যা লিখেছিলেন সেটা খানিকটা এইরকম - ‘এমন একটা গুজব খুব চলে যে কলেজের পারফরমেন্সে আমি প্রায়-ই জামাকাপড় খুলে নগ্ন হয়ে যাই, কিন্তু দুর্ভাগ্যের কথা শেষ দশ বছর কোনো পাবলিক রিডিঙেই নগ্ন হওয়া হয়নি আমার। সেই শেষ একবার ১৯৫৭ সালে একটা ঘটনা ঘটেছিলো, যেটাকে অ্যানেকডোট হিসেবে বারবার বলা হয়। সেইদিন একটা প্রাইভেট রিডিং হচ্ছে একটি বাড়ীতে, গ্রেগরি করসো কবিতা পড়ছেন (সেই গ্রেগরি করসো, সুনীলের বর্ণনায় “অতিশয় বিশুদ্ধ ধরনের কবি, এবং একেবারেই পাগলাটে ধরনের মানুষ”, যিনি সুনীলের কাছ থেকে পঞ্চাশ ডলার ঝেড়ে দিয়েও জুয়া খেলে অনেক টাকা জিতে এসে আবার ফেরত দেন পাই-টু-পাই।) সেইদিন করসো পড়ছে নিজের লেখা কবিতা “Power”, হঠাৎ এক লাল-চুলো হলিউডি রিপোর্টার চেঁচিয়ে জিগ্যেস করলো “Whatter you guys tryana prove?”, আমি বোধহয় কিছু না ভেবেই স্বতঃস্ফূর্ত জবাব দিয়ে দি,
- “Nakedness!”
লালচুলো আবার চেঁচায়,
- “Whadya mean nakedness?”
আমি নিঃশব্দে পরনের সবকিছু খুলে ফেলি আস্তে আস্তে, তারপর আবার পরেও নিই, নিঃশব্দে। আমার ঠিক পাশে দাঁড়িয়ে করসো তখন পড়ে যাচ্ছে তাঁর সেই দীর্ঘ কবিতা “পাওয়ার”।“
পরে জেনেছি, নগ্নতাকে গিন্সবার্গ বরণ করে নিয়েছিলেন জীবনবোধ হিসেবে, আক্ষরিক অর্থেও যেমন কবিতায়-শিল্পেও ঠিক তেমন-ই। লিখেছিলেন, “Scribble down your nakedness. Be prepared to stand naked because most often it is this nakedness of the soul that the reader finds most interesting”। সত্যিই তো, নিজেকে সম্পূর্ণ উন্মোচন না করলে সত্যিই কি পড়া যায় প্রত্যেকটি বলিরেখা? পুরোপুরি সৎ হওয়া যায় শিল্পের কাছে?
গিনসবার্গ সত্যিসত্যিই বিশ্বাস করতেন, “Candor ends paranoia”!
শোনা যায়, হেনরি কিসিঙ্গার-কেও নাকি তিনি প্রস্তাব দেন তাঁর সাথে একসাথে নগ্ন হওয়ার শুধুমাত্র প্রকৃত সৎ আলোচনার স্বার্থে (বলাই বাহুল্য কিসিংগার সে প্রস্তাবে সাড়া দেননি)।
ওনার কবিতা তো বহুপঠিত, বহচর্চিত। সেসব আর দিয়ে ভারাক্রান্ত করবো না, তবে সুনীল গাঙ্গুলীকে লেখা একটি চিঠির অংশ হবহু তুলে দিলাম নীচে। ওঁরা বেঁচে থাকলে হয়তো আজ-ও এটা অপ্রাসঙ্গিক হতো না, যেমন অপ্রাসঙ্গিক হবে না কবিতা, কোনওদিন-ই কোনো রাষ্ট্রযন্ত্রের ভয়ে।
““What should be my stand.” Mine is, just tell the truth of what you feel (as far as it is socially safe—you don't want to be crucified)—including my confessions, resentments, enthusiasms. In other words, “what should be” leads one astray. But one’s real feelings are rarely what they should be. All you can really express well is what your real, actual, private (not should be) feelings actually are. Leave the “should be” perfections to the creeps who are robots, Marxist or Jai Hind style. Yr aversion to the Chauvinism and shouting are really quite normal sensible reactions. I got hysterical when I discovered that the one Chinese restaurant in allahabad had changed to Hindu menu after informal “suggestions” by local politicians. A poet's war work is to stay human, it's an old attitude taken for granted by now in Europe. Also its a great oppurtunity to see how really evil people can be. That's why I like Céline's writing-he makes a big picaresque comedy out of the french war hysteria, World War I. Don't flip out & get drunk-just keep writing yours own silly poetry & publish yr own magazine.
Or Dont Publish. Fuck it. The joy will be writing something for real,--
God is listening remember. ... Write for an audience of Martians.”

রাষ্ট্রযন্ত্রকে, এস্টাব্লিশমেন্ট-কে আজীবন মধ্যাঙ্গুষ্ঠ দেখানো অ্যালেন গীনসবার্গের আজ, পাঁচ-ই এপ্রিল, মৃত্যুদিন। আর কিছু মনে থাক না থাক, এই আতঙ্কের দিনগুলিতে ওঁর একটা কথা লিখে রাখুন দেওয়ালে, চৌকাঠে, লুকোনো ডায়রিতে, পারলে নিজেকে নিজেই বলুন -
"Candor ends paranoia"।

(সঙ্গের ছবিটিঃ বব ডিলান এবং অ্যালেন গিনসবার্গ, বন্ধু জ্যাক কেরুয়াকের সমাধিতে বসে পড়ে শোনাচ্ছেন “মেক্সিকো সিটি ব্লুজ”-এর কবিতা।)

পুনশ্চঃ গিনসবার্গের চিঠিটি 'সুনীলকে লেখা চিঠি' বই থেকে তুললাম, বানান (অ)বিকৃত রেখেই।

করসোর কবিতাপাঠঃ https://www.youtube.com/watch?v=GhZchqsN69o




Friday, April 23, 2021

সিম্পসন’স প্যারাডক্স

 

১)

একটা ধাঁধার মত ছোট্ট অঙ্ক দিচ্ছি, মন দিয়ে শুনুন।

ধরা যাক, আপনার পাড়ায় দুটো ইস্কুল, আদর্শ বিদ্যানিকেতন আর হরিপুর মেমোরিয়াল। দুই স্কুলের খুব রেষারেষি, কে কার থেকে বেশী ভালো সেই নিয়ে বিতণ্ডার শেষ নেই। আপনি আবার এই পাড়ার মোড়ল, ঠিক করলেন, একটু খতিয়ে দেখবেন কোথায় কত নম্বর উঠেছে বোর্ডের পরীক্ষায়। দেখতে গিয়ে যা পেলেন, তা হচ্ছে এই – হরিপুরের ছেলেরাও আদর্শের থেকে গড় নম্বর পেয়েছে বেশী, আবার মেয়েরাও বেশী … ধরা যাক, তাদের গড় নম্বর এই রকম (সব-ই মনগড়া)।

 

হরিপুর (ছাত্র সংখ্যা)

আদর্শ (ছাত্র সংখ্যা)

ছেলে

৮৪  (৮০ জন)

৮৫ (২০ জন)

মেয়ে

৮০  (২০ জন)

৮১  (৮০ জন)

 

আপনি এই অব্দি দেখে লিখতে যাচ্ছেন ছেলে-মেয়ে দুই বিভাগেই আদর্শ একটু এগিয়ে, এমন সময় হরিপুরের হেডমাস্টার জিগ্যেস করে বসলেন, আলাদা-আলাদা করে নয়, সব মিলিয়ে কার কত? কী আশ্চর্য কাণ্ড, সব মিলিয়ে দেখলে হরিপুরের গড়ঃ ৮৩.২ আর আদর্শের গড়ঃ ৮১.৮ !

মানে সোজা কথায়, ছেলে-মেয়ে মিশিয়ে দেখলে হরিপুর এগিয়ে, অথচ আলাদা-আলাদা করে আদর্শ? এ কী করে সম্ভব?

মনগড়া আর-ও একটা উদাহরণ দিই? তবে এটা আমার বানানো নয়, বেকার ও ক্রেমার-বাবুর পেপার৪,৫ থেকে তোলা রীতিমত।


টেবিল-টা মন দিয়ে দেখুন। দুটি ট্রিটমেন্ট, এবং আগের মতন দুটিই গ্রূপ – পুরুষ-নারী। প্রথম সারিতে বলছে, শুধু পুরুষদের চিকিৎসায় ট্রিটমেন্ট ‘এ’-র সার্ভাইভাল রেট ৬০%, আর ‘বি’ এর কম (৫০%), আবার শুধু নারীদের চিকিৎসায়, ‘এ’ এবং ‘বি’ এর সার্ভাইভাল রেট যথাক্রমে ৯৫% ও ৮৫%, অর্থাৎ এই বেলাতেও ‘বি’-এর থেকে ‘এ’ ভালো?

এইবার একদম শেষ সারি-টি দেখুন – কম্বাইন করে দেখলে, উলটে গেছে হিসেবনিকেশ – সব মিলিয়ে ‘বি’ ৮০% আর ‘এ’ মাত্র ‘৭২%’। পেপারের টাইটেল ধার করে বললে, “গুড ফর উইমেন, গুড ফর মেন, ব্যাড ফর পিপল”?

এইবারে ধরুন আপনি ডাক্তার অথবা পেশেণ্ট, যদি বেছে নিতেই হয় দুটোর মধ্যে একটা, কোনটা বাছবেন আপনি, ‘এ’ না ‘বি’?

(২)

আদর্শ আর হরিপুর তো মনগড়া, যেমন মনগড়া বেকার-ক্রেমারের টেবিল, কিন্তু এর পরের উদাহরণ-টা আসল, মানে এক্কেবারে সাক্ষাৎ জর্নলের পাতা থেকে।

Charig et al. (1986) এর একটি বিখ্যাত পেপার থেকে কিডনি স্টোনের চিকিৎসার যে ডেটা পাওয়া যায়, সেও একদম এক ছাঁচ। দুটো সার্জিক্যাল চিকিৎসার একটি (“বি”) বড়ো পাথরের জন্যেও ভালো, ছোটোর জন্যেও, অথচ সব মিলিয়ে এগ্রিগেট করলে হিসেব উলটে যায়, দেখা যায় – ‘এ’-র সাফল্যের শতাংশ একটু হলেও বেশী।

 

 

ওপেন সার্জিক্যাল (এ)

ক্লোজড সার্জিক্যাল (বি)

 বড় পাথর

69% (55 / 80)

73% (192 / 263)

ছোট পাথর

87% (234 / 270)

93% (81 / 87)

সব মিলিয়ে

83% (289 / 350)

78% (273 / 350)


এই যে ডিগবাজি খাওয়ার প্যাটার্ণ-টা দেখলেন তিনটে উদাহরণে, রাশিবিজ্ঞানের ভাষায় এর-ই নাম “সিম্পসন’স প্যারাডক্স”১,৩। সহজে বললে, যেখানেই দেখা যায় যে অনেকগুলো গ্রূপে আলাদা করে একটি “ট্রেন্ড” দিব্যি স্পষ্ট (ট্রেণ্ডের বাংলা কি? ধারা?) কিন্তু গ্রূপটুপ জুড়ে দিলেই সে বেমালুম হাওয়া, সেইখানেই গ্রূপের আড়ালে উঁকি মারছেন সিম্পসন।

আসলে হচ্ছেটা কী তাহলে?

প্রোবাবিলিটির আঁক কষলে, বা আরও একধাপ এগিয়ে কজাল (causal) ইনফারেন্সের কায়দায় ডায়াগ্রাম ছবি এঁকে একটা ভীষ্মের শরশয্যার কার্টুন খাড়া করলে লোকে তেড়ে আসবেন তাই একটা সহজ ছবি দিয়েই একটু ব্যাখ্যানা দিই নীচে।

পাশের ছবিটা দেখুন। যদি শুধু নীল রঙের পয়েন্টগুলোকে সরলরেখায় জোড়েন, মনে হবে রেখার অভিমুখ উর্ধ্বে, মানে পজিটিভ ট্রেণ্ড, X বাড়লে Y-ও বাড়বে, আবার লাল রঙের বেলায়-ও তাই। কিন্তু কেউ যদি এসে লাল-নীল সব রঙ মুছে দেন – তাহলে যে সরল-রেখাটি এইবারে আঁকবেন (কালো ডট-ড্যাশ রেখাটি) সেইটি কিন্তু নিম্নগামী।



অর্থাৎ, সিম্পসনের ভাষায়, the trend reverses when groups are combined.

তাহলে কি সব-সময়েই এইরকম গ্রূপ জুড়ে দিলেই ট্রেন্ড পালটে যায়? অবশ্যই না।

হরিপুর আর আদর্শের টেবিল-টা আরেকবার দেখুন। হরিপুরে ২০% ছেলে, ৮০% মেয়ে, আর আদর্শে ঠিক তার উল্টো ! ওই এক-ই টেবিলে যদি হরিপুর আর আদর্শে ছেলে-মেয়ের পারসেন্টেজ না পাল্টাতো, তাহলেই আর অঙ্ক ওল্টাতো না। বিশ্বাস না হলে দুইদিকের পাল্লা সমান করে দেখুন, অঙ্ক মেলে কি না।

বেকারবাবুদের উদাহরণ, আর কিডনি-স্টোনের গল্প-ও তাই। বড়ো পাথরের জন্যে, যেগুলো হয়তো আরও জটিলতর সমস্যা, ডাক্তার-বাবুরা ট্রিটমেন্ট ‘এ’ বেশী ব্যবহার করেছেন, আর ছোটোর জন্যে ‘বি’। কাজেই ট্রিটমেন্ট ‘বি’ নিকৃষ্টতর হলেও, বেশী কঠিন কেসে কম ব্যবহৃত হওয়ার জন্যেই শতকরা হিসেবে এগিয়ে। আবার ‘এ’ হয়তো আসলেতে উন্নততর পদ্ধতি, কিন্তু তাকেও বেশীবার দিতে হচ্ছে কঠিন পরীক্ষা।

প্রথম উদাহরণে জেণ্ডার (লিঙ্গ) আর দ্বিতীয় উদাহরণে রোগের জটিলতা (সিভিয়ারিটি) – এদের রাশিবিজ্ঞানের ভাষায় বলা হয় “লার্কিং ভেরিয়েবল”, অর্থাৎ ঘাপটি মেরে বসে থাকা চলরাশি। এদের না ধরলেই হিসেব উলটে সে এক বিচ্ছিরি কাণ্ড !

(৩)

শেষ করবো আরও দুটো উদাহরণ দিয়ে, যদিও আগের পর্বের মতন এইবারেও বলাটা অন্যায় হবে না যে চোখ মেলে চাইলে চাদ্দিকে বিস্তর প্রাঞ্জল উদাঃ দেখতে পাবেন।

প্রথমটা বার্কলি বিশ্ববিদ্যালয়ের – ১৯৭৩ সালে যাদের বিরুদ্ধে লিঙ্গবৈষম্যের অভিযোগ ওঠে। সেই বছরের গ্র্যাজুয়েট স্কুলে ভর্তির তথ্যে দেখা যায়, পুরুষ আবেদনকারীদের ৪৪% আর মহিলা আবেদনকারীদের ৩৫% উত্তীর্ণ, এবং ৪৪-৩৫ এর ব্যবধান নামমাত্র নয়। এই অভিযোগের ঠিক পরেপরেই ৭৫ সালে পিটার বিকেল ও তাঁর সহকর্মীরা একটি পেপারে বার্কলির সবকটি ডিপার্টমেন্টের ভর্তির পরিসংখ্যান খতিয়ে দেখেন। আবার-ও সেই সিম্পসন’স প্যারাডক্স। দেখা যায় ৮৫-র মধ্যে ৬টি ডিপার্টমেন্টের বায়াস পুরুষদের বিপক্ষে, আর ৪টিতে মহিলাদের বিপক্ষে … এবং “examination of the disaggregated data reveals … about as many units appear to favor women as to favor men”. বিকেল-দের বক্তব্য ছিলো, এই উদাহরণটির লার্কিং ভেরিয়েবল ডিপার্ট্মেন্টগুলি কতোটা কম্পিটিটিভ সেই তথ্য। ওঁদের-ই অ্যাবস্ট্রাক্ট থেকেই সোজা চোতা করে দিই দুই লাইনঃ

“The bias in the aggregated data stems not from any pattern of discrimination on the part of admissions committees, which seem quite fair on the whole, but apparently from prior screening at earlier levels of the educational system. Women are shunted by their socialization and education toward fields of graduate study that are generally more crowded, less productive of completed degrees, and less well funded, and that frequently offer poorer professional employment prospects.”

(এইখানে বলে রাখা উচিত যে, শিক্ষা-ক্ষেত্রে লিঙ্গবৈষম্য আছে এবং ভয়ানকভাবেই আছে বলে মনে করি, বার্কলির এই উদাহরণ সেটাকে ডিস্প্রুভ করে না। এই বিষয় নিয়ে বলার অনেক কিছু থাকলেও এই পরিসরে সেই প্রসঙ্গ তুললাম না।)

শেষ করবো এমন একটা উদাহরণ দিয়ে যেটা আমাদের এই দুহাজার কুড়ি সালে এসে কান ধরে শিখিয়ে গেলো যে সিম্পসনের প্যারাডক্স যতোই বইয়ের পাতায় পড়ি, আসলে কিছুই মাথায় ঢোকেনি।

আর টেবিল নয়, বরং একটা ছবি দেখাবো। Kügelgen et al. দের পেপার থেকে (মাপ করবেন বাংলা উচ্চারণ পারলাম না)।

ডানদিকের ছবিটি খেয়াল করে দেখুন। ইটালি আর চীনের, বয়েস অনুযায়ী, কেস ফেটালিটি রেট, অর্থাৎ কনফার্মড কেসের যত ভগ্নাংশ মারা গেছেন। পুরো প্লটে দেখা যাচ্ছে একদম ছোটো ০-৯ থেকে শুরু করে “৮০+” অব্দি প্রত্যেকটি এজ-গ্রূপেই চীনের CFR বেশি, অথচ যেই pool করলেন, উলটে গেলো - একদম ডানদিকে “টোটাল” ক্যাটেগরির দিকে তাকান, নীল বারের উচ্চতা কমলা-র থেকে কম।




কী করে হলো এরকম? আবার সেই হরিপুর-আদর্শ ইস্কুলে ফিরে যান। সেখানে যেমন দুটো ইস্কুলের ছেলেমেয়ের অনুপাত সমান ছিলো না। এইখানেও ইটালি ও চীনের বয়স-অনুসারে কোভিড-আক্রান্ত বিন্যাস আলাদা, সত্যি বলতে বেশ অনেকটাই আলাদা। চীনের বেশীর ভাগ আক্রান্ত ৩০-৬০ এর মধ্যে আর ইটালীর আক্রান্ত-দের সবাই প্রায় ৬০+। এই ছবিতে সেইটিই “লার্কিং ভেরিয়েবল”।

এক পাতা লিখবো ভেবে আপাততঃ চার-পাঁচ পাতার নামিয়ে দিয়েছি কাজেই এইখানেই ইতি টানলাম। সিম্পসন’স প্যারাডক্স এর গল্পের যদিও ইতি নেই, আদি আছে কি না সে-ও বলা শক্ত। এই লেখাটায় টেকনিক্যাল খুঁটিনাটি সব বাদ দিলাম, তবে নীচে রেফারেন্সের তিন-নম্বরে জুডিয়া পার্লের একটা আর্টিকেল পাবেন, ইচ্ছে হলে ওইটি পড়ে দেখতে পারেন।

সিম্পসন’স প্যারাডক্স ‘অমনিপ্রেজেন্ট’, কাজেই মোলাকাত তার সাথে হবেই, জানতে বা অজান্তে … তবে আশা এই যে, একবার গল্পের মত করে ব্যাপার-টা বুঝে নিলে তাকে দেখলে আঁতকে উঠবেন না। বরং একটা উদাহরণ মনে মনে গেঁতে নিন, কখন কোথায় চক-ডাস্টার হাতে জ্ঞানের গোঁসাই হয়ে ট্যান দিতে হবে কেউ বলতে পেরেছে?

 

রেফারেন্সঃ

1)    E. H. Simpson, “The Interpretation of Interaction in Contingency Tables”, Journal of the Royal Statistical Society. Series B (Methodological) , 1951, Vol. 13, No. 2 (1951), pp. 238-241

1)

2)    Charig, C. R., Webb, D. R., Payne, S. R., & Wickham, J. E. (1986). Comparison of treatment of renal calculi by open surgery, percutaneous nephrolithotomy, and extracorporeal shockwave lithotripsy. British medical journal (Clinical research ed.), 292(6524), 879–882. https://doi.org/10.1136/bmj.292.6524.879

 

3)    Understanding Simpson’s Paradox, Judea Pearl, Technical report, https://ftp.cs.ucla.edu/pub/stat_ser/r414.pdf

 

4)    Understanding Simpson’s paradox using a graph, Andrew Gelman’s blog.  https://statmodeling.stat.columbia.edu/2014/04/08/understanding-simpsons-paradox-using-graph/

 

5)    Stuart G. Baker and Barnett S. Kramer. “Good for Women, Good for Men, Bad for People: Simpson's Paradox and the Importance of Sex-Specific Analysis in Observational Studies” Journal of Women's Health & Gender-Based Medicine.Nov 2001.867-872. http://doi.org/10.1089/152460901753285769

 

 

6)    Wang, B., Wu, P., Kwan, B., Tu, X. M., & Feng, C. (2018). Simpson's Paradox: Examples. Shanghai archives of psychiatry, 30(2), 139–143. https://doi.org/10.11919/j.issn.1002-0829.218026

 

7)    P. J. Bickel, E. A. Hammel, J. W. O'Connell, “Sex Bias in Graduate Admissions: Data from Berkeley Measuring bias is harder than is usually assumed, and the evidence is sometimes contrary to expectation”. https://homepage.stat.uiowa.edu/~mbognar/1030/Bickel-Berkeley.pdf

 

8)    von Kügelgen, J., Gresele, L., & Schölkopf, B. (2020). Simpson's paradox in Covid-19 case fatality rates: a mediation analysis of age-related causal effects. arXiv preprint arXiv:2005.07180. https://arxiv.org/abs/2005.07180