ও মা, এতো কান্ড করে পাঞ্জাবি পরে গলায় পাউডার লাগিয়ে গিয়ে দেখি আমি একাই এতো বড়ো কবিতা গাঁতিয়ে এসেছি, বাকি সব দামড়া দামড়া খোকাখুকু "আতা গাছে তোতা পাখি" বলেই কেটে পড়ছে (যেটা মাইরি দাদুর লেখাও নয়), একজন তাও "আমাদের ছোট নদী" বললো কয়েক লাইন ! বুঝলাম এ কেরি প্যাকারের ওয়ান-ডে পৃথিবী, এখানে গাভাস্কর হওয়া বৃথা ... আমিও নির্ভীক চিত্তে স্টেজে উঠলাম, বললাম "নমস্কার, আজ আমি আপনাদের ...", তারপর আর্ধেক কবিতা গড়গড় করে বলে বাবার দিকে ফিরে মাইকেই জিগ্যেস করলাম "বাবা, বাকিটা বলবো?" ... বাবা হাত দিয়ে মুখ ঢাকছিলেন না কান বোঝা গেলো না, কিন্তু "মৌনং সম্মতিলক্ষণং" ... অতএব, আমি দর্শকদের দিকে ফিরে বললাম, "আচ্ছা বাবা বোধহয় চাইছেন আমি বাকিটাও বলি, তাহলে শুনুন বাকিটা !"
প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য
এ পাড়ায় আমার নাম-ডাক নেই, এককালে যাও একটা ডাক-নাম ছিলো তাও হারিয়ে গেছে। আমি এখানেই একটা কলেজে পড়াই, আর কেউ না দেখলেই রাশি-রাশি কাগজ-পত্রে দুর্বোধ্য আঁক কাটি। একটা আঁকে কঠিন রোগ সেরে যায়, একটা আঁকে চোর ধরা পড়ে, আবার একটা আঁক কষলেই বাড়ির অ্যান্টেনায় একটা পাখি এসে দোল খায় ! তবু এই বয়সেও মাঝে-মাঝেই অঙ্ক আটকে যায়, তখন এই গ্রহান্তরের একটা নির্জন গুহায় বসে ছাদের দিকে চেয়ে কল্পনা করে নি একটা ছোট্ট ঘুলঘুলি, আর একটা চড়ুই এসে তাতে বসছে, আবার উড়ে যাচ্ছে ... এই যে দু-একটা গল্প, সেই চড়ুইটার কাছেই শুনেছিলাম !
Sunday, May 8, 2022
পঁচিশে
ও মা, এতো কান্ড করে পাঞ্জাবি পরে গলায় পাউডার লাগিয়ে গিয়ে দেখি আমি একাই এতো বড়ো কবিতা গাঁতিয়ে এসেছি, বাকি সব দামড়া দামড়া খোকাখুকু "আতা গাছে তোতা পাখি" বলেই কেটে পড়ছে (যেটা মাইরি দাদুর লেখাও নয়), একজন তাও "আমাদের ছোট নদী" বললো কয়েক লাইন ! বুঝলাম এ কেরি প্যাকারের ওয়ান-ডে পৃথিবী, এখানে গাভাস্কর হওয়া বৃথা ... আমিও নির্ভীক চিত্তে স্টেজে উঠলাম, বললাম "নমস্কার, আজ আমি আপনাদের ...", তারপর আর্ধেক কবিতা গড়গড় করে বলে বাবার দিকে ফিরে মাইকেই জিগ্যেস করলাম "বাবা, বাকিটা বলবো?" ... বাবা হাত দিয়ে মুখ ঢাকছিলেন না কান বোঝা গেলো না, কিন্তু "মৌনং সম্মতিলক্ষণং" ... অতএব, আমি দর্শকদের দিকে ফিরে বললাম, "আচ্ছা বাবা বোধহয় চাইছেন আমি বাকিটাও বলি, তাহলে শুনুন বাকিটা !"
Friday, March 25, 2022
ব্যক্তিগত অথবা নৈতিক
"Those who choose the lesser evil forget very quickly that they chose evil."
জতুগৃহের সামনে দাঁড়িয়ে তত্ত্বকথা অশ্লীল মনে হয়, তাও ... অর্ধশতাব্দী আগে Hannah Arendt এই চমৎকার কথাটা বলেছিলেন, যা (দুর্ভাগ্যবশতঃ) পুরোনো হওয়ার নয় কোনোদিন-ইঃ
বলেছিলেন, সাংঘাতিক গণহত্যার পরেপরেই গোটা মানবসভ্যতাকেই কাঠগড়ায় দাঁড় করাতে ইচ্ছে করে, যেমনটি হয়েছিলো জর্মনিতে, কিন্তু সেই collective guilt আসলে একটা ফ্যালাসি বই কিছু না, "There is no such thing as collective guilt or collective innocence; guilt and innocence make sense only if applied to individuals"!
অকল্পনীয় বাস্তবের সামনে দাঁড়িয়ে আমরা বুঝতে পারি না, কোথা থেকে কী হয়ে গেলো, বুঝতে পারি না একটু একটু করে আমাদের-ই প্রত্যেক দিনের আপোষ, এক-একটা সামান্য নৈতিক বিচ্যুতি জমতে জমতে একদিন এমন জায়গায় পৌঁছে যায় যে অপরাধের যথেষ্ট শাস্তি নেই আমাদের অভিধানে, আর ক্ষমা তো প্রশ্নাতীত।
কিন্তু তবুও ব্যক্তিগত দায়িত্ববোধ তো একেবারেই এড়ানো যায় না, তাই না? আমি-আপনি কেউ তার ব্যতিক্রম নন। সে দায়িত্ববোধ শুধু হাওয়া মেপে দিকে-দিগন্তরে জাজমেন্টের বাণী ছড়িয়ে আর নিজেকে ছাড়া বাকি সবাইকেই কাঠগড়ায় তুলে শেষ হয় না। সেই দায়িত্ববোধের একটুখানি বোধ করি খানিকটা অকৃত্রিম ঘৃণা আর রাগ মনের মধ্যে পুষে রাখা, কারণ এখনো অনেক দীর্ঘ রাত্রি বাকী।
অ্যারেন্ট বলেছিলেন যে নিতান্ত সাধারণ মানুষ যারা পিষে যাবেন জেনেও ঐ বিশাল চাকার সামনে দাঁড়িয়ে পড়েছিলেন, আর প্রতিবাদ করতে সাহস করেছিলেন, তাদের আর কিছু ছিলো না নৈতিক বিশ্বাসটুকু ছাড়া। সক্রেটিসের মতো তারাও ভাবতে পেরেছিলেন, "it is better to suffer an injustice than to commit one!”
সেইটুকুও কি আমার/আমাদের আর অবশিষ্ট আছে? জানি না। তবে নিজের সাথে একান্তে একটু অপ্রিয় কথা বলাই যায়, নিজেকে নিজে অস্বস্তিকর প্রশ্ন-ও করাই যায়, অথবা সব কিছু শেষ হয়ে গেলেও নিজের হাতের দিকে তাকিয়ে আবছা অথবা স্পষ্ট দাগ-ও খোঁজাই যায়। প্রকাশ্যে হোক বা না হোক, যদ্দিন বেঁচে আছি, সেই নিজের সাথেই তো বাঁচতে হবে, তাই না?
---
Excerpts from “Personal Responsibility Under Dictatorship,” Hannah Arendt’, available here: https://grattoncourses.files.wordpress.com/2016/08/responsibility-under-a-dictatorship-arendt.pdf
Hannah Arendt, Image credit: Barbara Niggl Radloff, CC BY-SA 4.0 via Wikimedia Commons |
Sunday, November 21, 2021
প্রোফেশনাল ডেভেলপমেন্ট
গতকাল একটা প্রোফেশনাল ডেভেলপমেন্ট ওয়ার্কশপে গেছিলাম। যাওয়ার যে আদৌ ইচ্ছে ছিলো এমন না, কিন্তু আগের বছর একটাতেও যাইনি বলে এই বছর একরকম কান মুলেই আর কি ...
তা যাই হোক, গিয়ে দেখি একজন বেশ ডাঁটোয়াল ও সফল প্রোফেসর-গোছের লোক বিবিধ জ্ঞান দিচ্ছেন কী ভাবে রিসার্চ করতে হয়, কী ভাবে গ্রান্ট প্রোপোজালে ঝুড়ি ঝুড়ি ঢপ দিতে হয় ইত্যাদি। 'দশে মিলি করি হ্যাজ, হারি-জিতি নাড়ি ল্যাজ' টাইপের বাণী শুনছি। শুনতে শুনতে উদাস হয়ে ফলস সিলিং-এ নেই-কড়িকাঠ গুনছিলাম, একটুস তন্দ্রা এসে গেছিলো। এমন সময়ে হঠাৎ দেখি বক্তা আমার দিকে-ই তাকিয়ে বেশ জোরের সঙ্গে বললেন, "we should not focus too much on Netflix!"
এদিকে আমি আগের দিন-ই একটা অতি খাজা সিনেমা দেখে রাত করে ঘুমিয়েছি। সবেগে মাথা নেড়ে বললাম, তা বটেই তো, ইট ইজ সাচ আ ওয়েস্টেজ অফ টাইম, তবে কি না খুব-ই টেম্পটিং। মাস্কের আড়ালে বক্তার মুখে বোধহয় হাসি ফুটে উঠলো, "ইয়েস মাই ফ্রেণ্ড!" বলে তিনি আরো মিনিট পাঁচেক নেটফ্লিক্সের কুফল নিয়ে বলতে লাগলেন, কেন আমাদের চিরতরে বর্জন করা উচিৎ ইত্যাদি ... আমি একটু অবাক-ই হচ্ছিলাম যে এতো রাগ কেনো রে বাবা। শেষের দিকে বুঝলাম, নেটফ্লিক্স নয়, মেট্রিক্স। উনি বলতে চাইছিলেন, এই খালি কটা পেপার, কটা গ্র্যান্ট এইসব হিসেব না কষে একটু ভালো কাজে মন দিতে।
যাই হোক, ঠিক করলাম বাকী ওয়ার্কশপে আর কোনো কথাই বলবো না, কে না জানে, তাবৎ শোভন্তি মূর্খম ... অথবা বোবার কোনো শত্রু নাই। কিন্তু হলো কী, শেষের দিকে একটা সাদা পাতা সবাইকে ধরিয়ে দিয়ে বক্তা বললেন, 'পাঁচ মিনিট সময় দিচ্ছি, রাইট ডাউন হোয়াট ইউ মিন বাই পি-ভ্যালুজ!'
এইবার তো কমন কোশ্চেন পড়েছে। আমি কোনোদিকে না তাকিয়ে এক কোণে একটা নর্ম্যাল কার্ভ, তার এক লেজে একটু শেডিং ইত্যাদি দিয়ে বেশ জমিয়ে এক প্যারা লিখেছি। লাস্টে উপসংহার লিখবো লিখবো করছি যে সিপেমের ন্যায় প্রবল-পরাক্রান্ত পি-ভ্যালুর-ও আজ অশেষ দুর্দিন, বেইজিয়ান-রা উহাকে গালি না দিয়ে জল খান না। এমন সময় দেখলাম পাশের ছেলেটা নিজের চোতা দেখে পড়তে আরম্ভ করলো "ইন্টিগ্রিটি, ডিসিপ্লিন, ট্রাস্ট ..." বুঝলাম এতোদিনে কান-টা সত্যিই গেছে, লিখতে বলা হয়েছিলো "key values"। অফ কোর্স। যাই হোক, খাতাটা আর জমা দিতে হয়নি এই আমার ভাগ্য।
তবে কি না একেবারে দুঃখের-ও কিছু নেই। মহামানুষদের সাথে এরকম হয়েই থাকে। শুনেছি দেরিদার টকে গিয়ে এক হল ভর্তি লোক শুনেছিলেন তিনি "cows" নিয়ে মনোজ্ঞ ভাষণ দিচ্ছেন। দিচ্ছেন তো দিয়েই যাচ্ছেন, লোকেও বুঝুক ছাই না বুঝুক, নোট টুকেই যাচ্ছে। ব্রেকের পর নাকি দেরিদা এসে বলেন, 'I'm told it's pronounced chaos'!
এই গল্পের-ই আর এক সিক্যুয়েলে, দুই ছাত্র একবার কেম্ব্রিজ ক্যাফেতে দেরিদার সাথে দেখা করে জিগ্যেস করে, সিনেমা নিয়ে ওঁর মতামত কী? বিরক্ত দেরিদা বলেন, ওঁর মনে হয়, it is inescapable, it is everywhere, it's in the bread, it's in the coffee! বলাই বাহুল্য, দেরিদা ভেবেছিলেন, ওঁকে cinnamon নিয়ে কিছু জিগ্যেস করা হয়েছে।
যাই হোক, এই আমার গল্প হলো সারা। কিন্তু সুকুদা বলে গেছেন, 'যদু আর বংশীধর যমযজ ভাই তারা', যাই বংশীধরকে খুঁজি।
Tuesday, July 13, 2021
এভাবেও ফিরে আসা যায়?
একটাই কবিতা, জীবনে কতোবার কতরকম ভাবে ফিরে আসে!
"All scientific work is incomplete - whether it be observational or experimental. All scientific work
is liable to be upset or modified by advancing knowledge. That does not confer upon us a freedom to ignore the knowledge we already have, or to postpone the action that it appears to demand at
a given time.
Who knows, asked Robert Browning, but the world may end tonight? True, but on available
evidence most of us make ready to commute on the 8.30 next day."
Friday, July 9, 2021
“ফসল কাটা মাঠে এখন সদ্যকৃত বধ্যভূমি”
আমি লোরকা-র কথা প্রথম পড়ি শুভঙ্করকে লেখা নন্দিনীর চিঠি-তে,
“নতুন কবিতা কিছু লিখেছো কি?
লোরকা পড়ছো খুব? বেশি পড়ো, কম সিগারেট খাও”
(কথোপকথন ৩, পূর্ণেন্দু পত্রী)
দিন-কয়েক পরে একটা বাংলায় অনুবাদ করা লোরকার কবিতার বই পেয়ে যাই কলেজ স্ট্রীটে, পড়তে পড়তে প্রেমে পড়ে যাই নিজের অজান্তে। কি অদ্ভুত
ম্যাজিকে লোরকার কবিতার প্রাগৈতিহাসিক আন্দালুশিয়া হয়ে যায় আমার-ই ভিটেমাটি - তার বইয়ের পাতায় কান পাতলে শুনতে পাই ফ্ল্যামেঙ্কো-র ছন্দ, টের পাই অবিকল শরীরের
উত্তাপ আর মরা বাতাসে ফিসফাস করে বয়ে চলে ‘সনেটস অফ ডার্ক লভ’-এর অস্ফুট গোঙানি আর
জমে-থাকা চিৎকার ... অনন্ত কবরের তলা থেকে উঠে আসা দেহহীন প্রেতশব্দের মতো।
মাত্র আটত্রিশ বছর বয়সে, ১৯শে আগস্ট, ১৯৩৬, খুন করা হয় লোরকা-কে, গ্রানাডা-র তখতে তখন উগ্র-জাতীয়তাবাদী ফ্যালাঞ্জিস্ট
গুন্ডাবাহিনী, আর লোরকা? সোশ্যালিস্ট, স্পষ্টবক্তা, মুক্তচিন্তক, তায় সমকামী, ফ্যাসিস্ত রাষ্ট্রযন্ত্রের সাক্ষাৎ জুজু। তিরিশ-তিরিশটা বছর
লেগেছিলো (১৯৭০ অব্দি) শুধু এই কথাটুকু প্রকাশ্যে স্বীকার করতে যে লোরকার খুন
ব্যক্তিগত দ্বন্দ্বে-ঈর্ষায় নয়, বরং হয়েছিলো একটি
রাষ্ট্রশক্তির হাতে – তাঁর বধ্যভূমি আজ-ও নিশানাহীন।
১৭-ই আগস্ট, ১৯৩৬, ভোরের আলো
ফুটতে তখনো দেরী খানিকটা। গ্রানাডার ঠিক বাইরে যে মেঠো রাস্তাটা জুড়েছে ভিজনার আর আলফাকার
শহর-কে, সেইখানে থামলো একটি গাড়ি – দরজা খুলে একে একে নেমে এলেন চারজন বন্দী আর পাঁচজন
বন্দুকধারী সৈন্য। বন্দীদের দুজন নৈরাজ্যবাদী বুলফাইটার, একজন পক্ককেশ স্কুলশিক্ষক
যাঁর একটি পা কাঠের, আর চতুর্থ ব্যক্তিটির পরণে একটি ব্লেজার আর শাদা পাজামা, অন্ধকার
আন্দালুশিয়ান আকাশের নীচে উদ্যত মাউজার রাইফেল আর অ্যাস্ট্রা-৯০০ পিস্তলের নিশানার
তাঁরা হেঁটে যাচ্ছেন আল পেরিয়ে একটি জমিতে, জলপাই গাছের সারি উজ্জ্বল ভাসমান হয়ে আছে
ঘাতকদের গাড়ির তীব্র হেডলাইটের আলোয়। ওঁরা জানেন সেই রাত্রিটির শেষ নেই।
লোরকা জানতেন, লোরকা-রা যেমন জানেন, মৃত্যুর অনেক আগেই – আর তিনি যেন মিশে যান
মার্কেসের সান্তিয়াগো নাসারের সাথে, হত্যার আগেই ঘাতকের
ছুরি থেকে ঝরতে থাকে রক্ত, ‘Fable and round of three friends’ এ অভ্রান্ত তার
এপিটাফঃ
“Then I realized I had
been murdered.
They looked for me in cafes, cemeteries and
churches
.... but they did not find me.
They never found me?
No. They never found me.”
১৮৯৮-এ উচ্চবিত্ত পরিবারে
জন্ম। শুধু সোনার চামচ-ই নয়, প্রতিভাও নিয়েই এসেছিলেন স্বল্পায়ু জীবনটুকুর তলানি অব্দি
শুষে নেবেন বলেই যেন। একাধারে সঙ্গীতজ্ঞ, নতুন ধারার কবি, আবার রঙ্গমঞ্চ-ভরিয়ে-ফেলা
নাট্যকার – কী-ই না পারতেন গার্সিয়া? জেনারেশন অফ টোয়েন্টি-সেভেনের কবি শুধুই যে নতুন
বাঁকে নিয়ে গেছিলেন স্প্যানিশ কবিতাকে তাই-ই নয়, ফোকলোরের সঙ্গে মিশিয়ে দিতে পেরেছিলেন
বড়ো হয়ে ওঠার আন্দালুশিয়ার জিপসি-সুর। নেরুদা লোরকাকে নিয়ে উচ্ছ্বসিত হয়ে বলেছিলেন,
“I have never seen grace and genius, a winged heart and a crystalline
waterfall, come together in anyone else as they did in him.”
কিন্তু
সেই ডানাওয়ালা হৃদয়ের মধ্যেই সিসিফাসের পাথর-প্রমাণ ভার - ভয়ঙ্কর হোমোফোবিক সমাজে একজন
সমকামী মানুষ তিনি, সেই চেপে রাখা অস্ফুট গোঙানি ছড়িয়ে-ছিটিয়ে লোরকার প্রায় সব লেখায়,
কোথাও সে বিরহ-অদর্শন, কোথাও ভয়ানক ট্রাজিক পরিণতি প্রেমের।
“The whole world’s broken.
Only silence remains.
(Leave me here, in this field, weeping.)”
[“Poem of the
Solea”]
লোরকা যখন আস্তে আস্তে হয়ে উঠছেন
স্পেনের কণ্ঠস্বর, পর্দার আড়াল থেকে শ্বদন্ত নিয়ে বেরিয়ে পড়েছে ফ্যাসিজমের দৈত্যরা।
দীর্ঘদিন বামপন্থী শাসনে আনা হয়েছে একের পর এক পরিবর্তন – নারীর সমানাধিকার, কৃষিক্ষেত্রে
ভূমিহীনদের রক্ষা করার নতুন আইন, চার্চ ও মিলিটারির জনজীবনে প্রতিপত্তি খর্ব করার একের
পর এক নীতি। আর যতো সামনের দিকে এগোতে চেষ্টা করেছে স্পেন, ততোই বিত্তবান, ক্ষমতাবান,
ঘৃণার কারবারিরা এক হয়েছেন জেনারেল ফ্র্যাঙ্কোর বাহিনীর আশ্রয়ে, সেই কুখ্যাত ঘাতকদের
দল, যাঁদের স্লোগান ছিলো, “ভিভা লা মুয়ের্তে – মৃত্যু দীর্ঘজীবী হোক”।
সেই ফ্যাসিস্ত শক্তির রক্তচক্ষু
উপেক্ষা করে লোরকা লিখে চলেছেন তার কবিতা, আকাশে উড়িয়ে দিয়েছেন তার ইশ্তেহারঃ
“The artist, and particularly the poet, is always an
anarchist in the best sense of the word. He must heed only the call that arises
within him from three strong voices: the voice of death, with all its
foreboding, the voice of love and the voice of art.”
১৯৩৬-এ হত্যা, ১৯৫৩ অব্দি সমস্ত লেখার উপর নিষেধাজ্ঞা, ১৯৭৩-এ ফ্রানিসিস্কো ফ্র্যাঙ্কো মারা না যাওয়া অব্দি লোরকার মৃত্যু (অথবা জীবন) নিয়ে আলোচনা-ও ছিলো অবৈধ, ১৯৮৪-র আগে অব্দি পাওয়াই যায়নি তার ‘ডার্ক লভ’-এর সনেটগুচ্ছ, এখনো কেউ জানেনা শেষ খসড়া কোথায় – তবু লোরকা বেঁচে আছেন, থাকবেন, আর স্পেনের ফ্যাসিস্ত ফ্যলাঞ্জিস্ট গুন্ডার দল নেই। কবিমাত্রেই প্রফেট হন কি না বলা খুব শক্ত, তবে লোরকা জানতেন শেষ সংলাপটি তাঁর-ই, বলেছিলেন পৃথিবীর আর সব জায়গায় মৃত্যুই শেষ অঙ্ক, যার পদশব্দ পেলেই পর্দা টেনে দিই আমরা, কিন্তু স্পেন আলাদা, স্পেনে মৃত্যু নিজের হাতে উন্মোচন করে পর্দা’। তিনিই বলেছিলেন না “A dead man in Spain is more alive than a dead man anywhere else in the world”?
রুইজ আলোনসো, যে অফিসার-ইন-চার্জ
সেই ১৬-ই আগস্টের রাত্রে একশো ফ্যালাঞ্জে সৈন্য নিয়ে ঘিরে ফেলেছিলেন লোরকার বাল্যবন্ধুর
বাড়ি, খুনের পরেই তিনি বলেছিলেন, “He’s done more damage with a pen than others
have with a pistol”!
সত্যি বলতে, প্রথমবার বিশ্বাস
হয়নি, ভাবতে পারিনি একজন দুর্বল কবিকে জল্লাদবাহিনী টেনে দাঁড় করাচ্ছে ফায়ারিং
স্কোয়াডের সামনে? একজন কবি-কে এতো ভয়?
অথচ পালটায় না কিছুই, অন্ধ,
দিকশূন্য মানুষ দৌড়ে মরে সেই এক-ই বৃত্তে।
দেশ পালটে যায়, শাসকের কুনাট্যরঙ্গের
মঞ্চ বদলে যায়। কিন্তু আজ-ও যতদূর চোখ যায় দেখা যায় কবিকে, তার স্পর্ধা, তার ধক, তার
সামান্য কটি বজ্রবিদ্যুৎময় খাতা নিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন ফ্যাসিস্ত শাসকের চোখে চোখ রেখে।
আর পালটায় না মানুষের ভেতরের-ও
ভেতরে ঘৃণার সেই রক্তবীজের ঝাড় - “plus ca change plus ca meme chose”!
১৯শে অগাস্ট, ১৯৩৬। লোরকার
মৃত্যুর পর রাষ্ট্রযন্ত্র বলেছিলো, “he died because he was a fagg*t”!
জাম্প কাট, গত মঙ্গলবার, ৬-ই
জুলাই, ২০২১। স্যামুয়েল লুইজ মুনিজ। ২৪-বছরের নার্সিং-এর ছাত্রটিকে ১২ জন উন্মত্ত মানুষ
কিল-চড়-ঘুঁষিতেই মেরে ফেলেছে, স্পেনের একটি নাইটক্লাবের বাইরে।
তাঁর একমাত্র দোষ? সে সমকামী।
Tuesday, May 4, 2021
অসংখ্য সমুদ্র বয়ে যাচ্ছে
Friday, April 23, 2021
সিম্পসন’স প্যারাডক্স
১)
একটা ধাঁধার মত ছোট্ট অঙ্ক দিচ্ছি, মন দিয়ে শুনুন।
ধরা যাক, আপনার পাড়ায় দুটো ইস্কুল, আদর্শ বিদ্যানিকেতন আর হরিপুর মেমোরিয়াল।
দুই স্কুলের খুব রেষারেষি, কে কার থেকে বেশী ভালো সেই নিয়ে বিতণ্ডার শেষ নেই। আপনি
আবার এই পাড়ার মোড়ল, ঠিক করলেন, একটু খতিয়ে দেখবেন কোথায় কত নম্বর উঠেছে বোর্ডের পরীক্ষায়।
দেখতে গিয়ে যা পেলেন, তা হচ্ছে এই – হরিপুরের ছেলেরাও আদর্শের থেকে গড় নম্বর পেয়েছে
বেশী, আবার মেয়েরাও বেশী … ধরা যাক, তাদের গড় নম্বর এই রকম (সব-ই মনগড়া)।
|
হরিপুর (ছাত্র সংখ্যা) |
আদর্শ (ছাত্র সংখ্যা) |
ছেলে |
৮৪ (৮০ জন) |
৮৫ (২০ জন) |
মেয়ে |
৮০ (২০ জন) |
৮১ (৮০ জন) |
আপনি এই অব্দি দেখে লিখতে যাচ্ছেন ছেলে-মেয়ে দুই বিভাগেই আদর্শ একটু এগিয়ে,
এমন সময় হরিপুরের হেডমাস্টার জিগ্যেস করে বসলেন, আলাদা-আলাদা করে নয়, সব মিলিয়ে কার
কত? কী আশ্চর্য কাণ্ড, সব মিলিয়ে দেখলে হরিপুরের গড়ঃ ৮৩.২ আর আদর্শের গড়ঃ ৮১.৮ !
মানে সোজা কথায়, ছেলে-মেয়ে মিশিয়ে দেখলে হরিপুর এগিয়ে, অথচ আলাদা-আলাদা
করে আদর্শ? এ কী করে সম্ভব?
মনগড়া আর-ও একটা উদাহরণ দিই? তবে এটা আমার বানানো নয়, বেকার ও ক্রেমার-বাবুর
পেপার৪,৫ থেকে তোলা রীতিমত।
টেবিল-টা মন দিয়ে দেখুন। দুটি ট্রিটমেন্ট, এবং আগের মতন দুটিই গ্রূপ – পুরুষ-নারী।
প্রথম সারিতে বলছে, শুধু পুরুষদের চিকিৎসায় ট্রিটমেন্ট ‘এ’-র সার্ভাইভাল রেট ৬০%, আর
‘বি’ এর কম (৫০%), আবার শুধু নারীদের চিকিৎসায়, ‘এ’ এবং ‘বি’ এর সার্ভাইভাল রেট যথাক্রমে
৯৫% ও ৮৫%, অর্থাৎ এই বেলাতেও ‘বি’-এর থেকে ‘এ’ ভালো?
এইবার একদম শেষ সারি-টি দেখুন – কম্বাইন করে দেখলে, উলটে গেছে হিসেবনিকেশ
– সব মিলিয়ে ‘বি’ ৮০% আর ‘এ’ মাত্র ‘৭২%’। পেপারের টাইটেল ধার করে বললে, “গুড ফর উইমেন,
গুড ফর মেন, ব্যাড ফর পিপল”?
এইবারে ধরুন আপনি ডাক্তার অথবা পেশেণ্ট, যদি বেছে নিতেই হয় দুটোর মধ্যে
একটা, কোনটা বাছবেন আপনি, ‘এ’ না ‘বি’?
(২)
আদর্শ আর হরিপুর তো মনগড়া, যেমন মনগড়া বেকার-ক্রেমারের টেবিল, কিন্তু এর
পরের উদাহরণ-টা আসল, মানে এক্কেবারে সাক্ষাৎ জর্নলের পাতা থেকে।
Charig et al. (1986) এর একটি বিখ্যাত পেপার২ থেকে কিডনি স্টোনের
চিকিৎসার যে ডেটা পাওয়া যায়, সেও একদম এক ছাঁচ। দুটো সার্জিক্যাল চিকিৎসার একটি (“বি”)
বড়ো পাথরের জন্যেও ভালো, ছোটোর জন্যেও, অথচ সব মিলিয়ে এগ্রিগেট করলে হিসেব উলটে যায়,
দেখা যায় – ‘এ’-র সাফল্যের শতাংশ একটু হলেও বেশী।
|
ওপেন সার্জিক্যাল (এ) |
ক্লোজড সার্জিক্যাল (বি) |
বড় পাথর |
69% (55 / 80) |
73% (192
/ 263) |
ছোট পাথর |
87% (234 / 270) |
93% (81
/ 87) |
সব মিলিয়ে |
83% (289
/ 350) |
78% (273 / 350) |
এই যে ডিগবাজি খাওয়ার প্যাটার্ণ-টা দেখলেন তিনটে উদাহরণে, রাশিবিজ্ঞানের
ভাষায় এর-ই নাম “সিম্পসন’স প্যারাডক্স”১,৩। সহজে বললে, যেখানেই দেখা যায়
যে অনেকগুলো গ্রূপে আলাদা করে একটি “ট্রেন্ড” দিব্যি স্পষ্ট (ট্রেণ্ডের বাংলা কি? ধারা?)
কিন্তু গ্রূপটুপ জুড়ে দিলেই সে বেমালুম হাওয়া, সেইখানেই গ্রূপের আড়ালে উঁকি মারছেন
সিম্পসন।
আসলে হচ্ছেটা কী তাহলে?
প্রোবাবিলিটির আঁক কষলে, বা আরও একধাপ এগিয়ে কজাল (causal) ইনফারেন্সের
কায়দায় ডায়াগ্রাম ছবি এঁকে একটা ভীষ্মের শরশয্যার কার্টুন খাড়া করলে লোকে তেড়ে আসবেন
তাই একটা সহজ ছবি দিয়েই একটু ব্যাখ্যানা দিই নীচে।
পাশের ছবিটা দেখুন। যদি শুধু নীল রঙের পয়েন্টগুলোকে সরলরেখায় জোড়েন, মনে হবে রেখার অভিমুখ উর্ধ্বে, মানে পজিটিভ ট্রেণ্ড, X বাড়লে Y-ও বাড়বে, আবার লাল রঙের বেলায়-ও তাই। কিন্তু কেউ যদি এসে লাল-নীল সব রঙ মুছে দেন – তাহলে যে সরল-রেখাটি এইবারে আঁকবেন (কালো ডট-ড্যাশ রেখাটি) সেইটি কিন্তু নিম্নগামী।
অর্থাৎ, সিম্পসনের ভাষায়, the trend reverses when groups are
combined.
তাহলে কি সব-সময়েই এইরকম গ্রূপ জুড়ে দিলেই ট্রেন্ড পালটে যায়? অবশ্যই না।
হরিপুর আর আদর্শের টেবিল-টা আরেকবার দেখুন। হরিপুরে ২০% ছেলে, ৮০% মেয়ে,
আর আদর্শে ঠিক তার উল্টো ! ওই এক-ই টেবিলে যদি হরিপুর আর আদর্শে ছেলে-মেয়ের পারসেন্টেজ
না পাল্টাতো, তাহলেই আর অঙ্ক ওল্টাতো না। বিশ্বাস না হলে দুইদিকের পাল্লা সমান করে
দেখুন, অঙ্ক মেলে কি না।
বেকারবাবুদের উদাহরণ, আর কিডনি-স্টোনের গল্প-ও তাই। বড়ো পাথরের জন্যে, যেগুলো
হয়তো আরও জটিলতর সমস্যা, ডাক্তার-বাবুরা ট্রিটমেন্ট ‘এ’ বেশী ব্যবহার করেছেন, আর ছোটোর
জন্যে ‘বি’। কাজেই ট্রিটমেন্ট ‘বি’ নিকৃষ্টতর হলেও, বেশী কঠিন কেসে কম ব্যবহৃত হওয়ার
জন্যেই শতকরা হিসেবে এগিয়ে। আবার ‘এ’ হয়তো আসলেতে উন্নততর পদ্ধতি, কিন্তু তাকেও বেশীবার
দিতে হচ্ছে কঠিন পরীক্ষা।
প্রথম উদাহরণে জেণ্ডার (লিঙ্গ) আর দ্বিতীয় উদাহরণে রোগের জটিলতা (সিভিয়ারিটি)
– এদের রাশিবিজ্ঞানের ভাষায় বলা হয় “লার্কিং ভেরিয়েবল”, অর্থাৎ ঘাপটি মেরে বসে থাকা
চলরাশি। এদের না ধরলেই হিসেব উলটে সে এক বিচ্ছিরি কাণ্ড !
(৩)
শেষ করবো আরও দুটো উদাহরণ দিয়ে, যদিও আগের পর্বের মতন এইবারেও বলাটা অন্যায়
হবে না যে চোখ মেলে চাইলে চাদ্দিকে বিস্তর প্রাঞ্জল উদাঃ দেখতে পাবেন।
প্রথমটা বার্কলি বিশ্ববিদ্যালয়ের – ১৯৭৩ সালে যাদের বিরুদ্ধে লিঙ্গবৈষম্যের
অভিযোগ ওঠে। সেই বছরের গ্র্যাজুয়েট স্কুলে ভর্তির তথ্যে দেখা যায়, পুরুষ আবেদনকারীদের
৪৪% আর মহিলা আবেদনকারীদের ৩৫% উত্তীর্ণ, এবং ৪৪-৩৫ এর ব্যবধান নামমাত্র নয়। এই অভিযোগের
ঠিক পরেপরেই ৭৫ সালে পিটার বিকেল ও তাঁর সহকর্মীরা একটি পেপারে৭ বার্কলির
সবকটি ডিপার্টমেন্টের ভর্তির পরিসংখ্যান খতিয়ে দেখেন। আবার-ও সেই সিম্পসন’স প্যারাডক্স।
দেখা যায় ৮৫-র মধ্যে ৬টি ডিপার্টমেন্টের বায়াস পুরুষদের বিপক্ষে, আর ৪টিতে মহিলাদের
বিপক্ষে … এবং “examination of the disaggregated data reveals … about as many
units appear to favor women as to favor men”. বিকেল-দের বক্তব্য ছিলো, এই উদাহরণটির
লার্কিং ভেরিয়েবল ডিপার্ট্মেন্টগুলি কতোটা কম্পিটিটিভ সেই তথ্য। ওঁদের-ই অ্যাবস্ট্রাক্ট
থেকেই সোজা চোতা করে দিই দুই লাইনঃ
“The bias in the aggregated data stems not from any pattern of
discrimination on the part of admissions committees, which seem quite fair on
the whole, but apparently from prior screening at earlier levels of the
educational system. Women are shunted by their socialization and education
toward fields of graduate study that are generally more crowded, less
productive of completed degrees, and less well funded, and that frequently
offer poorer professional employment prospects.”
(এইখানে বলে রাখা উচিত যে, শিক্ষা-ক্ষেত্রে লিঙ্গবৈষম্য আছে এবং ভয়ানকভাবেই
আছে বলে মনে করি, বার্কলির এই উদাহরণ সেটাকে ডিস্প্রুভ করে না। এই বিষয় নিয়ে বলার অনেক
কিছু থাকলেও এই পরিসরে সেই প্রসঙ্গ তুললাম না।)
শেষ করবো এমন একটা উদাহরণ দিয়ে যেটা আমাদের এই দুহাজার কুড়ি সালে এসে কান
ধরে শিখিয়ে গেলো যে সিম্পসনের প্যারাডক্স যতোই বইয়ের পাতায় পড়ি, আসলে কিছুই মাথায় ঢোকেনি।
আর টেবিল নয়, বরং একটা ছবি দেখাবো। Kügelgen et al. দের পেপার৮
থেকে (মাপ করবেন বাংলা উচ্চারণ পারলাম
না)।
ডানদিকের ছবিটি খেয়াল
করে দেখুন। ইটালি আর চীনের, বয়েস অনুযায়ী, কেস ফেটালিটি রেট, অর্থাৎ কনফার্মড কেসের
যত ভগ্নাংশ মারা গেছেন। পুরো প্লটে দেখা যাচ্ছে একদম ছোটো ০-৯ থেকে শুরু করে “৮০+”
অব্দি প্রত্যেকটি এজ-গ্রূপেই চীনের CFR বেশি, অথচ যেই pool করলেন, উলটে গেলো - একদম
ডানদিকে “টোটাল” ক্যাটেগরির দিকে তাকান, নীল বারের উচ্চতা কমলা-র থেকে কম।
কী করে হলো এরকম? আবার সেই হরিপুর-আদর্শ ইস্কুলে ফিরে যান। সেখানে যেমন দুটো ইস্কুলের
ছেলেমেয়ের অনুপাত সমান ছিলো না। এইখানেও ইটালি ও চীনের বয়স-অনুসারে কোভিড-আক্রান্ত
বিন্যাস আলাদা, সত্যি বলতে বেশ অনেকটাই আলাদা। চীনের বেশীর ভাগ আক্রান্ত ৩০-৬০ এর মধ্যে
আর ইটালীর আক্রান্ত-দের সবাই প্রায় ৬০+। এই ছবিতে সেইটিই “লার্কিং ভেরিয়েবল”।
এক পাতা লিখবো ভেবে আপাততঃ চার-পাঁচ পাতার নামিয়ে দিয়েছি কাজেই এইখানেই
ইতি টানলাম। সিম্পসন’স প্যারাডক্স এর গল্পের যদিও ইতি নেই, আদি আছে কি না সে-ও বলা
শক্ত। এই লেখাটায় টেকনিক্যাল খুঁটিনাটি সব বাদ দিলাম, তবে নীচে রেফারেন্সের তিন-নম্বরে
জুডিয়া পার্লের একটা আর্টিকেল পাবেন, ইচ্ছে হলে ওইটি পড়ে দেখতে পারেন।
সিম্পসন’স প্যারাডক্স ‘অমনিপ্রেজেন্ট’, কাজেই মোলাকাত তার সাথে হবেই, জানতে
বা অজান্তে … তবে আশা এই যে, একবার গল্পের মত করে ব্যাপার-টা বুঝে নিলে তাকে দেখলে
আঁতকে উঠবেন না। বরং একটা উদাহরণ মনে মনে গেঁতে নিন, কখন কোথায় চক-ডাস্টার হাতে জ্ঞানের
গোঁসাই হয়ে ট্যান দিতে হবে কেউ বলতে পেরেছে?
রেফারেন্সঃ
1) E. H. Simpson,
“The Interpretation of Interaction in Contingency Tables”, Journal of the Royal
Statistical Society. Series B (Methodological) , 1951, Vol. 13, No. 2 (1951),
pp. 238-241
1)
2) Charig, C. R., Webb, D. R., Payne, S. R., & Wickham, J.
E. (1986). Comparison of treatment of renal calculi by open surgery,
percutaneous nephrolithotomy, and extracorporeal shockwave lithotripsy. British medical journal (Clinical research ed.), 292(6524), 879–882. https://doi.org/10.1136/bmj.292.6524.879
3)
Understanding Simpson’s Paradox, Judea Pearl, Technical
report, https://ftp.cs.ucla.edu/pub/stat_ser/r414.pdf
4)
Understanding Simpson’s paradox using a graph, Andrew
Gelman’s blog. https://statmodeling.stat.columbia.edu/2014/04/08/understanding-simpsons-paradox-using-graph/
5)
Stuart G. Baker and Barnett S. Kramer. “Good for Women,
Good for Men, Bad for People: Simpson's Paradox and the Importance of
Sex-Specific Analysis in Observational Studies” Journal of Women's Health &
Gender-Based Medicine.Nov 2001.867-872. http://doi.org/10.1089/152460901753285769
6) Wang, B., Wu, P., Kwan, B., Tu, X. M., & Feng, C. (2018).
Simpson's Paradox: Examples. Shanghai archives of
psychiatry, 30(2), 139–143. https://doi.org/10.11919/j.issn.1002-0829.218026
7) P. J. Bickel,
E. A. Hammel, J. W. O'Connell, “Sex
Bias in Graduate Admissions: Data from Berkeley Measuring bias is harder than
is usually assumed, and the evidence is sometimes contrary to expectation”. https://homepage.stat.uiowa.edu/~mbognar/1030/Bickel-Berkeley.pdf
8)
von Kügelgen, J., Gresele, L., & Schölkopf, B. (2020). Simpson's paradox in Covid-19 case fatality
rates: a mediation analysis of age-related causal effects. arXiv preprint
arXiv:2005.07180. https://arxiv.org/abs/2005.07180